কক্সবাজার জেলা পরিচিতি ও ঐতিহ্য


 কক্সবাজার এর পটভূমি

কক্সবাজার নামকরণের পেছনে রয়েছে ছোট্ট একটা ইতিহাস। এর প্রাচীন নাম ছিল পালংকী। একসময় এটি প্যানোয়া নামে পরিচিত ছিল। প্যানোয়া শব্দটির অর্থ ‘হলুদ ফুল’।অতীতে কক্সবাজারের আশপাশের এলাকাগুলো এই হলুদ ফুলে ঝকমক করত। এটি চট্টগ্রাম থেকে ১৫৯ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত।  আধুনিক কক্সবাজারের নামকরণ করা হয়েছে প্রখ্যাত বিট্রিশ নৌ-অফিসার ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স (মৃত্যু-১৭৯৮) এর নামানুসারে। যিনি ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার আর্মি অফিসার ছিলেন।


ইতিহাস

কক্সবাজারের ইতিহাস মুঘল আমলে শুরু হয়েছে। বর্তমান কক্সবাজারের পাশ দিয়ে মুঘল শাসন কর্তা প্রিন্স শাহ সুজা আরাকান প্রদেশে যাওয়ার পথে এ অঞ্চলের পাহাড় ও সাগরের মিলিত সৌন্দর্য অবলোকন করে মুগ্ধ হয়ে যান। তিনি তার সেনা-সামন্তকে এখানে ঘাঁটি করতে বলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সেনা বহরের  এক হাজার পালকি (ঢুলি) এখানে অবস্থান নেয়। এক হাজার ঢুলি (পালকি) এর নামে এর নামকরণও করা হয় ডুলাহাজারা যা বর্তমানে চকরিয়া উপজেলার একটি ইউনিয়ন। মুঘল আমলের পরবর্তীতে এ অঞ্চল ত্রিপুরা এবং আরাকানদের দখলে চলে যায়। তারপর পর্তুগীজরা কিছু সময় এ অঞ্চলে শাসন করে। অত:পর ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স কে এ অঞ্চলের দায়িত্বভার দেয়া হয়। তিনি এখানে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। যা ‘কক্স সাহেবের বাজার’ এবং পরবর্তীতে কক্সবাজার নামে পরিচিত পায়।


জেলার ঐতিহ্য

প্রাচীন ঐতিহ্য:
১৬০০---১৭০০ খৃষ্টাব্দে শাহ সুজার আমলেএকটি মসজিদ তৈরী হয়েছিল। এটি চৌধুরী পাড়া মসজিদ বা আজগবি মসজিদ নামেপরিচিত। এটি কক্সবাজার সদরের বি.ডি.আর ক্যাম্পের উত্তর দিকে অবস্থিত।

প্যাগোড়া (জাদী):
১৭৯০ ইংরেজী সালের দিকে বার্মিজরাআরাকান বিজয়ের পর কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় রাখাইন সম্প্রদায় এটি নির্মাণকরে। তারা এটিকে স্মৃতিচিহ্ন বলে। কক্সবাজার সদর, রামু ও টেকনাফের পাহাড়বা উচুঁ টিলায় এ ধরনের প্যাগোড়া দেখা যায়

অগ্গ মেধা বৌদ্ধ ক্যাং:
কক্সবাজার সদরে ছোট বড় মিলিয়ে৭টিরও বেশী বৌদ্ধ ক্যাং রয়েছে। আগ্গা মেধা ক্যাং ও মাহাসিংদোগীক্যাং সবচেয়েবড়। এ সবে স্থাপিত বৌদ্ধ মুর্তিগুলো দেখবার মতো। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদেরধর্মীয় উৎসব বৌদ্ধ পূর্ণিমা, প্রবারণা পূর্ণিমা ও বিষু উৎসব ক্যাং এ উদযাপনহয়।

রামকোট তীর্থধাম:
এটি রামকোট বনাশ্রমের পার্শ্বেরপাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। ৯০১ বাংলা সনে স্থাপিত। কথিত আছে রাম-সীতা বনবাসকালে এই রামকোটে অবস্থান করেছিল। তীর্থধামে মন্দিরের পাশাপাশি আলাদা একটিবৌদ্ধ বিহারে ধ্যানমগ্ন ছোট একটি বৌদ্ধমূর্তিও রয়েছে। জনশ্রুতি আছে, দু’টিধর্ম পাশাপাশি শান্তিতেসহাবস্থানের প্রমাণ স্বরূপ সম্রাট অশোকের সময়েএইমূর্তি স্থাপিত হয়

