জেলা পরিচিতি: সিলেট

সিলেট জেলার মানচিত্র

এক নজরে সিলেট জেলা

সীমানা
:
উত্তরে ভারতের খাসিয়া, জৈন্তিয়া পাহাড় (ভারতের মেঘালয় রাজ্য), দক্ষিণে মৌলভীবাজার জেলা, পূর্বে ভারতের কাছাড় ও করিমগঞ্জ জেলা (ভারতের আসাম রাজ্য) ও পশ্চিমে সুনামগঞ্জ এবং হবিগঞ্জ জেলা
আয়তন
:
৩,৪৫২.০৭ বর্গ কি.মি বা ১৩৩২.০০ বর্গমাইল
জনসংখ্যা
:
৩৫,৬৭,১৩৮ জন (২০১১)
(পুরুষ ১৭,৯৩,৮৫৮ জন এবং মহিলা ১৭,৭৩,২৮০ জন)
উপজাতি/ক্ষুদ্র জাতিসত্তা/নৃ-গোষ্ঠী
:
মোট ১৭,৩৬৩ জন (আদম শুমারী ২০০১)
(প্রধানত মণিপুরি, পাত্র, খাসিয়া, চাকমা, ত্রিপুরা, সাঁওতাল)
ভৌগলিক অবস্থান
:
২৪৩৬˝-২৫১১˝উত্তর অক্ষাংশ হতে ৯১৩৮˝-৯২৩০˝পূর্ব দ্রাঘিমাংশ
বার্ষিক গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
:
৩৩.২০ সে., সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩.৬০ সে.
বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাত
:
৩৩৩৪ মিমি.
সিলেটের প্রধান ও দীর্ঘতম নদী
:
সুরমা (৩৫০ কি.মি.), অপর বৃহৎ নদী হলো কুশিয়ারা, এছাড়াও রয়েছে সারি, পিয়াইন
সিলেটের হাওর-বিল
:
ছোট বড় মিলিয়ে মোট ৮২টি
ক. সিংগুয়া বিল (১২.৬৫ বর্গ কি.মি.)
খ. চাতলা বিল (১১.৮৬ বর্গ কি.মি.) উল্লেখযোগ্য
সিলেটের ফরেস্ট
:
সর্বমোট রিজার্ভ ফরেস্ট ২৩৬.৪২ বর্গ কি.মি.। জেলার উওর-পূর্ব কোণে ভারতের খাসিয়া ও জৈমিত্ময়া পাহাড়ের অংশবিশেষ বিদ্যমান সিলেটে বেশ কিছু ছোট ছোট পাহাড় ও টিলা রয়েছে, যার মধ্যে জৈমত্মাপুর টিলা (৫৪ মিটার), সারি টিলা (৯২ মি), লালাখাল টিলা (১৩৫ মি), ঢাকা দক্ষিণের টিলা শ্রেণী (৭৭.৭ মি) উল্লেখযোগ্য
জনসংখ্যার ঘনত্ব
:
৯৯৫ জন প্রতি বর্গ কি.মি.(২০১১)
সংসদীয় আসন
:
০৬ টি
সংরক্ষিত আসন
:
০১ টি
উপজেলা
:
১৩ টি
থানা
:
১৭ টি
ইউনিয়ন
:
১০৫ টি
মৌজা
:
১,৫৫৪ টি
গ্রাম
:
৩,৪৯৭ টি
সিটি কর্পোরেশন
:
০১ টি (ওয়ার্ড ২৭ টি)
পৌরসভা
:
০৪ টি (গোলাপগঞ্জ-‘ক’শ্রেণী, বিয়ানীবাজার- ‘খ’শ্রেণী, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট- ‘গ’ শ্রেণী)।
শিক্ষার হার
:
৫১.২%
স্যানিটেশন কাভারেজ
:
৮৫%
বিশ্ববিদ্যালয়
:
০৭ টি (সরকারি ০২ টি, বেসরকারি ০৫ টি)।
কলেজ
:
৪৪ টি (স্মাতকোত্তর-০১, স্মাতক-১৮, এইচএসসি-২০, সরকারি-৫টি, বেসরকারি-৩৯
মাধ্যমিক বিদ্যালয়
:
৩১৬ টি (সরকারি ০৬ টি, বেসরকারি ২৭৭ টি এবং নিম্ন- মাধ্যমিক-৩৩ টি)
প্রাথমিক বিদ্যালয়
:
১৯৬১ টি (সরকারি ১,৩৯২ টি, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়-১৫, কেজি স্কুল-৫৫৪)
মাদ্রাসা
:
১৭৬টি [সরকারি ১ টি (উচ্চতর), বেসরকারি ইবতেদায়ী ৫৩ টি, দাখিল-৮১,আলিম-২৩, ফাযিল-১০, কামিল-০৮]
ক্যাডেট কলেজ
:
০১ টি (এয়ারপোর্ট রোড, খাদিমনগর)
