পাথরঘাটা উপজেলা পরিচিতি


পাথরঘাটা উপজেলার মানচিত্র   
ইতিহাস

পাথরঘাটার উপজেলার পটভূমিঃ

পাথরঘাটা নামকরণের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে প্রায় তেমন কিছুই জানা যায় না। তবে জনশ্রুতি রয়েছে যে, এ উপজেলার ভূ-অভ্যন্তরে বিদ্যমান পাথরের অিস্তত্ব থেকেই পাথরঘাটা নামকরণের সূচনা হয়েছিল। ১৯০৩ সনে এ নামকরণ সূত্রপাতঘটে মর্মে ধারণা করা হয়। তৎকালীন বৃটিশ আমলে চট্রগ্রাম মাইজ ভান্ডার শরীফ থেকে বাগেরহাটের খাজা খান জাহান আলী নদীপথে অলৌকিকভাবে বাগেরহাটে পাথর ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় বিশখালী এবং বলেশ্বর নদীর মোহনায় এক রাতের জন্য ঘাটি স্থাপন করেছিলেন। উক্ত পাথরের কিয়দংশ এখানে রয়ে যায়। সে কারণেই এলাকাটি পাথরঘাটি নামে পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীতে পাথরঘাটি নামটি পাথরঘাটা নামে নবরূপ লাভ করে। এরপর থেকে মঠবাড়িয়া-বামনা-বেতাগী এলাকার কিছু লোকজন এখানে এসে সুন্দরী গাছের বাগান কেটে বসবাস শুরু করে। এরপর বৃটিশ সরকার ১৯১০ সনে এলাকার জায়গা জমির উপর নামজারী করে ১৯১৩ সনে ক্ষুদবার বন্যায় এসব এলাকার বসতিদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৯২৬ সনে বৃটিশ সরকার ঢাকা এবং ফরিদপুর থেকে ব্যবসায়ীদের এনে পাথরঘাটা বাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরী করেন। উলেলখযোগ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিল দর্জি ও মিষ্টির দোকান। ১৯৪৭ সনের পর যখন ইংরেজ শাসন আমলের পরিসমাপ্তি ঘটে তখন থেকে পটুয়াখালী সাব ডিভিশনের বাকেরগঞ্জ মহাকুমার আওতায় এ এলাকার শাসনভার চলে। পরে ১৯৭১ এর স্বাধীনতার পর এলাকার কিছু কিছু রাস্তাঘাটের উন্নয়ন সাধিত হলেও ১৯৮৫ সালে যখন এরশাদ সরকার উপজেলা পদ্ধতি প্রবর্তন করেন তখন থেকেই এ এলাকার সড়ক যোগাযোগের সূত্রপাত ঘটে। তৎপূর্বে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌ-পথের পান্সী নৌকা। পাথরঘাটা নামের স্বার্থকতার প্রমাণস্বরূপ এখনো পাথরঘাটার মাটির তলদেশে পাথরের অসিতত্ব বিদ্যমান। যে কারণে এ এলাকায় ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন করা সম্ভব হয় না। ২২-২৪ ফুট গভীরে পাথরের সন্ধান মেলে। এলাকার আদিবাসীরা বসতি স্থাপনের প্রাক্কালে বড় বড় গাছ কেটে বসত-বাটী তৈরী করেছিল। সেসব গাছের গোড়ার অংশ এখনো মাটির নীচে পাওয়া যায়, যা মাটির গভীর থেকে উত্তোলন করে এলাকার লোকজন জ্বালানী কাঠের চাহিদা মেটায়।        ০৭ টি ইউনিয়ন নিয়ে এ উপজেলার যাত্রা হলেও বিগত কয়েক বছর পূর্বে পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন এবং কালমেঘা ইউনিয়নের কিয়দাংশ নিয়ে পাথরঘাটা পৌরসভার সূচনা হয়।

ভৌগলিক পরিচিতিঃ

পাথরঘাটা উপজেলা বাংলাদেশের উপকূলবর্তী বরগুনা জেলার অন্তর্গত। যার দক্ষিণে বিস্তৃত রয়েছে বঙ্গোপসাগরের সুবিস্তৃত জলরাশি। এ উপজেলার অধিবাসীদের প্রধান পেশা মৎস্য আহরণ। এখানে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের মস্য অবতরণ ও পাইকারী বাজার রয়েছে।

আয়তনঃ

পাথরঘাটা উপজেলার আয়তন ৩৮৭.৩৬ বর্গ কিলোমিটার। উপজেলাটি ০১ (এক) টি পুলিশ ষ্টেশন (পাথরঘাটা থানা) এবং ০২(দুই) টি পুলিশ ফাড়ি (চরদুয়ানী ও কাকচিড়া) সমন্বয় গঠিত। উপজেলাটিতে মোট ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা ০৭ (সাত)টি। ওয়ার্ড সংখ্যা ৬৩ টি, গ্রাম ৬৮টি এবং পৌরসভার সংখ্যা ০১(এক) টি। সীমাঃ দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পশ্চিম দিকে বলেশ্বও নদী ও সুন্দরবন, পূর্বদিকে বিষখালী নদী ও বরগুনা সদর উপজেলা, উত্তরে বামনা এবং মঠবাড়িয়া উপজেলা।  এলাকাটি গাঙ্গেয় প্লাবন ভূমির উপাঞ্চলভুক্ত। 