ছেংখাইব ক্যাং:
রামুর শ্রীকুলস্থ বাঁকখালী নদীর তীরেছেংখাইব ক্যাং (বৌদ্ধ বিহার টি) অবস্থিত। এ বৌদ্ধ বিহারে নানা রকম নক্সাখচিত আসন ও কাঁচের পাত্রে সংরক্ষিত ১০টিরও বেশী পিতল এবং আরো অনেক শ্বেতপাথরের মূর্তি শোভা পাচ্ছে। সব মিলে রামু থানায় ২৩টি বৌদ্ধ বিহারে শতাধিকমূল্যবান বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে।

কানা রাজার সুড়ংগ:
উখিয়া থানার জালিয়া পালং ইউনিয়নেপাটুয়ার টেক সৈকতের কাছে নিদানিয়া পাহাড়ের মধ্যে এ সুড়ংগ বা গর্ত। সুড়ংগেরব্যাস ১২ও ১২ একটা বড় ট্রাক অনায়াসে সুড়ংগ পথে প্রবেশকরতে পারবে। কথিত আছে, জনৈক মগ সম্প্রদায়ের কানা রাজার (এক চোখ অন্ধ) শাসন আমলে আত্মরক্ষার জন্যেএই সুড়ংগ নির্মান করেছিল।

মাথিনের কূপ:
উপন্যাসিক ধীরাজ ভট্টাচার্য উনবিংশশতাব্দীর প্রথমদিকে এস.আই. হিসাবে টেকনাফ থানায় বদলী হয়ে এসেছিলেন। তখনটেকনাফের নাম করা রাখাইন জমিদার ওয়াংথিনের একমাত্র আদুরে কন্য মাথিন থানারসামনের কুয়া থেকে নিয়মিত পানি নিতে আসতো। সকাল বিকাল পানি নিতে আসা ছিলমাথিনের সখ। পুলিশ কর্মকর্তা প্রতিদিন থানার বারান্দায় বসে বসে অপূর্বসুন্দরী মাথিনের পানি নিতে আসা যাওয়া দেখতেন। আস্তেআস্তে ধীরাজভট্টাচার্যের সংগে মাথিনের চোখা চোখি এবং পরে তা’ প্রেমে পরিণত হয়।
বিয়েকরতে ব্যর্থ হলে, মাথিন বিচ্ছেদের জ্বালায় তিলে তিলে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণকরে। মাথিনের অতৃপ্ত প্রেমের ইতিহাসের নীরব সাক্ষী মাথিনের কুপ। টেকনাফথানা প্রাঙ্গনে একুপের অবস্থান। বিশিষ্ট সাংবাদিক আবদুল কুদ্দুস রানা ১৯৯৪সালে বাঁশের তৈরী কূপটি সংস্কারের উদ্যোগ নেন। পরবর্তীতে জেলা পরিষদ থেকেএদিকে সংস্কার করা হয়। এখন কূপটি দেখতে খুবই আকর্ষনীয়। সেখানে প্রেমেরসংক্ষিপ্ত ইতিহাসও লেখা রয়েছে। ইদানীং উল্লিখিত কাহিনী অবলম্বনে স্থানীয়শিল্পীদের নিয়ে একটি স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচিত্রও নির্মিত হয়েছে।

‘মা’ অষ্টভূজা:
মহেশখালী আদিনাথশিব মন্দিরের পার্শ্বে ‘অষ্টভূজা’ নামে অপর একটি বিগ্রের মূর্তি রয়েছে।
কক্সবাজারকস্তুরাঘাট হতে নৌযানে ৪৫-৫৫ মিনিট আর স্পীডবোটে ১৫-১৮ মিনিট সময় লাগে।মহেশখালীর গোরকঘাটা জেটি হতে রিক্সা যোগে আদিনাথ মন্দির যাওয়া যায়।