আইন কলেজ
:
০২ টি (মেন্দিবাগ, সিলেট; ইলেকট্রিক সাপ্লাইরোড, আম্বরখানা)
বন বিদ্যালয়
:
০১ টি (এয়ারপোর্ট রোড, খাদিমনগর)
মডেল স্কুল ও কলেজ
:
০১টি (পূর্ব শাহী ঈদগাহ)
সংস্কৃত কলেজ                        
:
০১ টি (মীরের ময়দান)
মুক ও বধির বিদ্যালয়
:
০১ টি (শেখঘাট)
মনিপুরি নৃত্য একাডেমী
:
০১ টি (সাগরদিঘী)
প্রাইমারী টিচার্স ট্রেনিং একাডেমী
:
০১ টি (সুবিদবাজার)
টিচার্স ট্রেনিং কলেজ
:
০৩ টি (সরকারি ০১ টি (শাহী ঈদগাহ), বেসরকারি ০২ টি)
ক্রীড়া প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান
:
০১ টি (এয়ারপোর্ট রোড, খাদিমনগর)
মেডিকেল কলেজ
:
০৬ টি (সরকারি ০১ টি, বেসরকারি ০৫ টি)
সরকারি কারিগরি কলেজ
:
০১ টি (খোজারখোলা)
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ
:
০১ টি (টিলাগড়)
কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট
:
০১ টি (তামাবিল রোড, খাদিমনগর)
যুব প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট
:
০১ টি (টিলাগড়)
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট
:
০১ টি (তামাবিল রোড, খাদিমনগর)
আয়ুর্বেদ মেডিকেল কলেজ
:
০১ টি (সরকারি) চালিবন্দর, সোবহানিঘাট
চক্ষু হাসপাতাল                       
:
০১ টি (মেজরটিলা)
ডায়বেটিক হাসপাতাল
:
০১ টি (পুরাণ লেন)
সেবিকা প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট
:
০১ টি (ওসমানী মেডিকেল কলেজে)
হোমিও কলেজ
:
০১ টি (মির্জাজাঙ্গাল)
সাধারণ পাঠাগার
:
০৪ টি (সরকারি ১টি, স্টেডিয়াম মার্কেট, সিলেট)
ডেইরি ফার্ম
:
০১ টি (টিলাগড়)
ছাগল উন্নয়ন ফার্ম
:
০১ টি (টিলাগড়)
বিমান বন্দর
:
০১ টি (এম.এ.জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর)
সেনানিবাস
:
০১ টি (জালালাবাদ সেনানিবাস)
স্থল বন্দর/শুল্ক স্টেশন
:
০৫ টি (ভোলাগঞ্জ, তামাবিল, শেওলা, সুতারকান্দি ও জকিগঞ্জ)
শিল্প নগরী
:
০২ টি (খাদিমনগর ও গোটাটিকর)
পর্যটন মোটেল
:
০১ টি (এয়ারপোর্ট রোড)
পাকা রাস্তা
:
১২৯৫.১৩ কি.মি
রেলপথ
:
৪৯.০৭ কি.মি
রেল স্টেশন
:
০৬ টি
প্রধান কৃষিজ ফসল
:
ধান, সুপারী, আলু
খনিজ দ্রব্য
:
প্রধানত প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ পাথর, বালি, তৈল
উল্লেখযোগ্য কৃষিজ দ্রব্যাদি
:
চা, তেজপাতা, কমলা লেবু, বাঁশ, বেত, পান, সুপারী, মাছ ও চামড়া
মোট খাস জমি
:
৬৭,৯৭১.৭১ একর
বন্দোবস্তকৃত কৃষি খাস জমি
:
২০,৩৪৮.৯০২০ একর
উপকৃত পরিবার
:
১০,৬৭৮ টি
বিদ্যুতের আওতায় জনসংখ্যা
:
৫০%
চাষ যোগ্য কৃষি জমির পরিমাণ
:
২,০৮,৮০০ হেক্টর
ক) এক ফসলী
:
৬৯৬০০ হেক্টর
খ) দুই ফসলী
:
১১৮৯০০ হেক্টর
গ) তিন ফসলী
:
২০৩০০ হেক্টর
অনাবাদী (চাষযোগ্য পতিত)
:

কৃষি জমির পরিমাণ
:
২০০০০ হেক্টর
বনভূমি এলাকা
:
২০,০২৮ একর


সিলেট জেলার পটভূমি


মহান সাধক হযরত শাহজালাল (র.) ও হযরত শাহপরাণ (র.)সহ ৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভূমি সিলেট একটি প্রাচীন জনপদ। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ এর ৬৪০ খ্রিষ্টাব্দের ভ্রমণ বিবরণী থেকে এ জেলা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। দশম শতাব্দীতে মহারাজা শ্রীচন্দ্র কর্তৃক উৎকীর্ণ পশ্চিমভাগ তাম্রলিপি থেকে জানা যায় যে, তিনি এ জেলা জয় করেছিলেন। ঐতিহাসিকদের ধারণা সিলেট বা শ্রীহট্ট বহু আগে থেকেই একটি উলেস্নখযোগ্য বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৪ শতকে ইয়েমেনের সাধক পুরম্নষ হযরত শাহজালাল (র.) সিলেট জয় করেন এবং ইসলাম প্রচার শুরম্ন করেন। তাছাড়া মুঘলদের সাথে যুদ্ধ, নানকার বিদ্রোহ, ভাষা আন্দোলন সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধে এ জেলার অবদান অপরিসীম।
বিখ্যাত মুসলিম পরিব্রাজক আল-বিরম্ননী তাঁর ‘কিতাবুল হিন্দ’ নামক গ্রন্থে সিলেটকে সিলাহট নামে উলেস্ন­খ করেন। বহু প্রাচীনকাল থেকেই এ জেলা শ্রীহট্ট নামে পরিচিত ছিল, হিন্দু পৌরাণিক অনুসারে ‘শ্রী’ অর্থ ‘প্রাচুয’র্ বা ‘সৌন্দর্য’ এবং হসত্ম অর্থ ‘হাত’। যেখানে শ্রী এর হসত্ম পাওয়া গিয়েছিল তাই শ্রীহস্থ, যা কালের বিবর্তনে শ্রীহট্ট নাম ধারণ করেছে। আরো একটি শ্রম্নতি, পাথরকে শীলা বলা হয় এবং পাথরের প্রাচুর্য্যের কারণে এ এলাকাকে সিলেট বলা হয়। সিলেট শব্দের অনুসর্গ সিল মানে শীল এবং উপসর্গ হেট মানে হাট অর্থাৎ বাজার। প্রাচীনকাল হতে এ জেলা পাথর (শীল) ও হাটের (ব্যবসা ও বানিজ্যের) প্রাধান্য ছিল বলে ‘শীল’ ও ‘হাট’ শব্দদ্বয় মিলে সিলেট শব্দের উৎপত্তি হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
সিলেট জেলা ১৭৭২ সালের ১৭ মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭৪ সাল পর্যমত্ম এ জেলা ঢাকা বিভাগের অমত্মর্ভূক্ত ছিল। ঐ বছরই সিলেটকে নবসৃষ্ট আসাম প্রদেশের অমত্মর্ভূক্ত করা হয়। দেশ ভাগের সময় ১৯৪৭ সালে গণভোটের মাধ্যমে সিলেট জেলা তৎকালীন পূর্ব পাকিসত্মানের অমত্মর্গত হয়। সিলেট জেলা তখন চট্টগ্রাম বিভাগের আওতাধীন ছিল। ১৯৮৩-৮৪ সালে বৃহত্তর সিলেট জেলাকে ৪টি নতুন জেলায় বিভক্ত করা হয় এবং ১৯৯৫ সালের ১ আগস্ট সিলেট বিভাগের সৃষ্টি হয়।
ঔপনিবেশিক আমল থেকেই সিলেট দ্রম্নত বিকাশ লাভ করতে থাকে। ১৮৯৭ সালের ১২ জুনের প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পে পুরো শহর ধ্বংস হয়ে গেলেও পরবর্তীতে রেলওয়ে সংযোগসহ রাসত্মাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়। চা বাগানের বিসত্মৃতি এবং ১৯৫০-৬০ দশক থেকে সিলেটের প্রবাসীদের অবদানে এ জেলার উন্নয়ন দ্রম্নত ঘটতে থাকে যা এখনো অব্যাহত আছে।
