ধামরাই উপজেলা পরিচিত


ধামরাই উপজেলার পটভূমি:
          ইতিহাসের প্রাচীন ও সমৃদ্ধশালী এলাকা ধামরাই বিদ্যা, বুদ্ধি, টাকা এই তিনে ঢাকা। আজকের এ ধামরাই কোন একদিন আয়তনে ও অবস্থানে এমন ছিলনা। কালের বিবর্তনে একটি সুন্দর সমৃদ্ধ গ্রাম শহরের আদল পেয়েছে। তখনও আর্যগণ এদেশে আসেনি। এ জনপদটি ছিল সমতল ও উর্বর। মাটির এই টানে দ্রাবিড়গণ এখানে আসে এবং বসতি স্থাপন করে। গড়ে তাদের সভ্যতা, বৌদ্ধ যুগে এই সভ্যতার আরও অগ্রগতি হয়। কলিঙ্গ যুদ্ধের পর সম্রাট অশোক ছুড়ে ফেলেন তার রক্ত বসন। পরলেন পীতবাস শরণ নিলেন বুদ্ধের দীক্ষিত হলেন অহিংস ধর্মে। অতঃপর তিনি বুদ্ধ ধর্ম প্রচারের জন্য বেছে নিলেন ৮৪ হাজার গ্রাম। এই প্রচার কেন্দ্রগুলোকে বলা হত ধর্ম রাজিকা/ধর্ম রাজিয়া। ধামরাই ছিল তন্মধ্যে অন্যতম প্রধান ধর্ম রাজিয়া বা প্রচারকেন্দ্র। ধর্ম রাজিয়া শব্দের অর্থ ধর্মরথ। এই ধর্ম রাজিয়া হতে ধর্মরাজি বা ধর্মপুর এবং এ থেকেই ধামরাই নামের উৎপত্তি।          ইহা ছাড়াও শব্দগত আক্ষরিক অর্থে ধাম শব্দে গৃহ, বাসস্থান, তীর্থস্থান, পবিত্রস্থান বা  জায়গাকে বুঝায়। আর রাই শব্দে কিশোরী রাধিকা, জীবনাত্মারূপ, শ্রীকৃষ্ণ প্রণয়িনী, শ্রী রাধিকা থেকে রাই সুতরাং ধামরাই শব্দটি পবিত্র তীর্থ এবং রাধিকা নামের সংক্ষিপ্ত রাই শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। আজ ধামরাই স্বগৌরবে মাথা উঁচু করে বলতে পারে যারা দেশের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষিত, জ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, ডক্টরেট এর জন্ম দিয়েছে এই ধামরাই তার অন্যতম। এখানেই জন্ম নিয়েছেন এই উপ-মহাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের মূখ্যমন্ত্রী, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মরহুম আতাউর রহমান খান, প্রফেসর ওয়াদুদুর রহমান, ইতিহাসখ্যাত আগরতলা মামলার অন্যতম আসামী, বাংলার জনসন কে এম সামসুর রহমান (সাবেক রাষ্ট্রদূত) দেশের প্রথম ডক্টরেট রায় চাঁদ, উপাধিখ্যাত ডঃ অনুকূল চন্দ্র সরকার, দেশের তৃতীয় ডক্টরেট মরহুম দাউদ আলী, ডক্টর মোহাম্মদ কিয়াম উদ্দিন, ডঃ মোঃ নূরে আলম, ডঃ আজিজুর রহমান মল্লিক, ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান, ডঃ মোঃ মজিবুর রহমান, ডঃ মোঃ হানিফ আলী সিএসপি, মোঃ ওমর ফারুক সিএসপি, ডঃ আবুল কাসেম, ডঃ মোঃ লুৎফর রহমান, ডঃ মোঃ নাসির উদ্দিন, মোঃ আব্দুস সবুর সচিব আরও অনেক শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা।          এই কথা আজ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত যে, ধামরাই একটি ঐতিহ্যবাহী পুরুনো জনপদ। এই নগরীর প্রায় বিলুপ্ত অট্টালিকারাজীর কারুকাজ মৃত্তিকা। এখানে উদগত পোড়া মাটির মন্ডাংশ এবং মাটির স্তর সে কথারই সাক্ষ্য দেয়। ৯০০ হিজরীর কোন একসময়ে ৫ জন সুফী দরবেশ আগমন করেন। আজও তাদের নামানুসারে ধামরাই পাঠানটোলায় অবস্থিত হযরত পাঁচপীর শাহ মাজার। ধামরাই এর অন্যতম ঐতিহ্য তার সুপ্রসিদ্ধ রথ ও কাসা পিতলের বাসন কোসন। ধামরাই রথ ছিল জগৎ বিখ্যাত। এই ধামরাই রথ মাধব অঙ্গন অঙ্গীয় দেবতা শ্রী যশোমাধব জিউর ব্যক্তিগত যান। এই যানে চড়ে মাধব তার শ্বশুর বাড়ী গমন করেন আবার নিজ বাড়ী মাধব অঙ্গনে প্রত্যাবর্তন করেন।          ধামরাই থেকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার যাতায়াতের জন্য জল ও স্থল উভয়পথই ব্যবহারযোগ্য। এখানকার আবহাওয়া, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্যের অনুকূল। বংশী নদী আর কাকিলা জানি নদী ঘেরা এই ধামরাই। এই নদী দুটোকে নিয়ে একটি মিষ্টি মধুর প্রেমের কাহিনী জড়িয়ে আছে। বিবাহ বন্ধনকে চিরস্থায়ী করার মানস নিয়ে এতদ অঞ্চলে ত্রীমহনা পূজা প্রচলনের সঙ্গে এই অমর প্রেম গাথার কোন যোগসূত্র থাকলেও থাকতে পারে। ঠাকুরমার বন্ধ সিন্ধুকের সোধাগন্ধ সার এবং পুরানো দিনের সারি সারি ইমারত আজও দেশী-বিদেশী বহু পর্যটককে টেনে আনে এই কিংবদন্তীর ধামরাইতে।           ধামরাই এর মাঝে খুজলে গ্রামের সেই আদিকালের চেহারাটাকে আজ আর পাওয়া যাবে না। কিন্তু গ্রামীণ সংস্কৃতি তো মুছে যাবার নয়। ঢুলি, পালকি না থাক, হাত পাখা আছে, পৌষ পাবন নবান্ন আছে। পিঠে একেবারে শেষ হয়ে যায়নি, আছে মেলা, মিলন মেলা।