ইউনিয়ন সমূহঃ

উপজেলা ০৭ টি ইউনিয়ন ও ০১ টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত।

ইউনিয়নগুলো হলঃ

১। রায়হানপুর ইউনিয়ন
২। নাচনাপাড়া ইউনিয়ন
৩। চরদুয়ানী ইউনিয়ন
৪। পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন
৫। কালমেঘা ইউনিয়ন
৬। কাকচিড়া ইউনিয়ন
৭। কাঠালতলী ইউনিয়ন

পৌরসভা হল :

১। পাথরঘাটা পৌরসভা


উপজেলার প্রাকৃতিক সম্পদ

খনিজ সম্পদ : ১৯৭০ সালে স্থানীয় জনগণ উপজেলার মঠেরখাল গ্রামে মাটি খুড়ে গন্ধক জাতীয় পদার্থের সন্ধান পেলেও এ উপজেলায় কোন খনিজ সম্পদের সন্ধান আজও পাওয়া যায়নি।

বনজ সম্পদ : পাথরঘাটা উপজেলা মূলত সুন্দরবন পরগনার অংশ ছিল। মানুষ আবাদ করার জন্য বন পরিস্কার করে জনবসতি শুরু করে। মানুষের প্রয়োজনে আবার বনসৃষ্টি করা হয়। হরিণঘাটা বন ১৯৬৬ সালে রিজার্ভ বন হিসেবে সৃজন করে বন বিভাগ। ১৯৬৮ সালে হরিণ ছাড়া হয় বন বিভাগের উদ্যোগে। বর্তমানে ঐ বনে হরিণ, বণ্যশুকর, বানর, বন মোরগ, দাসবাঘ, শিয়াল, বেজী, গুইসাপ, বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি বাস করে।

মৎস্য সম্পদ : মৎস্য পাথরঘাটা উপজেলার অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ। এ উপজেলার অধিকাংশ মানুষের জীবিকা মৎস্য সম্পদের উপর নির্ভরশীল। পাথরঘাটা উপজেলায় মিঠা পানির মাছের চেয়ে সাগর থেকে আহরিত মৎস্য সম্পদের পরিমাণ তূলনামূলক বেশী। সরকারি মালিকানাধীন পুকুর ৭৭ টি। যার আয়তন ১৮.৫৪ হেক্টর। সরকারি জলমহাল ১৯ টি। যার আয়তন ৭৮৭৬.৮৩ একর বা ৩১৮৯ হেক্টর। পাথরঘাটা উপজেলায় সামুদ্রিক মাছ আহরণ, সঙরক্ষণ ও বাজারজাত করণের কাজে জেলেদের সহায়তার উদ্দেশ্যে ১৯৮১ সালের ১৯ মার্চ বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) একটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র স্থাপন করে। এ কেন্দ্রের মাধ্যমে হাজার হাজার টন ইলিশ ও অন্যান্য মাছ বিদেশে রপ্তানী ও দেশের অভ্যন্তরে চালান হয়ে থাকে। উপকূলবর্তী উপজেলা বিধায় এখানে সাগরের মাছ বেশী পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইলিশ, পাংগাস, গুলিশা-টেংরা, কোরাল, ফাইস্যা, বাটা, কাওন, লইট্যা, বৈরাগী, ফ্যাসা, চিংড়ি, চাকা চিংড়ি, পোয়া, মরমা, তপসী, তুলারডাটি, তারিয়াল, খটকা, রূপচাদা, মোচন, গাগড়া, দরগি, চেউয়া। চন্দনা, চটা, বাইল্যা মাছ এখন বিরল প্রায়। মিঠা পানির মাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হরৈা- চাপিলা, চিতল, তিতপুটি, সরপুটি, বাইলা, তেলাপিয়া, শোল, শিঙ, বোয়াল, কোরাল, কাতল, কালোবাউশ, বাশপাতা, গজার, বাইন, গুলিশাটেংরা, আইর, মৃগেল, ফলি, কার্প ও তেলাপিয়া।

পশু সম্পদ : গোচারণ ভূমি ক্রমশ হ্রাস পাওয়ায় উপজেলার গবাদি পশুর সংখ্যা পূর্বের তুলনায় কমেছে। ২০০৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী উপজেলার মহিষ-২৭০৮, গরু-৪৭১০৩, ছাগল-২৪২৪৫, ভেড়া-৯০ সংখ্যক গবাদি পশু রয়েছে। এছাড়া হাস-৪৮২১০ এবং মুরগী-৩২০১৫০ সংখ্যক

0/Post a Comment/Comments