গবেষণা কী? সামাজিক গবেষণার ধাপসমূহের বর্ণনা।


গবেষণা শব্দটি  সংস্কৃত গবেষ শব্দ থেকে এসেছে শব্দটির অর্থ অন্বেষণ বা অনুসন্ধান। গবেষণা = গবেষ + অণ+আ . ইংরেজী Research শব্দটির উৎপত্তি ফরাসী recerche থেকে । এর অর্থ বিস্তারিত অনুসন্ধান। আবার Research মানে পুনরায় অনুসন্ধান।

গবেষণা শব্দটি দ্বারা কোন কিছু খুঁজে বের করার জন্য চেষ্টা করা কে বোঝায় । গবেষণা হতে পারে খুবই অনানুষ্ঠানিক।  মাত্র কয়েকটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও প্রক্রিয়া ব্যবহার করে এটি করা যায় । আবার এটি হতে পারে খুবই আনুষ্ঠানিক। যেখানে গবেষকরা উচ্চতর গবেষণা প্রক্রিয়া ও ধাপসমূহ  অনুসরণ করে । সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ না করার মানে এই নয় যে এই গবেষণা পদ্ধতি ভুল । আবার সকল উচ্চতর প্রক্রিয়ার ব্যবহার দ্বারা করা আনুষ্ঠানিক গবেষণা ও নিজে নিজে শতভাগ সঠিক হতে পারে না ।  

উভয় পদ্ধতিতে গবেষণা করলে গবেষণার ফলাফল কি ভালো খারাপ উভয় হতে পারে।  এটি নির্ভর করে গবেষক কিভাবে গবেষণা পদ্ধতিটি পরিচালনা করেছেন । গবেষকদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা রাখা।  যাতে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় ।  আমরা প্রতিদিনই অসংখ্য গবেষণা প্রজেক্ট পরিচালনা করি। গবেষণার জন্য আমাদের কিছু বিষয় অবশ্যই বিশ্লেষণ পরীক্ষা ও মূল্যায়ন করতে হবে এগুলো হল –


১.ওই দিনের জন্য কোন কাপড় টি ভালো হবে

২. এমন কিছু খেয়ে নিন যা আপনাকে দুপুর পর্যন্ত শক্তি দেবে 
৩.হাতে সময় নিয়ে বের হন নির্দিষ্ট পথে যান 
৪.কত উচ্চস্বরে কথা বলবেন তা নির্দিষ্ট করুন 
৫.সমস্যা সম্পর্কে একজন বন্ধুকে কিভাবে বলবেন তা মূল্যায়ন করুন
৬. ঘরে কখন ফিরবেন তা নির্ধারণ করুন


সামাজিক গবেষণার ধাপসমূহ

সামাজিক গবেষণার ধাপসমূহ হল

১. সমস্যা চিহ্নিত করা
২. পূর্বের গবেষণা ও তত্ত্ব পর্যবেক্ষণ
৩. হাইপোথিসিস বা গবেষণা প্রশ্নের বক্তব্য
৪. গবেষণার জন্য সঠিক পদ্ধতি ও ডিজাইন নির্বাচন
৫. তথ্য সংগ্রহ
৬. তথ্য বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা
৭. ফলাফল উপস্থাপন
৮. প্রতিলিপিকরণ



সামাজিক গবেষণার ধাপসমূহ 

১. সমস্যা চিহ্নিত করা
সকল গবেষককই গবেষণার বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন না। অনেকে তাদের পছন্দের গবেষণা ক্ষেত্র বেছে নিতে পারেন ।তারা  সে অনুযায়ী কাজ করতে সক্ষম । অনেক গবেষক কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর গবেষণা করে থাকেন। যেমন – শিশু এবং মিডিয়া তে প্রদর্শিত সংঘাত, সংবাদপত্রের পাঠক, বিজ্ঞাপন, এবং যোগাযোগ আইন প্রভৃতি।

গবেষকগণ অনেক ছোট ছোট বিষয়ও পর্যবেক্ষণ করেন । এতে করে গবেষণার একটি পূর্ণ চিত্র ফুটে উঠে। কিছু গবেষক গবেষণার জন্য নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করেন। যেমন – ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন, ইতিহাস বিশ্লেষণ প্রভৃতি।

২. পূর্বের গবেষণা ও তত্ত্ব পর্যবেক্ষণ
গবেষণায় পূর্বে যে সকল সমজাতীয় গবেষণা কার্যক্রম চলেছে তার নোট নিতে হবে।  এবং গবেষক দের এ বিষয়ে পড়াশোনা করতে হবে। গবেষক পূর্বের গবেষণার বিভিন্ন পদ্ধতি, নীতি, নমুনায়ন ও পরিমাপ বর্তমান গবেষণায় ব্যবহার করবেন।

