বাউফল উপজেলা পরিচিত

বাউফল উপজেলা (পটুয়াখালী জেলা)  আয়তন: ৪৮৬.৯১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°১৯´ থেকে ২২°৩৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৫´ থেকে ৯০°৪০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বাকেরগঞ্জ ও ভোলা সদর উপজেলা, দক্ষিণে দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলা, পূর্বে ভোলা সদর, বোরহানউদ্দিন ও লালমোহন উপজেলা, পশ্চিমে পটুয়াখালী সদর ও বাকেরগঞ্জ উপজেলা।
জনসংখ্যা ৩০৪৯৫৯; পুরুষ ১৫২৩৮৪, মহিলা ১৫২৫৭৫। মুসলিম ৭৮৫১৭, হিন্দু ২৬৩৯৮, বৌদ্ধ ১৭ এবং অন্যান্য ২৭।
জলাশয় প্রধান নদী: তেঁতুলিয়া ও কালাইয়া।
প্রশাসন বাউফল থানা গঠিত হয় ১৮৭৪ সালে এবং ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।
উপজেলা
পৌরসভাইউনিয়নমৌজাগ্রামজনসংখ্যাঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)শিক্ষার হার (%)
শহরগ্রামশহরগ্রাম
-১৪১৩৪১৪৬১৪৬৭২২৯০২৮৭৬২৬৬২.২৫২.১
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি)মৌজালোকসংখ্যাঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)শিক্ষার হার (%)
৭.৮৫১৪৬৭২১৮৬৯৬২.২০
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোডআয়তন (একর)লোকসংখ্যাশিক্ষার হার (%)
পুরুষমহিলা
আদাবাড়ীয়া ৫৬২২৪৭৩৮৯৭৭৭৬৪৯.২৪
কনকদিয়া ৬৫৬৩৭৯১০০৬৮১০৮৭১৫৯.৪০
কাঞ্চিপাড়া ৪৭৬৪৭৭৮২৮৮৮৮১৪৫৮.৭৭
কালাইয়া ৫৩১১৬৯৯১৩২৪১১২৩৫৫৪৪.৪৭
কালীসুরি ৫৯৬৭৩৫১১৩৮৭১১৭৯৭৬২.৩৯
কেশবপুর ৭১৮৯০৪১৩৪৪৯১৩১৩১৫১.৪৮
দাসপাড়া ৩৫৫৫২২১১৯৮৬১১৮৬৭৪৮.৪০
ধুলিয়া ৪১৬৫৬৭৮৩৭৫৭৯২৩৫৪.৩৯
নোয়ামালা ৮৩৬৩৫৩৯৪৪৩৯১৬৪৫২.৭৯
নাজিরপুর ৮৯১৩৩৫৬১৪০২১১৪২৫৩৩৮.০৪
বগা ১১৭০৪১১১২৩১১১১৭৬৫১.৮৫
বাউফল ২৯৭২৩৭১৪৬৯০১৩৭৩৯৫৭.৮২
মদনপুর ৭৭৫৪৮৮৯১২০৯১৫৮৫৮.৩৪
সূর্যমনি ৯৫৬১৮১৯৬৯৬১০৫৫১৫৩.৮৯
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ ঘসেটি বেগমের কুঠিবাড়ি (শৌলাগ্রাম, ১৭৫৭), পাকঢাল মিয়া বাড়ি মসজিদ, বাউফল কেন্দ্রীয় কালীবাড়ি মন্দির (১৮৭৫), রাজেন্দ্র মহেন্দ্র বাবুর কাচারি, দাসপাড়ায় সোমের কাচারি, কালীসুরিতে সৈয়দ আরেফিনের মাযার, বাউফলে মহেন্দ্র পাগলার আশ্রম, কালাইয়ায় তমীরের দরগাহ, কানাই-বলাইর দীঘি, কমলারানীর দীঘি, পোনাহুরা শিবপূজার স্নানতীর্থ, সুলতান ফকিরের মাযার (বাউফল), ঢোল সমুদ্রের দীঘি, মদনপুরা শিকদার বাড়ির অন্ধকূপ, রাজাপুরের দেয়াল, নারায়ণপুর রাজবাড়ি।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি এই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ এক গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্টি করে। বাউফলের কাছিপাড়ায় এম এ মজিদ বাচ্চু মিয়ার নেতৃত্বে এক বাহিনী গঠন করা হয় এবং তারা সে অঞ্চলে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ২৫ মে পটুয়াখালী থেকে কবাই নদীতে আসা পাকবাহিনীর একটি গান বোট মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। পাকবাহিনীর হামলার বিরুদ্ধে উপজেলার অধিবাসীরা শহরে ও গ্রামে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং সম্মুখ লড়াইয়ে ও গেরিলা যুদ্ধে পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করে। পঞ্চম আলীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ৫ জুন বাউফলের কালীসুরি বন্দরে রাজাকারদের ক্যাম্প আক্রমন করে কয়েকজন রাজাকারকে হত্যা করে। কালীসুরি বন্দরে একটি লঞ্চ আক্রমণ করে কয়েকজন পাকসেনা ও পুলিশকে হত্যা করে। পাকসেনারা মদনপুর ও ধুলিয়াতে ৩৫ জন লোককে হত্যা করে এবং বহু ঘরবাড়ি  জ্বালিয়ে দেয়। ৮ ডিসেম্বর বাউফল পাকসেনা মুক্ত হয়।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৭৫০, মন্দির ১৬০, মাযার ২, দরগাহ ১, আশ্রম ১, তীর্থস্থান ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: কালীসুরির ছৈয়দুল আরেফীনের (রঃ) মাযার ও সংলগ্ন মসজিদ, শৌলার মাওলানা এলাহী বকশের (রঃ) মাযার, কচুয়ার রাজবাড়ি মন্দির।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫২.৬%; পুরুষ ৫৬.৫%, মহিলা ৪৮.