ভৌগলিক পরিচিতি

কক্সবাজার জেলা চট্টগ্রাম প্রশাসনিক বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা। এটি ২০০ ৩০´´ থেকে ২১০ ৫৬´´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১ ২৩´´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। এর আয়তন প্রায় ২,৪৯১.৮৬ বর্গ কিঃ মিঃ। এর উত্তরে চট্টগ্রাম, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে বান্দরবান পার্বত্য জেলা ও মায়ানমার, পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর বিস্তৃত। কক্সবাজারে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত (১১১ কিঃ মিঃ) রয়েছে।

 

কক্সবাজারের প্রধান দ্বীপসমূহঃ মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, শাহপরি, সেন্টমার্টিন দ্বীপ (নারিকলে জিঞ্জিরা), মাতাবাড়ি।

 

কক্সবাজারের প্রধান নদীসমূহঃ মাতামুহুরি, বাকখালী, রেজু খাল, নাফ নদী, মহেশখালী প্রণালী এবং কুতুবদিয়া প্রণালী।

 

প্রধাণ বনসমূহঃ ফুলছড়ি রেঞ্জ, ভূমারিয়া-ঘোনা রেঞ্জ, মেহের-ঘোনা রেঞ্জ, বাক খালি রেঞ্জ।


কক্সবাজার জেলার উপজেলাসমূহ

১. কক্সবাজার সদর

২. চকোরিয়া

৩. পেকুয়া

৪. কুতুবদিয়া

৫. মহেশখালী

৬. রামু

৭. উখিয়া

৮. টেকনাফ


কক্সবাজার জেলার ইউনিয়নসমূহ

ক্রমিক নং

উপজেলার নাম

ক্রমিক নং

ইউনিয়নের নাম

ক্রমিক নং

উপজেলার নাম

ক্রমিক নং

ইউনিয়নের নাম

 

 

 

 

 

 

 

কক্সবাজার সদর

ইসলাম পুর

 

 

 

 

 

পেকুয়া

শিলখালী

পোক খালী

বারবাকিয়া

ইসলামাবাদ

টৈটং

ঈদগাহ

রাজাখালী

জালালাবাদ

পেকুয়া সদর

চৌফলদন্ড়ী

মগনামা

ভারুয়া খালী

উজানটিয়া

পি.এম.খালী

 

 

 

 

 

 

 

 

রামু

কচ্ছপিয়া

খুরুশকুল

গর্জনিয়া

১০

ঝিলংজা

ফতেখারকুল

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

চকোরিয়া

কাকারা

কাউয়ারখোপ

কৈয়ারবিল ইউনিয়ন

চাকমারকুল

কোনাখালী ইউনিয়ন

ঈদগড়

খুটাখালী

জোরিয়ানালা

চিরিংগা

রশিদ নগর

ঢেমুশিয়া

দক্ষিন মিঠাছিড়

ডুলাহাজারা

১০

খুনিয়া পালং

পশ্চিম বড় ভেওলা

১১

রাজারকুল

পূর্ব বড় ভেওলা

 

 

 

 

টেকনাফ

সাবরাং

১০

বদরখালী

বাহারছড়া

১১

বমু বিলছড়ি

হ্নীলা

১২

বরইতলী

হয়াইয়্ক্যং

১৩

ভেওলা মানিকচর

সেন্ট মার্টিন

১৪

লক্ষ্যারচর

টেকনাফ

১৫

সাহারবিল

 

 

 

 

উখিয়া

রাজাপালং

১৬

সুরাজপুর মানিকপুর

জালিয়াপালং

১৭

হারবাং

হলুদিয়াপালং

১৮

ফাঁসিয়াখালী

রত্নাপালং

 

 

 

 

কুতুবদিয়া

আলি আকবর ডেইল

পালংখালী

উত্তর ধুরুং

 

কৈয়ারবিল

দক্ষিণ ধুরুং

বড়ঘোপ

লেমসিখালী

 

 

 

 

 

 

মহেশখালী

ধলঘাটা

মাতারবাড়ী

কালামারছড়া

শাপলাপুর

হোয়ানক

বড় মহেশখালী

কুতুবজোম

ছোট মহেশখালী

 

 

 


0/Post a Comment/Comments