৩. হাইপোথিসিস বা গবেষণা প্রশ্নের বক্তব্য
হাইপোথিসিস হল একটি আনুষ্ঠানিক বক্তব্য , যা চলকগুলোর মধ্যকার সম্পর্ককে বোঝায়। এবং এটি পরীক্ষিত। অন্যদিকে গবেষণা প্রশ্ন হল, কোন বিষয় সম্পর্কে অনানুষ্ঠানিক ভাবে নির্দেশ করা। এটা চলক সমূহের মধ্যকার সম্পর্ক অনুসন্ধানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। গবেষক যখন পর্যবেক্ষণে থাকা সমস্যার প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন থাকেন না তখন গবেষণা প্রশ্ন উপযুক্ত। অন্য দিকে তথ্য সংগ্রহের সময় সংগৃহীত প্রশ্নসমূহ থেকে হাইপোথিসিস তৈরি করা যায়।
গবেষণা ক্ষেত্র এবং পূর্বের তথ্য সমূহ রিভিউ করার পর গবেষকগণ অবশ্যই কার্যকর  হাইপোথিসিস বা গবেষণা প্রশ্ন   তৈরি ও সমস্যা সম্পর্কে বর্ণনা করবেন। 


গবেষণর মৌলিক ধারণাগুলো পাওয়ার পর পরবর্তীতে ঐ বিষয়ের গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে হবে।এটা করা যায় নিচের ৮ টি প্রশ্নের উত্তর প্রদানের মাধ্যমে। 


১.এ বিষয়টা কি খুবই বিস্তৃত?
২.সমস্যা টা কি প্রকৃতপক্ষেই অনুসন্ধানের যোগ্য?
৩. তথ্য গুলো কি বিশ্লেষণ করা যাবে?
৪. সমস্যা টা কি তাৎপর্যপূর্ণ?
৫. গবেষণার ফল কি সাধারণভাবে প্রকাশযোগ্য?
৬. বিশ্লেষণের সাথে কি খরচ ও সময় যুক্ত আছে?
৭. পদ্ধতি গুলো কি এ প্রকল্পের জন্য উপযুক্ত?
৮. বিষয়টির কি কোন ক্ষতিকর সম্ভাবনা আছে?

. গবেষণার জন্য সঠিক পদ্ধতি ও ডিজাইন নির্বাচন :
গবেষণারর জন্য কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে, কোন পদ্ধতি টি উপযুক্ত তা এ পর্যায়ে গবেষক নির্বাচন করবেন। গবেষণা পদ্ধতি বিভিন্ন রকম হতে পারে। তা হতে পারে গুণবাচক অথবা সংখ্যাত্বক। এছাড়া কোন ডিজাইন টি গবেষণায় ব্যবহার করা হবে তা নির্ধারণ করতে হবে।


৫. তথ্য সংগ্রহ
তথ্য সংগ্রহ গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তথ্য সংগ্রহ করা যায় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। গবেষণার তথ্য অনুসন্ধানের জন্য গবেষণাপত্র পড়া, সার্ভে বা জরিপ চালানো, বিভিন্ন অফিস থেকে তথ্য সংগ্রহ, ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশনকেস স্টাডি, ঘটনা অনুসন্ধান, পর্যবেক্ষণ, ফিল্ড অবজারভেশন প্রভৃতি কৌশল অবলম্বন করা যায়।



৬. তথ্য বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা
 তথ্য বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যার বিষয়টি কোন গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছে এবং গবেষণার উদ্দেশ্য কি তার উপর নির্ভর করে।  এখানে সময় ও কতটুকু পরিশ্রম করতে হবে তাও এর উপর নির্ভর করে। 
তথ্য বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যার জন্য হয়তো অনেক দিন বা কয়েক মাস লাগতে পারে । আবার অনেক বেসরকারি গবেষণায় একটি মাত্র প্রশ্নের উত্তরের জন্য গবেষণা করা হয়। এখানে তথ্য বিশ্লেষণ বিষয়টি কয়েক মিনিটে হয়ে যায়।


প্রতিটি গবেষণা পরিকল্পিত ও যত্নসহকারে করতে হবে। ব্যাখ্যার শেষে গবেষকরা পেছনে এসে খুজে বের করবেন যে এ গবেষণা থেকে কি পাওয়া গেল। গবেষককে দুইটি প্রশ্নের উত্তর খুজে বের করতে হবে।

১. ফলাফলটি অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ভাবে বর্তমান আছে কিনা
২। ফলাফল টি সঠিক কিনা।