৮%। বিঞ্জান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১, কলেজ ১০, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ১, নার্সিং ইনস্টিটিউট ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২২, মাদ্রাসা ৭২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: পটুয়াখালী বিঞ্জান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাউফল ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৬), কাঞ্চিপাড়া মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ মিয়া ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৫), কেশবপুর কলেজ (১৯৭২), মাধবপুর ডিপ্লোমা কলেজ (২০০৫), ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার মহিলা কলেজ (১৯৯৭), বাউফল মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৮৫), বাউফল হাইস্কুল (১৯১৯), বীরপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২১), কাছিপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৮), ধুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৩৮), বগা ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৫০), ভরিপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৫০), ওবায়দিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৩০)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী পাক্ষিক তেঁতুলিয়া (অবলুপ্ত)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ৩৭, মহিলা সংগঠন ৩০, ক্রীড়া সংগঠন ২০, শিল্পীগোষ্ঠী ২, প্রেসক্লাব ১, নাট্যদল ১, সঙ্গীত বিদ্যালয় ১, সিনেমা  হল ৩, কমিউনিটি সেন্টার ৮।
দর্শনীয় স্থান চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের রাজধানী (বাকলা-কচুয়া), স্থানান্তরিত রাজধানী (রাজনগর), শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের পৈত্রিক নিবাস কাজী বাড়ি (বিলবিলাস), কমলা রানীর দিঘি (কালাইয়া), ঘসেটি বেগমের কুঠিবাড়ি (তেঁতুলিয়া নদীর তীরে) ও কানাই-বলাই দিঘি (কাঞ্চিপাড়া)।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৮.৫২%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৫৬%, শিল্প ১.১১%, ব্যবসা ১৪.৪৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৭৯%, চাকরি ১১.৯৪%, নির্মাণ ৩.১৬%, ধর্মীয় সেবা ০.২১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩২% এবং অন্যান্য ১২.৯৩%।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, আলু, ডাল, ছোলা, মরিচ, তৈলবীজ, চীনাবাদাম, পান, ধনে, শাকসবজি।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, নারিকেল, পেঁপে, সুপারি, লেবু।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৮০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৬০.২২ কিমি; ব্রিজ ২৯০; কালভার্ট ৪১৫।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি।
শিল্প ও কলকারখানা পাটকল, বরফকল, চালকল, করাতকল, ইটভাটা, ওয়েল্ডিং কারখানা।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৪৪, মেলা ৪। উল্লেখযোগ্য হাটবাজার ও মেলা: কালাইয়া হাট, কালীসুরি হাট, বগা হাট, বাহেরচর হাট, কনকদিয়া হাট, নারায়ণপুর হাট, বিলবিলাস হাট, বাউফল বাজার, আদাবাড়িয়া হাট, মমিনপুর হাট, ধুলিয়া বাজার এবং কাঞ্চিপাড়ার কানাই-বলাই দীঘির পাড়ের মেলা।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   ধান, চাল, ডাল, মরিচ, চামড়া, মৃৎশিল্প সামগ্রী, মাছ।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার ২২.১৬% (শহরে ৩২.০৭% এবং গ্রামে ২১.৬৮%) পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ  মৎস্য এবং বনজ সম্পদ প্রধান।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৮.৬৭%, পুকুর ৭.৫১%, ট্যাপ ০.২৪% এবং অন্যান্য ৩.৫৮%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ১৪.৮৬% (গ্রামে ১৩.৭৪% ও শহরে ৩৭.৮৮%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৭৬.৯২% (গ্রামে ৭৭.৭০% ও শহরে ৬০.৯৫%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৮.২২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, হাসপাতাল ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৪, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১৮, শিশুসদন ৪, পশু হাসপাতাল ১।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৫৮৪ ও ১৮২২ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় এবং ১৮৭৬ সালের বন্যায়  বহু লোকের প্রাণহানি ঘটে এবং ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এনজিও আশা, ব্র্যাক, কেয়ার, আরডিএস। [রবীন্দ্রনাথ দাস]
তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বাউফল উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।

0/Post a Comment/Comments