বাংলাদেশে ওষুধের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় মডেল ফার্মেসি ও মডেল মেডিসিন শপ

বাংলাদেশে ওষুধের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় মডেল ফার্মেসি ও মডেল মেডিসিন শপ

 অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছা

কথায় বলে ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’। আর জনগণের এই সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকল্পে সহনীয় মূল্যে গুণ ও মানসম্পন্ন ওষুধ, স্বাস্থ্যসেবা, উচ্চমানের স্বাস্থ্যশিক্ষা, নির্দিষ্টসংখ্যক চিকিত্সক ও চিকিত্সাকর্মী প্রয়োজন। দেশে বিদেশে সর্বত্রই সব সমাজে সুচিকিত্সা প্রদানে প্রয়োজন হয় ওষুধ। তবে ওষুধের প্রকৃত উপকার মানুষ সব সময় পায় না, যদি ওষুধটি গুণ ও মানসম্পন্ন না হয়। ওষুধের সঠিক কার্যকারিতা নির্ভর করে অনেকগুলো বিষয়ের ওপর, যেমন—সঠিক ওষুধ নিরূপণ, মাত্রা ও ডোজেজ ফর্ম নির্ধারণ, সঠিক পথে ওষুধ প্রয়োগ, কীভাবে এবং কখন ওষুধ খেতে হবে সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা এবং ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান থাকা ইত্যাদি। এসব ঠিক থাকলেও ওষুধের উপকারের পথে আরেকটি অন্তরায় রয়েছে, সেটি হচ্ছে—নকল ও ভেজাল ওষুধ।
বাংলাদেশে ওষুধের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার সহায়তায় ইতোমধ্যে কিছুটা পথ আমরা এগিয়েছি। Department for International Development (DFID)-এর অর্থায়নে Management Sciences for Health (MSH)-এর সহায়তায় ‘বাংলাদেশ ফার্মেসি মডেল ইনিশিয়েটিভ’-এর অধীনে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘অ্যাক্রিডিটেটেড ড্রাগ সেলার শপ’ স্থাপন ও অনুমোদনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০১৬ সালের প্রথমদিকে। সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ‘Designing Implementation Strategy for Accredited Drug Seller Model in Bangladesh’ প্রকল্পটি গ্রহণ করে। এই প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে দাতা সংস্থা DFID এবং বাস্তবায়ন করে MSH। এই প্রকল্পের আওতায় সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে, বাংলাদেশের ব্যক্তিমালিকানায় যেসব খুচরা ফার্মেসি পরিচালিত হচ্ছে সেগুলোকে দুইটি স্তরে ভাগ করা হবে—প্রথম স্তর মডেল ফার্মেসি, দ্বিতীয় স্তর—মডেল মেডিসিন শপ।
মডেল ফার্মেসি হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো মডেল ফার্মেসিতে একজন বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট থাকবেন, যার দায়িত্বে থাকবে পুরো ফার্মেসিটি। ফার্মেসির আয়তন হবে ন্যূনতম ৩০০ বর্গফুট এবং থাকবে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। ওষুধ বিক্রয়ের সঙ্গে রোগীকে ওষুধ সেবনের পদ্ধতি বলে দেওয়া এবং নিয়মিত সঠিকভাবে ওষুধ গ্রহণ করার জন্য কাউন্সিলিং করা।
মডেল মেডিসিন শপ মূলত বাংলাদেশের সর্বত্র সঠিক ওষুধসেবা নিশ্চিত করার জন্যে মডেল ফার্মেসি থেকে কিছুটা শিথিল শর্ত নিয়ে তৈরি। মডেল মেডিসিন শপের আয়তন নির্ধারণ করা হয়েছে ন্যূনতম ১২০ বর্গফুট। গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের অপ্রতুলতার কারণে গ্রেড বি (ডিপ্লোমা) ফার্মাসিস্ট বা ন্যূনতম গ্রেড সি ফার্মাসিস্ট থাকতে হবে। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের কিছু স্বল্পমূল্যের প্রস্তুতি রাখতে হবে; যেমন, সিলিং ফ্যান ও একজস্ট ফ্যান। ওষুধ বিক্রয়ের সঙ্গে রোগীকে ওষুধ সেবনের পদ্ধতি বলে দেওয়া এবং নিয়মিত সঠিকভাবে ওষুধ গ্রহণ করার জন্য কাউন্সিলিং করা।