সুরমা-কুশিয়ারা নদীবেষ্টিত এ জেলায় রয়েছে অনেক হাওর-বিল, ছোট বড় টিলা কানন। রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকির অংশ বিশেষ। কৃষিফলন বিশেষত ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত এ জেলা প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ। জেলার উত্তরপূর্ব কোণে রয়েছে খাসিয়া-জৈমিত্ময়া পাহাড়ের প্রামত্ম-পাদদেশ। এখানকার মাটি চা চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী এবং এর অপার সৌন্দর্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। সিলেটের জাফলং, লালাখাল, ভোলাগঞ্জ, জৈমত্মাপুর, বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত চা বাগানসহ অন্যান্য দর্শনীয়স্থানের উন্নতমানের রিসোর্ট ও পর্যটন স্পট হিসেবে বিবেচিত হয়।
এছাড়া সিলেট জেলা প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল, চুনাপাথর, কঠিন শিলা, বালুসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদে অনন্য একটি জেলা। খনিজ সম্পদ আহরণের পাশাপাশি পর্যটন ক্ষেত্রে মনোনিবেশ করলে বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে প্রচুর পরিমানে রাজস্ব আয় করা সম্ভব হবে। শুধু রাজস্বই নয় পর্যটন শিল্পের বিকাশে ও যথাযথ উপভোগে দেশজ পর্যটকগণের মনেও প্রবাহিত করা যেতে পারে অফুরান সুখ শামিত্ম যা দেশ গঠনের সম্ভাবনাকে করতে পারে গতিময় ও বেগবান।
সিলেট জেলা: আয়তন ৩,৪৯০.৪০ বর্গ কি.মি.। উত্তরে ভারতের খাসিয়া-জৈমিত্ময়া পাহাড়, দক্ষিণে মৌলভীবাজার জেলা, পূর্বে ভারতের কাছাড় ও করিমগঞ্জ জেলা, পশ্চিমে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা। বার্ষিক গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩.২০ সে., সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩.৬০ সে., বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাত ৩৩৩৪ মি.মি.। সিলেটের প্রধান ও দীর্ঘতম নদী সুরমা (৩৫০ কি.মি.), অপর বৃহৎ নদী হলো কুশিয়ারা। এ জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে মোট ৮২টি হাওর-বিল রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সিংগুয়া বিল (১২.৬৫ বর্গ কি.মি.), চাতলা বিল (১১.৮৬ বর্গ কি.মি.) উলেস্নখযোগ্য। সিলেটে সর্বমোট রিজার্ভ ফরেষ্ট ২৩৬.৪২ বর্গকি.মি.। জেলার উত্তর-পূর্ব কোণে ভারতের খাসিয়া ও জৈমিত্ময়া পাহাড়ের অংশ বিশেষ বিদ্যমান। সিলেটে বেশ কিছু ছোট ছোট পাহাড় ও টিলা রয়েছে, যার মধ্যে জৈমত্মাপুর টিলা (৫৪ মিটার), শারি টিলা (৯২ মি.), লালাখাল টিলা (১৩৫ মি.), ঢাকা দক্ষিণের টিলা শ্রেণি (৭৭.৭ মি.) উলেস্নখযোগ্য।
সিলেট (জেলা শহর) ২৭টি ওয়ার্ড ও ২১০টি মহলস্না নিয়ে গঠিত। আয়তন ১০.৪৯ বর্গ কি.মি.। জনসংখ্যা ২৮৫৩০৮; পুরম্নষ ৫৪.৬৮%, মহিলা ৪৫.৩২%। জনসংখ্যার ঘনবসতি প্রতি বর্গ কি.মি. ২৭২২৪ জন। শিক্ষার হার ৬৬.৯%। ঔপনিবেশিক আমলেই সিলেট দ্রম্নত বিকাশ লাভ করেছে। সিলেট পৌরসভার সৃষ্টি ১৮৭৮ সালে। ১৮৯৭ সালের ১২ জুন এক মারাত্মক ভূমিকম্প গোটা শহরটিকে প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলে। পরবর্তীতে ধ্বংসস্ত্তপের ওপর গড়ে উঠে ইউরোপীয় ধাঁচের আরও সুন্দর ও আধুনিক শহর। ১৮৯০ এর দশকের শেষ ভাগে বেশ কিছু রাসত্মাঘাট তৈরি করা হয়। ১৯১২-১৫ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের একটি শাখা সিলেটের সাথে সংযুক্ত হলে দেশের অন্যান্য অংশের সাথে সিলেটের বিচ্ছিন্নতার প্রকৃত অবসান ঘটে। চা শিল্পের কারণে বিশ শতকের প্রথম দিকে সিলেট শহরের গুরম্নত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৫০ ও ১৯৬০ দশকে প্রবাসী সিলেটিদের এবং সিলেট শহর দ্রম্নত নগরায়ণ ঘটতে থাকে এবং বর্তমানে ও তা অব্যাহত রয়েছে।
