বিএড বা ব্যাচেলর অব এডুকেশন (অনার্স) এ পড়ে সরকারি চাকুরীর কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনি একচেটিয়া রাজত্ব করতে পারবেন

🔴🔴 ▪ বিএড (অনার্স) এ পড়ে সরকারি চাকুরীর কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনি একচেটিয়া রাজত্ব করতে পারবেন▪🔴🔴
ব্যাচেলর অব এডুকেশন (অনার্স) | Bachelor of Education (Honours)

বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর) সমূহে চার বছর মেয়াদি শিক্ষায় অনার্স (বিএড অনার্স) ডিগ্রি পড়ে কী হবে? কর্মজীবনে এর ভবিষ্যৎ কী?

[বিএড অনার্স করা নিয়ে যারা হতাশ কিংবা এবিষয়ের ভবিষ্যৎ কি জানা নেই তাদের জন্য এই লেখাটি দিলাম। মনোযোগ দিয়ে পড়লে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।]

"বিএড (অনার্স) এ ভর্তি হবার পর থেকে যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি আমাদেরকে শুনতে হয়েছে এবং এখনো শুনতে হয় তা হলো, বিএড (অনার্স) এ পড়ে ভবিষ্যত কি? 

প্রকৃতপক্ষে ভবিষ্যত শব্দটা অনেক বড় বিষয়। আমাদের সমাজের দৃষ্টিকোণ থেকে যদি বলি তবে বলতে হয়, সবাই আসলে জানতে চায় বিএড (অনার্স) এ পড়ে চাকুরী পাওয়া যায় কিনা। এ বিষয় নিয়ে অনেকদিন ধরেই ভেবেছি লিখবো। আজকে সাহস করে কী-বোর্ডখানা হাতে নিলাম। আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানে যতটুকু জানা আছে ততটুকু সবার জন্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

সরকারি চাকুরীঃ
=====================
চাকুরির প্রসঙ্গ আসলেই সবার আগেই নাম আসে ‘সরকারি চাকুরী’ এর। তো আপনার যদি টার্গেট হয় সরকারি চাকুরীর তবে আপনি বিএড (অনার্স) এ পড়েন নাকি আইবিএ তে পড়েন নাকি পালিতে পড়েন, তাতে আসলে কিছুই আসে যায় না। কারণ সরকারি যতগুলো চাকুরী রয়েছে তার অধিকাংশের নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে একাডেমিক পড়ালেখার কোন সম্পর্ক নেই। আপনার অনার্সের একটি ডিগ্রী এবং কোন রকম রেজাল্ট থাকলেই হলো। আপনাকে ২য় বর্ষ থেকেই চলে যেতে হবে নীলক্ষেত এবং কিনতে হবে এমপি৩ কিংবা প্রফেসরস এর ব্যানারে প্রকাশিত বিশেষ কিছু বই। তারপর চোখ-কান-নাক-মুখ বন্ধ করে দিয়ে খালি মুখস্থ করে যেতে হবে কারেন্ট এফেয়ার্স, বাংলাদেশের সংবিধান, এভারেস্টের উচ্চতা, রবি ঠাকুরের জন্মসাল ইত্যাদি। তারপর অনার্সের প্রভিশনাল সার্টিফিকেট হাতে পেলে আবেদন করা শুরু করুন বিসিএস, বাংলাদেশ ব্যাংক ইত্যাদির জন্য। তবে হ্যা, একাডেমিক জ্ঞান একেবারে উড়িয়ে ফেলা যাবে না। কারণ বিসিএস  এর ভাইভাগুলোতে সেখান থেকেও প্রশ্ন আসতে পারে। আর বিএড (অনার্স) এ পড়ার আরেকটি সুবিধা হচ্ছে, এখানে বিভিন্ন সাবজেক্টের উপর জ্ঞান দেওয়া হয় যাকে ইংরেজিতে আমরা বলি Multidisciplinary organization । এ কারণে বিএড (অনার্স) এর শিক্ষার্থীরা বিসিএস এ ভালো করছেন।

তবে বিএড (অনার্স) এ পড়ে সরকারি চাকুরীর কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনি একচেটিয়া রাজত্ব করতে পারবেন। সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ (শিক্ষা ক্যাডার), পিটিআই ইন্সট্রাক্টর এসব সেক্টরে বিএড (অনার্স) শিক্ষার্থীরা একচেটিয়া রাজত্ব করে যাচ্ছে। 