সার্বিকভাবে মডেল ফার্মেসি আর মডেল মেডিসিন শপের পরিচালনার নিয়মকানুন নিয়ে একটি স্ট্যান্ডার্ডও তৈরি করা হয়, যা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটিতে উত্থাপিত হয় এবং অনুমোদিত হয়।
সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক শহর ও গ্রামে অনেক ফার্মেসিতে সক্ষমতা যাচাইয়ের পর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে ‘মডেল ফার্মেসি’ ও ‘মডেল মেডিসিন শপ’ উদ্বোধন করা হয় এবং লোগো প্রদান করা হয়। তবে তার আগে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের ফার্মেসিতে কাজের জন্য প্রস্তুত করার লক্ষ্যে উন্নত মানের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
এই প্রশিক্ষণে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোকপাত করা হয় :
১। শহর বা গ্রামে যেখানে ‘মডেল ফার্মেসি’ ও ‘মডেল মেডিসিন শপ’ অনুমোদন করা হবে—এলাকায় তার অবস্থান, রুমসংখ্যা, আকার, আলো-বাতাসের ব্যবস্থা, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আছে কি না এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত কি না।
২। শর্তানুযায়ী প্রতিটি ফার্মেসির মালিকানা বৈধ হতে হবে এবং সেখানে কর্মরত সকল ওষুধ বিক্রেতাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা যথাযথভাবে থাকতে হবে।
৩। ওষুধের সুষ্ঠু সংরক্ষণের জন্য তাকের ব্যবস্থা, চলাফেরার জন্য জায়গা, আলো-বাতাস ও তাপনিয়ন্ত্রণব্যবস্থা আছে কি না।
৪। রোগীকে ওষুধ প্রদান-সম্পর্কিত সেবা দানের ক্ষেত্রে চিকিত্সকের ব্যবস্থাপত্রে রোগ ও রোগীর বয়স অনুযায়ী বিক্রেতার ওষুধের সঠিকতা নিরূপণের সক্ষমতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার ক্ষমতা, প্রয়োজনীয় রেফারেন্স বইয়ের মজুত থাকা এবং ফার্মেসিতে রোগী বা রোগীর প্রতিনিধিদের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ইত্যাদি থাকা বাঞ্ছনীয়।
৫। মালিকপক্ষ যেন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লাভজনক অবস্থানে থাকে তাই রোগীদেরকে ওষুধ গ্রহণের সঠিক পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি তাদের রক্তচাপ মেপে দেওয়া, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নির্ণয় করার ব্যবস্থা রাখা।
৬। বাংলাদেশ ফার্মেসি মডেল ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের সহায়তায় ঔষধ প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী কর্মরত সকল গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট, ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট ও গ্রেড-সি সার্টিফিকেটধারী ব্যক্তিদের জন্য নির্ধারিত পোশাক পরিধান নিশ্চিত করা।
৭। রোগীকে ওষুধ প্রদান-সম্পর্কিত সেবাদানের সকল তথ্য মজুত রাখতে হবে—যেমন চিকিত্সকের ব্যবস্থাপত্র, ওষুধসংক্রান্ত তথ্য, নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা কর্তৃক পরিদর্শনের তথ্যসহ অন্যান্য সকল তথ্য প্রদান।
কিন্তু যে উদ্দেশ্যে ও লক্ষ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলো, তা পুরোপুরি পূর্ণ হয়নি। এই না হওয়ার পেছনের কিছু কারণ হচ্ছে—
