বই রিভিউ: হাজার চুরাশির মা | মহাশ্বেতা দেবী

 বইয়ের নাম: হাজার চুরাশির মা | লেখকা: মহাশ্বেতা দেবী

বই রিভিউ করেছেন নিয়ন হাসান

উপন্যাসটি শুরু হয়েছে সুজাতার ছোট ছেলে ব্রতীর জন্মের সময়ের স্মৃতিকথা দিতে।মুলত উপন্যাসটি ১৯৭০ সালের ভারতের নকশাল* আন্দোলনের সময়কার বহিঃপ্রকাশ। তখনকার ভারতের বিশৃঙ্খল সমাজব্যবস্থার এক চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে উপন্যাসটিতে।


সে সময়কার এক বিপ্লবী শহীদ হলেন কুড়ি বছরের  ব্রতী,ব্রতী চ্যাটার্জি। সৎসাহস ও এমন বামপন্থী মনোভাবের ব্রতীকে তার পরিবারের কেউ মেনে নেয়নি,এমনকি তার মৃত্যুর পরে তার আপন বাবা দিব্যনাথ তার ছেলের সমস্ত পরিচয়  তার বংশ থেকে তুলে ফেলার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েন। কিন্ত ব্রতীর মা সুজাতা হৃদয়ে  ধারণ করে রাখেন ব্রতীর প্রতিটা স্মৃতি কে। ব্রতীদের মত আরো অনেক মায়ের সন্তান নির্মমভাবে নিহত হয়।তাদেরই মাঝে ব্রতীর লাশের নম্বর ছিল হাজার চুরাশি। নিজের বিপ্লবী সন্তানের মৃতদেহের পরিচয় দিতে তিনি অস্বীকার করেন নি। হাজার চুরাশির মা হয়ে তিনিই তার সন্তানকে দেখতে যান।

উপন্যাসে নন্দিনী নামের আরেকজন বিপ্লবীর কথা রয়েছে। সে আর ব্রতী একে অপরকে ভালোবাসতো।কিন্ত ব্রতীকে মেরে ফেলা হয় আর নন্দিনীকে নিয়ে যাওয়া হয় টর্চার সেলে যেখানে তীব্র ওয়াটের আলোর সামনে জিজ্ঞাসাবাদ আর নির্যাতন করা হত।


ব্রতী তার মায়ের প্রতি অনুরাগ ছিল। সে নিজের মা বাদে কাউকে বিশ্বাস করেনি। এমনকি নিজের বাবার পর নারীর প্রতি আসক্তির বিষয়টিও সে সহজেই ধরে ফেলে এবং শাসিয়ে দেয়। সুজাতা নিজের সন্তানের ব্যাপারে আস্তে আস্তে সব জানতে পেরে সেও যেন এ সংসারের চিরচেনা নিয়মের বাইরে গিয়ে বাচঁতে চান।


আমার প্রিয় লাইনঃ

"অপরাধের মধ্যে ব্রতী এই সমাজে, এই ব্যবস্থায় বিশ্বাস হারিয়েছিল। ব্রতীর মনে হয়েছিল যে পথধরে রাষ্ট্র চলেছে সেই পথে মুক্তি আসবে না। অপরাধের মধ্যে ব্রতী শুধু স্লোগান লেখেনি, স্লোগানে বিশ্বাসও করেছিল। "

[*(নকশাল বা নকশালবাদী বলতে উগ্র বামপন্থী দলগুলোকে নির্দেশ করা হয়। এসব দলের জন্ম হয়েছিল।চিন-সোভিয়েত(Sino-Soviet split) ভাঙনের সময়। মতাদর্শগত ভাবে এরা মাও সে তুং-এর পদাঙ্ক অনুসরণকারী। নকশাল আন্দোলন শুরু হয়েছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। ধীরে ধীরে তা ভারতের অনুন্নত অঞ্চলসমূহে ছড়িয়ে পড়ে...তথ্যসূত্র -উইকিপিডিয়া)]

0/Post a Comment/Comments