প্রশাসন: ১৭৭২ সালের ১৭ মার্চ সিলেট জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭৪ সাল পর্যমত্ম সিলেট জেলা ছিল ঢাকা বিভাগের অমর্ত্মভূক্ত। ঐ বছরেরই ১২ সেপ্টেম্বর নবসৃষ্ট আসাম প্রদেশের সাথে সিলেটকে সংযুক্ত করা হয়। ১৯৪৭ এর আগ পর্যমত্ম (১৯০৫-১৯১১ পর্যমত্ম বঙ্গভঙ্গ সময়ের কালটুকু বাদ দিয়ে) সিলেট আসামের অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভিক্তির সময় গণভোটের মাধ্যমে সিলেট জেলা তদানীমত্মন পূর্ব পাকিসত্মান এর সাথে সম্পৃক্ত হয়। তখন প্রশাসনিকভাবে সিলেট ছিল চট্টগ্রাম বিভাগের অমর্ত্মভূক্ত। ১৯৮৩-৮৪ সালে প্রশাসনিক পুনর্গঠন এর সময় বৃহত্তর সিলেট জেলাকে ০৪ (চার) টি নতুন জেলায় বিভক্ত করা হয়। এই নতুন জেলাগুলো হলো : সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার। ১৯৯৫ সালের ১ আগষ্ট সিলেট দেশের ষষ্ঠ বিভাগ হিসেবে মর্যাদা পায় এবং মূলত বৃহত্তর সিলেট জেলার সীমানাই নতুন সিলেট বিভাগের আওতাভূক্ত করা হয়। উপজেলা- ১২, পৌরসভা-৪, ওয়ার্ড-৩৭, মহলস্না-২৩৩, ইউনিয়ন-১০৫, মৌজা-১৬৯৩, গ্রাম-৩২৪৯। উপজেলাসমূহ : বালাগঞ্জ, বিশ্বনাথ, গোয়াইনঘাট, বিয়ানীবাজার, কোম্পানীগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, জৈমত্মাপুর, কানাইঘাট, সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা ও জকিগঞ্জ।
প্রাচীন নির্দশনাদি ও প্রত্নসম্পদ: জৈমত্মাপুরের প্রসত্মর স্মৃতি, গড়দুয়ার ঢিবি, গায়েবী মসজিদ, হযরত শাহজালাল (র.) ও শাহ্পরাণের (র.) দরগাহ্, আবু তোরাব মসজিদ, নবাবী মসজিদ, আখালিয়ার মুঘল মসজিদ, ঢাকাদক্ষিণ মন্দির, তিন মন্দির।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলী: সিলেট একটি প্রাচীন জনপদ। সুলতানী আমলে সিলেটের নাম ছিল জালালাবাদ। দশম শতাব্দীতে মহারাজা শ্রীচনদ্রকর্তৃক উৎকীর্ণ পশ্চিমবাগ তাম্রলিপি থেকে জানা যায় যে, তিনি সিলেট জয় করেছিলেন। ঐতিহাসিকদের ধারণা, সিলেট বা শ্রীহট্ট (সমৃদ্ধ হাট) বহু আগে থেকেই একটি বর্ধিষ্ণু বাণিজ্যকেনদ্রহিসেবে বর্তমান ছিল। প্রাচীন শ্রীহট্টে বিপুল হারে বাঙালি অভিবাসন হয়েছিল। ১৪ শতকে ইয়েমেনের সাধক পুরম্নষ হযরত শাহজালাল (র.) সিলেট জয় করেন এবং ইসলাম প্রচার শুরম্ন করেন। মোগল যুগে পাঠান বীর খাজা ওসমান সিলেটের স্থানীয় সামমত্মদের সহায়তায় আক্রমণকারী মোগলদের বিরম্নদ্ধে লড়াই করেছিলেন। ১৮৫৭ সালে বিদ্রোহের সময়ে সিলেটে বিদ্রোহীরা ব্রি্রটিশ বেনিয়াদের বিরম্নদ্ধে যুদ্ধ করে ব্যর্থ হয়। নানকার বিদ্রোহ সিলেটের ইতিহাসে একটি গুরম্নত্বপূর্ণ ঘটনা। নানকাররা ছিল জমিদারদের ভূমিদাস। নানাকার বিদ্রোহসহ আরও কয়েকটি বিদ্রোহ সংঘটিত হলে ১৯৫০ সালে এ প্রথা বিলুপ্ত করা হয়।
সিলেট যখন আসামের অংশ ছিল সেই সময়েই, ১৯২৭ সালে সিলেটের রাজনীতিবিদগণ (এম.এল.এ গণ) প্রাদেশিক পরিষদে বাংলায় কথা বলার অধিকার আদায় করেন। পাকিসত্মান সৃষ্টির পর ১৯৪৭ সালে সিলেটের স্থানীয় পত্রিকা আল ইসলাহতে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়।