ভৌগলিক পরিচিতি:

ধামরাই উপজেলার আয়তন ৩০৭.৪বর্গ কিলোমিটার। উত্তরে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলা এবং গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর,দক্ষিনে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলা। পূর্বে সাভার এবং পশ্চিমে মানিকগঞ্জ জেলার সদর উপজেলা,সাটুরিয়া  ও টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলা। প্রধান প্রধান নদী হচ্ছে বংশী,ধলেশ্বরী এবং গাজীখালী।

ইউনিয়নসমূহ
১.চৌহাট ইউনিয়ন পরিষদ
২.নান্নার ইউনিয়ন পরিষদ
৩.আমতা ইউনিয়ন পরিষদ
৪.বাইশাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদ
৫.বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ
৬.ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ
৭.ধামরাই ইউনিয়ন পরিষদ
৮.গাংগুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ
৯.যাদবপুর ইউনিয়ন পরিষদ
১০.কুলস্না ইউনিয়ন পরিষদ
১১.কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদ
১২.রোয়াইল ইউনিয়ন  পরিষদ             
১৩.সানোড়া ইউনিয়ন পরিষদ
১৪.সোমভাগ ইউনিয়ন পরিষদ
১৫.সূয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদ
১৬.সূতিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ

ভাষা ও সংষ্কৃতি:

          ধামরাই উপজেলার ভূ-প্রকৃতি ও ভৌগলিক অবস্থান এই উপজেলার মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতি গঠনে ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশের রাজধানী জেলায়  অবস্থিত এই উপজেলার ভাষার মূল বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের অন্যান্য উপজেলার মতই, তবুও কিছুটা বৈচিত্র্য খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন কথ্য ভাষায় মহাপ্রাণধ্বনি অনেকাংশে অনুপস্থিত, অর্থাৎ ভাষা সহজীকরণের প্রবণতা রয়েছে। ধামরাই উপজেলার আঞ্চলিক ভাষার সাথে সন্নিহিত মানিকগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলার অনেকটা সাযুজ্য রয়েছে। মানুষের আচার-আচরণ, খাদ্যাভ্যাস, ভাষা, সংস্কৃতিতে রাজধানী ঢাকা শহরের সংস্কৃতির ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।         এই এলাকার ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় যে ঢাকা সভ্যতা বহুপ্রাচীন। এলাকায় প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রাচীন সভ্যতার বাহক হিসেবে দেদীপ্যমান। সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে ধামরাই উপজেলার যাত্রাগান, পালাগান, কীর্তনের অবদান ও অনস্বীকার্য। 


উপজেলার ঐতিহ্য
ধামরাই বাংলাদেশের ঢাকা জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এই উপজেলায় ১টি পৌরসভা এবং ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ধামরাই পৌরসভা এবং ইউনিয়ন গুল হচ্ছে- ধামরাই, সুতিপাড়া, কুল্লা, সোয়াপুর, রোয়াইল, নান্নার, সোমভাগ, ভারারিয়া, সানোরা, কুশুরা, গাঙ্গুটিয়া, আমতা, বালিয়া, বাইশাকান্দা, যাদবপুর এবং চৌহাট। ঐতিহ্য:১। ধামরাই তামা কাশা শিল্প২। ধামরাই রথ যাত্রা।৩। ধামরাই জীব বৈচিত্র (বানর)।

খেলাধুলা ও বিনোদন

প্রাচীনকাল থেকেই ধামরাইয়ের জনগোষ্ঠী ক্রীড়ামোদী। এখানে প্রতিবছরই বিভিন্ন টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। এখানকার জনপ্রিয় খেলার মধ্যে বর্তমানে ক্রিকেট ও ফুটবলের আধিপত্য দেখা গেলেও অন্যান্য খেলাও পিছিয়ে নেই। ধামরাই এ বেশ কয়েকটি খেলার মাঠ রয়েছে। এর মধ্যে হার্ডিজ্ঞ স্কুল খেলার মাঠ এবং কুশুরা স্কুল খেলার মাঠ উল্লেখযোগ্য। প্রতি বছর এ খেলারমাঠে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব:
১। আতাউর রহমান খান (১লা জুলাই, ১৯০৭-৭ই ডিসেম্বর, ১৯৯১) -(সাবেক প্রধানমন্ত্রী) ২। কামিনী রায়, (জন্মঃ অক্টোবর ১২, ১৮৬৪ - মৃত্যুঃ সেপ্টেম্বর ২৭, ১৯৩৩) -(কবি) ৩। ডা: ই.আর. মল্লিক, -(অর্থনীতিবীদ)

দর্শনীয় স্থান

ক্রমিকনামকিভাবে যাওয়া যায়অবস্থান
মহিশাষি মহাম্মদী গার্ডেনগাবতলী বাস টার্মিনাল হতে পশ্চিম দিকে বাস যোগে আসা যায়। ভাড়া ৩৫ টাকা।
যশোমাধব মন্দির
মহাশক্তি প্রেরণ কেন্দ্র

মহাশক্তি প্রেরণ কেন্দ্র, ধামরাই, ঢাকা

সাইট্টা বট গাছ
ঢাকা থেকে প্রথমে যেতে হবে নবীনগর। নবীনগর থেকে এই স্থানের দূরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটার। ভাড়া ৪০-৫০ টাকা।
সুকান্তের ধামরাই মেটাল ক্রাফট
 ঢাকা-আরিচা পথে বাসযোগে- ০১ ঘন্টা ৫০ মিনিট
 
বালিয়া জমিদার বাড়ি
ঢাকা-আরিচা পথে বাসযোগে- ০১ ঘন্টা ৫০ মিনিট
1. D-link (Gulistan to Dhamrai) &
2. Grameen Sheba
 
 



0/Post a Comment/Comments