প্রকল্পের পরিকল্পনার সঙ্গে বাস্তবতার ব্যবধান, যেমন ধারণা করা হয়েছিল গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট-এর মাধ্যমে জনগণকে উন্নত ওষুধ সেবা প্রদান করা হলে স্বাভাবিকভাবেই ফার্মেসির গ্রাহকের সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং মডেল ফার্মেসির মালিকের সম্মানও বৃদ্ধি পাবে। স্বাভাবিকভাবেই মুনাফা বেড়ে যাবে। এই পদ্ধতিতে সাফল্য পাওয়ার জন্য প্রয়োজন যথেষ্ট সময়। কিন্তু তা না থাকায় বেশির ভাগ মালিক অল্প দিনের মধ্যেই গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদেরকে তাদের ফার্মেসিতে রাখতে অনাগ্রহ দেখায়, ফলে এই অল্প সময়ে মালিকদের সঙ্গে ফার্মাসিস্টদের ভালো পেশাগত কার্যকর সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। মালিকগণ ফার্মেসিতে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিযুক্ত করা অর্থের অপচয় বলে মনে করেন। অনেক মালিক শুধু সরকারি লোগো ও সাইনেজপ্রাপ্ত দোকানের সঙ্গে থাকার উদ্দেশ্যে এই প্রকল্পের আওতায় আসে। ফলে তাদের ফার্মেসিতে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট বেশি দিন টিকতে পারেনি।
অপরপক্ষে, ফার্মেসিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্টরা স্বল্প সময়ের মধ্যে মডেল ফার্মেসির মালিকদের কাছে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ফার্মাসিস্টদের উপকারিতাসমূহ সঠিকভাবে উপস্থাপন করার সুযোগ পাননি। তারা নতুন পরিবেশে তৈরি করতে পারেনি নিজের অবস্থান। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা দ্রুততার সঙ্গে ‘মডেল ফার্মেসি’ ও ‘মডেল মেডিসিন শপ’ বিভিন্ন শহরে ও গ্রামে স্থাপন করার প্রতি ছিল আগ্রহী। ফলে লোকবলের অভাবে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করতে না পারা হয়ে দাঁড়ায় নতুন চ্যালেঞ্জ। এদিকে দাতা সংস্থার অনুদান আসতে লেগে যায় ১৮ মাসের মতো সময়। ফলে এই সময় কারিগরি সহায়ক সংস্থা পারেনি কোনো সহযোগিতা দিতে। প্রকল্পটির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে, দাতা সংস্থা DFID আর্থিক অনুদানে ও MSH-এর সহায়তায় Better Health in Bangladesh: Technical Assistance to 4th Health, Population and Nutrition Sector Programme (HPNSP) প্রকল্পটি গ্রহণ করে সরকার। HPNSP প্রকল্পের মোট ২০টি Technical Assistance-এর একটি হলো Accredited Drug Seller (ADS), যা পূর্ববর্তী ফার্মেসি মডেল ইনিশিয়েটিভের ধারাবাহিকতা। এই প্রকল্পের মেয়াদ সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে মার্চ ২০২০ পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ১১টি জেলা।
বর্তমান প্রকল্পে ওষুধের দোকানের প্রাথমিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে প্রকল্প উন্নীতকরণে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য প্রথমে—১। ওষুধের দোকানগুলোর প্রাথমিক মূল্যায়ন করা হয়েছে। ২। প্রাথমিক মূল্যায়ন এবং প্রশিক্ষণ পরবর্তী মূল্যায়নের ইলেকট্রনিক টুল তৈরি হয়েছে। ৩। ট্রেনিং পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ৪। গ্রেড-সি ড্রাগ ডিসপেন্সারদের প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল বাংলায় সংস্করণ ও প্রশিক্ষণ উপযোগী করে মুদ্রণ করা হয়েছে। ৫। সব গ্রেড-সি ড্রাগ ডিসপেন্সারদের ‘মডেল ফার্মেসি’ ও ‘মডেল মেডিসিন শপ’ পরিচালনার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। ক) প্রকল্প এলাকাভুক্ত জেলা ও উপজেলাসমূহে খুচরা ওষুধের দোকানে কর্মরত ফার্মাসিস্টদের ‘মডেল ফার্মেসি’ ও ‘মডেল মেডিসিন শপ’ পরিচালনায় প্রশিক্ষণ প্রদান। লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ৫০০ জন। ৬. প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঐ ৫ হাজার ৫০০ গ্রেড-‘সি’ ড্রাগ ডিসপেন্সাররা যেসব খুচরা ওষুধের দোকানে কর্মরত, সেগুলো থেকে মূল্যায়ন ও বাছাইয়ের মাধ্যমে ‘মডেল ফার্মেসি’ ও ‘মডেল মেডিসিন শপ’-এ উন্নিত করে ওষুধ প্রশাসন কর্তৃক Accreditation প্রদান ব্যবস্থা। ৭। সুষ্ঠুভাবে ফার্মেসি পরিচালনার জন্য একটি ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার তৈরি ও বিনা মূল্যে প্রদান। ৮। সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের প্রকল্প সম্পর্কে কার্যকরভাবে অবহিত করা। ৯। বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের ওয়েবসাইট ও ডাটাবেজের অটোমেশান এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট ও ডাটাবেজের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা। ১০। প্রকল্পের ব্র্যান্ডিংও এর প্রচারণা কার্যক্রমে থাকবে।
প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বেটার হেলথ ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের সার্বিক তত্ত্বাবধানের জন্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাস্থ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি কার্যকর করা হয়েছে এবং ‘বেটার হেলথ ইন বাংলাদেশ’-এর অ্যাক্রিডিটেড ড্রাগ সেলার কার্যক্রমের প্রকল্পটির সার্বিক তত্ত্বাবধানের জন্য ঔষধ প্রশাসনের অধীনে মহাপরিচালকের নেতৃত্বে কার্যকর করা হয়েছে একটি টেকনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটি। বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতি এই ম্যানেজমেন্ট কমিটির অন্তর্ভুক্ত।
প্রশ্ন থেকে যায় এর ভবিষ্যত্ নিয়ে। যার সবকিছু নির্ভর করছে একটি ‘যদি’র ওপরে। অর্থাত্ প্রকল্পের সব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ‘যদি’ পূরণ হয়, তাহলে বাংলাদেশে অ্যাক্রিডিটেড ড্রাগ সেলারের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিকের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করা, ওষুধের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা, ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধ করা, প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত তথ্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে জমা দেওয়া, সঠিক তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ করা, রোগীদের জন্য ওষুধের সঠিক মাত্রা ও ডোসেজ ফরম নির্ধারণ করা, ভুল পথে ওষুধ প্রয়োগ যাতে না হয়, সে পরামর্শ রোগীকে প্রদান করা, কীভাবে এবং কখন ওষুধ খেতে হবে সে সম্পর্কে রোগীকে বুঝিয়ে দেওয়া ইত্যাদি সম্ভব হবে।
আমরা সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। কারণ, বর্তমানে গৃহীত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ফলে, আগামী দিনে গ্রেড ‘এ’ ও গ্রেড ‘সি’ ড্রাগ ডিসপেন্সারদের দ্বারা ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ সব উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও খুচরা ওষুধের দোকানের মাধ্যমে জনগণকে ওষুধ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে সরকারের কাছে এটাও আমরা আশা করব, কমিউনিটি ফার্মেসি বা ব্যক্তি মালিকানায় এলাকাভিত্তিক ‘মডেল ফার্মেসি’ ও ‘মডেল মেডিসিন শপ’ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় ‘হসপিটাল ফার্মাসিস্ট’ ও ‘ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট’ নিয়োগ করে জনগণকে সত্যিকার অর্থে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় নিয়ে আসবে। সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা তখনই জনগণ নিশ্চিতভাবে পাবে, যখন সমন্বিতভাবে রোগীকে চিকিত্সক প্রদান করবে ‘মেডিক্যাল কেয়ার,’ নার্স প্রদান করবে ‘নার্সিং কেয়ার’ এবং ফার্মাসিস্ট প্রদান করবে ‘ফার্মাসিউটিক্যাল কেয়ার’।
লেখক :অধ্যাপক, ফার্মেসি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

0/Post a Comment/Comments