সিলেট জেলার ভৌগলিক প্রোফাইল

ভৌগলিক  অবস্থানঃ ২৪০ ৩৬’-২৫১১’ উত্তর অক্ষাংশ হতে ৯১০ ৩৮’-৯২৩০’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ।
আয়তন ৩,৪৯০.৪০ বর্গ কিমি বা ১৩৪৭.৬৫ বর্গ মাইল।
উত্তরে ভারতের খাসিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড়, দক্ষিণে মৌলভীবাজার জেলা, পূর্বে ভারতের কাছাড় ও করিমগঞ্জ জেলা, পশ্চিমে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা।

বার্ষিক গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩.২ সেঃ, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩.৬ সেঃ।
বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাত ৩৩৩৪ মিঃ মিঃ।

সিলেটের প্রধান ও দীর্ঘতম নদী সুরমা (৩৫০ কিঃ মিঃ), অপর বৃহৎ নদী হলো কুশিয়ারা। এ জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে মোট ৮২টি হাওর-বিল রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সিংগুয়া বিল (১২.৬৫ বর্গ কিমি), চাতলা বিল (১১.৮৬ বর্গ কিমি) উল্লেখযোগ্য।
সিলেটে সর্বমোট রিজার্ভ ফরেষ্ট ২৩৬.৪২ বর্গ কিমি। জেলার উওর-পূর্ব কোণে ভারতের খাসিয়া ও জৈন্তিয়া পাহাড়ের অংশ বিশেষ বিদ্যমান।

সিলেটে বেশ কিছু ছোট ছোট পাহাড় ও টিলা রয়েছে, যার মধ্যে জৈন্তাপুর টিলা (৫৪ মিটার), শারি টিলা (৯২ মি), লালাখাল টিলা (১৩৫ মি), ঢাকা দক্ষিণের টিলা শ্রেনী (৭৭.৭ মি) উল্লেখযোগ্য।

উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ

 সিলেট জেলার উপজেলা ও ইউনিয়ন নামের তালিকা
উপজেলার নাম
ইউনিয়নের নাম
জৈন্তাপুর
১নংনিজপাট

০২ নং জৈন্তাপুর

৩নং চারিকাটা

৪নং দরবস্ত

৫নং ফতেপুর

৬নং চিকনাগুল
দক্ষিণ সুরমা
মোললারগাঁও

বরইকান্দি

তেতলী

কুচাই

সিলাম

লালাবাজার

জালালপুর

মোগলাবাজার

দাউদপুর

কামালবাজার
সিলেট সদর
জালালাবাদ

হাটখোলা

খাদিমনগর

খাদিমপাড়া

টুলটিকর

টুকেরবাজার

মোগলগাঁও

কান্দিগাঁও
গোলাপগঞ্জ
০১ বাঘা ইউনিয়ন পরিষদ

০২ নং গোলাপগঞ্জ

০৩ নং ফুলবাড়ি

০৪ নং লক্ষীপাশা

০৫ নং বুধবারীবাজার

০৬ নং ঢাকাদক্ষিণ

০৭ নং লক্ষনাবন্দ

০৮ নং ভাদেশ্বর

০৯ নং পশ্চিমআমুড়া

১০ নং উত্তরবাদেপাশা

১১ নং শরীফগঞ্জ
বিশ্বনাথ
লামাকাজী

খাজাঞ্চী

অলংকারী

রামপাশা

দৌলতপুর

বিশ্বনাথ

দেওকলস

দশঘর
কোম্পানীগঞ্জ
ইসলাম পশ্চিম

ইসলামপুর পূর্ব

তেলিখাল

ইসাকলস

উত্তর রণিখাই

দক্ষিণ রণিখাই
গোয়াইনঘাট
রুস্তমপুর

পশ্চিম জাফলং

পুর্ব জাফলং

লেঙ্গুঁড়া

আলীরগাঁও

ফতেপুর

নন্দিরগাঁও

তোয়াকুল

ডৌবাড়ী
ফেঞ্চুগঞ্জ
১ নং ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়ন

২ নং মাইজগাঁও ইউনিয়ন

৩ নং ঘিলাছড়া ইউনিয়ন

৪ নং উত্তরকুশিয়ারা ইউনিয়ন

৫ নং উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়ন
বিয়ানীবাজার
আলীনগর

চারখাই

দুবাগ

শেওলা

কুড়ারবাজার

মাথিউরা

তিলপাড়া

মোল্লাপুর

মুড়িয়া

লাউতা

বিয়ানীবাজার পৌরসভা
ওসমানীনগর
০১ নং উমরপুর ইউ/পি

০২নং সাদীপুর ইউ/পি

০৩ নং পশ্চিম পৈলনপুর ইউপি

০৪ নং বুরুঙ্গাবাজার ইউ/পি

০৫নং গোয়ালা বাজার ইউ/পি

০৬ নং তাজপুর ইউ/পি

০৭ নংদয়ামীরইউ/পি

০৮ নং উছমানপুর ইউ/পি
জকিগঞ্জ
০১ নংবারহাল

02 নংবিরশ্রী

০৩ নংকাজলসার

০৪ নংখলাছড়া

০৫ নংজকিগঞ্জ

০৬ নংসুলতানপুর

০৭ নংবারঠাকুরী

০৮ নংকসকনকপুর

০৯ নংমানিকপুর
বালাগঞ্জ
পূর্ব পৈলনপুর

বোয়ালজুড়

দেওয়ানবাজার

পশ্চিম গেীরীপুর

বালাগঞ্জ সদর

পূর্ব গৌরীপুর
কানাইঘাট
লক্ষীপ্রসাদর্পূব

লক্ষীপ্রসাদপশ্চিম

দিঘীরপাড়র্পূব

সাতবাঁক

বড়চতুল

কানাইঘাটসদর

দক্ষিণবাণীগ্রাম

ঝিংগাবাড়ী

রাজাগঞ্জ

0/Post a Comment/Comments