এবার আসি উদাহরণে। বিএড (অনার্স) থেকে পাশ করে সরকারী চাকুরীর যে যে সেক্টর/পদ/প্রতিষ্ঠানে বিএড (অনার্স) শিক্ষার্থীরা আছেন বলে আমি জানি তা একটু তুলে ধরি (অক্ষরের ক্রমানুসারে)ঃ

- ইকোনমিকস ক্যাডার
- ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর
- উপজেলা একাডেমিক শিক্ষা অফিসার
- এনসিটিবি
- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
- কাস্টমস ক্যাডার
- তথ্য মন্ত্রণালয়
- থানা শিক্ষা অফিসার
- নায়েম
- ন্যাপ
- শিক্ষা ক্যাডার
- শিক্ষা মন্ত্রণালয়
- সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়
- সেনাবাহিনীতে এডুকেশন কোরে ওয়ারেন্ট অফিসার
- পাসপোর্ট অফিস
- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
- পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা, জগন্নাথ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, নোবিপ্রবি, শাবিপ্রবি)
- পিটিআই
- পুলিশ
- প্রশাসন ক্যাডার
 - বাংলাদেশ টেলিভিশন
- বাংলাদেশ বেতার

কারো নাম আর উল্লেখ করতে গেলাম না, তাহলে আর পোস্ট শেষ হবে না। তবে, কিছু তালিকা গ্রুপের ফাইল সেকশনে পাবেন [আরো অনেক জায়গা ছুটে যেতে পারে, মন্তব্যে জানাতে পারেন, যোগ করে দিবো]।

ব্যাংকঃ
==============
এই হলো সরকারি চাকুরীতে বিএড (অনার্স) এর অবস্থা। এবার আসি ব্যাংকিং সেক্টরে। সরকারী চাকুরীর পরে মনে হয় বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি চাহিদা এই সেক্টরের। 

তবে এই সেক্টরেও নিয়োগ পাওয়ার নিয়ম উপরের মতোই। নীলক্ষেত পদ্ধতি অবলম্বন। তাই আর বড় করে বললাম না। বাংলাদেশের যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিএড (অনার্স) শিক্ষার্থীরা আছেন তার মধ্যে রয়েছেঃ

- বাংলাদেশ ব্যাংক
- ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ
- জনতা ব্যাংক
- সোনালী ব্যাংক
- অগ্রনী ব্যাংক
- কর্মসংস্থান ব্যাংক
- কৃষি ব্যাংক
- মধুমতি ব্যাংক
- ইসলামী ব্যাংক
- সাউথ ইস্ট ব্যাংক
- মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক
- State Bank of India

এছাড়া, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এন্ট্রি লেভেলে সবচেয়ে ফাস্টট্রাক প্রেস্টিজিয়াস পজিশন হচ্ছে Management Trainee বা MTO (যাদের খোঁচা মেরে কিংবা সমীহ করে যে কারনেই হোক ব্যাংকের জামাইও বলা হয়ে থাকে )। সেই পজিশনেও শুধুমাত্র বিএড (অনার্স) থেকে পাস করা ডিগ্রী নিয়েই আছেন দুয়েকজন। 

এবার আসি বিএড (অনার্স) এর নিজস্ব সেক্টর তথা শিক্ষা সংক্রান্ত সেক্টরের আলোচনায়ঃ

আন্তজার্তিক সংস্থাঃ
==================
আন্তজার্তিক সংস্থাগুলোর শিক্ষা সংক্রান্ত কাজে বিএড (অনার্স) শিক্ষার্থীরা সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। এমনই কয়েকটি সংস্থা নিম্নরূপঃ

- ইউনেস্কো
- ইউনিসেফ
- ইউএনডিপি
- ইউএসএআইডি
- ডিএফআইডি
- আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)
- ব্রিটিশ কাউন্সিল
- একশনএইড
- জাইকা
- সেইভ দা চিলড্রেন
- ওর্য়াল্ড ভিশন
- ওক্সফাম
- রুম টু রিড
-  প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ
- সুইস কনটাক্ট

এনজিও এবং বেসরকারী সংস্থাঃ 
========================
বাংলাদেশের এনজিও এবং বেসরকারী সংস্থার শিক্ষা সংক্রান্ত কাজেও বিএড (অনার্স) শিক্ষার্থীরা সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। এমনই কয়েকটি সংস্থা নিম্নরূপঃ