1. Internal Validity

একটি বিশ্বাস যোগ্য গবেষণা তৈরি করতে গবেষকদের গবেষণা অবস্থানের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি। উদাহরণ – গবেষকগণ প্রমাণ করতে চান যে , x হল y এর ফাংশন। বা y = f(x). গবেষণার শর্তগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য এখানে খুঁজে বের করতে হবে যে, y=f(b) যে খানে b একটি বাহ্যিক চলক। এখানে এরকম চলক যা সম্ভব , কিন্তু ভুল ব্যাখ্যা প্রমাণ করে তাকে Artifact বলে। এর উপস্থিতি অভাব 
Internal Validity র নির্দেশ করে।


Artifact গবেষণায় বিভিন্ন উৎস্য থেকে তৈরি হতে পারে। নিচে এর কিছু উৎস্য দেওয়া হল :

1.History
2. Maturation
3. Testing
4.Instruments
5. Statistical Regression
6. Experimental Morality
7. Sample Selection
8. Demand Characteristics



2. External Validity


এটি দ্বারা বোঝানো হয়, কিভাবে একটি গবেষণার ফলাফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌছানো যায়।
External Validity  গবেষণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন চলক যেমন – বিষয় নির্বাচন, যন্ত্রপাতি, পর্যবেক্ষণের শর্ত প্রভৃতি বিষয় দ্বারা প্রভাবিত। এটির অভাবে অন্যান্য পরিস্থিতি তে … ব্যবহার করা যায় না। শুধু নমুনায়নের পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করা যায়।



৭. ফলাফল উপস্থাপন

গবেষণার ফলাফল টি কোন ফরমাট ব্যবহার করে উপস্থাপন করা হবে তা গবেষণার উদ্দেশ্যর উপর নির্ভর করে। কোন একাডেমীক জার্নালের জন্য সে জার্নালের নিয়ম অনুযায়ী উপস্থাপন করতে হবে। গবেষণা প্রশ্ন এবং যারা রিপোর্ট পড়ছেন তাদের কাছে ফলাফল বোধগম্য হতে হবে।




৮. প্রতিলিপিকরণ
গবেষকগণ অবশ্যই পূর্বে তথ্যের উপর ভিত্তি করে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। গবেষকগণ গবেষণা করেন এ জন্য যে যাতে তারা অন্য তত্ত্বের ভিত্তি বা নীতি তৈরি করতে পারেন। একটি গবেষণা প্রশ্ন ও হাইপোথিসিস দাঁড় করাতে বিভিন্ন গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল কে বিবেচনায় আনা হয়। এর ফলে চেষ্টা করা হয় প্রতিটি গবেষণা বাস্তব তথ্য প্রমাণের উপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়েছে কিনা ।  কখনো দৈব কোন অনুমান দ্বারা যাতে গবেষণা করা না হয়।

Lykken and Kelly, Chase, Tucker  চার টি প্রধান প্রতিলিপিকরণের ধারণ সম্পর্কে বলেছেন। এগুলো হল-

1. Literal Replication
2. Operational 
Replication
3. Instrumental 
Replication
4. Constructive 
Replication

1. Literal Replication
 এখানে প্রতি ক্ষেত্রে পূর্বের বিশ্লেষণ, নমুনায়ন, গবেষণা অবস্থা, পরিমাপের নিয়ম তথ্য বিশ্লেষণ প্রভৃতি সরাসরি কপি করা হয়।

2. Operational Replication
 এখানে আগের গবেষণার নমুনায়ন এবং পরীক্ষার ধাপ গুলো কপি করা হয়। এতে পরীক্ষা করা হয় যে পদ্ধতি গুলো কি আসলেই আগের মত ফলাফল দেয় কিনা।

3. Instrumental Replication

 পূর্বের গবেষণারর নির্ভরশীল পরিমাপ গুলো কপি করার চেষ্টা করা হয়। এতে আসল গবেষণা সাথে পূর্বের গবেষণার পরীক্ষণ অবস্থার তুলনা করা যায়।

4. Constructive Replication
 এ পর্যায়ে আগের গবেষণার পদ্ধতির ভেলেডিটি বা কার্যকরীতা পরীক্ষা করা হয়। এতে পরীক্ষা করা হয় যে পূর্বের গবেষণায় যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে তা এখন চলবে কিনা। এখানে পূর্বের গবেষণা পদ্ধতির সাথে বর্তমান গবেষণার পরিমাপ ও পর্যবেক্ষণ ভিন্ন হয়।

লেখক : শিক্ষার্থী
৪র্থ বর্ষ( ২১ তম ব্যাচ )
যোগাযোগওসাংবাদিকতা বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

0/Post a Comment/Comments