- ব্র্যাক
- ডিনেট
- ঢাকা আহসানিয়া মিশন
- ক্যাম্পি
- টিচ ফর বাংলাদেশ
- আগামী ফাউন্ডেশন
- নারী মৈত্রী
- জাগো ফাউন্ডেশন

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ঃ
 ========================
দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে যেখানেই শিক্ষা নামক ডিপার্টমেন্ট রয়েছে সেখানেই আছে বিএড (অনার্স) শিক্ষার্থী। কয়েকটির নাম  নিম্নরূপঃ

- ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি
- গ্রীন ইউনিভার্সিটি
- প্রাইম ইউনিভার্সিটি
- বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস

বিভিন্ন বিদ্যালয়ঃ
 ========================
বিএড (অনার্স) এর অনেক শিক্ষার্থী বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ধরণের বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। একজন আবার ওদের আন্ডারগ্র্যাড লেভেলের টিচারও হয়েছে শুনলাম!

এছাড়াও আরেকজন DPS STS School এ স্পেশাল বাচ্চার 'shadow teacher' হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া অনেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও শিক্ষকতা করছেন। আপনি সুদূর খাগড়াছড়ির কোন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলেও পেয়ে যেতে পারেন বিএড (অনার্স) এর কাউকে।

সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রজেক্টঃ
 ========================
বিএড (অনার্স) শিক্ষার্থীদের একটি অন্যতম অংশ বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি নানা প্রজেক্টের (যেমন সেসিপ, রস্ক, জাইকার বিভিন্ন প্রজেক্ট রয়েছে।) সাথে যুক্ত আছেন।

স্কলারশীপঃ
========================
এবার আসি স্কলারশীপ প্রসঙ্গে। প্রতি বছরই বিএড (অনার্স) এর কমপক্ষে ২ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন দেশে মার্স্টাস এবং পিএইচডি স্কলারশীপ এর জন্য যাচ্ছেন। আমরা অনেকেই হয়তো জানিই না বর্হিবিশ্বে ‘শিক্ষা’ বিষয়টির কদর কতটুকু। শিক্ষা সংক্রান্ত কিছু জনপ্রিয় স্কলারশীপের নাম নিম্নরূপঃ

- কমনওয়েলথ স্কলারশীপ (ইউজিসি কর্তৃক প্রদত্ত, এখানে শিক্ষার একটি আলাদা ক্যাটাগরিই রয়েছি)
- কমনওয়েলথ শেয়ারড স্কলারশীপ
- ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশীপ
- নরওয়ে কোটা স্কিম
- সুইডিশ ইন্সটিটিউট স্টাডি স্কলারশিপ, সংক্ষেপে এস আই স্কলারশিপ 
- অস্ট্রেলিয়ার মোনাস ইউনিভার্সিটিতো মোটামুটি আমাদেরই দখলে
- IPRS (Australia)
- Foreign Fulbright (USA) 
- Endeavour
- ইকুয়িটি এন্ড মেরিট স্কলারশীপ (যদিও এটা বন্ধ হয়ে যাবে শুনেছিলাম) ইত্যাদি

এছাড়া, উদ্যোক্তা হিসেবেও বিএড (অনার্স) শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে। ঢাকার বিখ্যাত গ্যাজেট সেলিং ব্র্যান্ড গ্যাজেট এন্ড গিয়ার কিন্তু বিএড (অনার্স) একজনেরই। আমাদের রয়েছে টুইস্টেড রেসিপি নামে মেক্সিকান খাবারের চেইন শপ। পোস্টদাতা বহুদিন আইটি সেক্টরে ফ্রীল্যান্সিং করে এখন একটি আইটি প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। আমাদের রয়েছে দেশের অন্যতম সেরা কার্টুনিস্ট। আমাদের রয়েছে দেশের প্রথম ডি-রকস্টার বিজয়ী। দেশের প্রথম এভারেস্ট বিজয়ীও আমাদেরই একজন। যমুনা টিভি থেকে শুরু করে প্রথম আলো-যুগান্তর কিংবা ঢাকা ট্রিবিউন, খুজে দেখুন, পেয়ে যাবেন আমাদের একজনকে।"

মূল লেখাটি লিখেছেন,
-মির্জা হাসান।
১৩তম ব‍্যাচ, আইইআর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সম্পাদনায়:
আবু হানিফ
প্রভাষক, বিসিএস (শিক্ষা)
টিটিসি (মহিলা), ময়মনসিংহ।

Sheikh Mohammad Ali স্যারে প্রোফাইল থেকে।

0/Post a Comment/Comments