শিক্ষা কী? শিক্ষার উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা কী?

শিক্ষা কী? শিক্ষার উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা কী?

দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ শিক্ষাকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। শিক্ষার উদ্দেশ্যে বর্ণনা করে গেছেন। প্রাচীন দার্শনিক এরিস্টোটল, সক্রেটিস ও প্লেপটো শিক্ষার তাৎপর্য বর্ণনা করে গেছেন। সেই থেকে পরবর্তী সকল যুগের চিন্তাবিদরাই শিক্ষা সম্পর্কে কথা বলেছেন। শিক্ষার পরিচয় এবং সংজ্ঞা দেবার চেষ্টা করেছেন।

আল কুরআন থেকে জানা যায়, নবীগণ শিক্ষা প্রচারের উদ্দেশ্যেরই প্রেরিত হয়েছিলেন। তাঁরা শিক্ষার তাৎপর্য এবং লক্ষ্য উদ্দেশ্য সুস্পষ্টভাবে নিজ নিজ জাতির সামনে পেশ করেছেন। সর্বেশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও শিক্ষক হিসেবেই প্রেরিত হয়েছিলেন। তাঁর উপর অবতীর্ণ আল কুরআন এবং তাঁর নিজের বাণী হাদীস থেকে শিক্ষার তাৎপর্য এবং লক্ষ্য উদ্দেশ্য দিবালোকের মতো প্রতিভাত হয়।

১ শিক্ষা কী?
এবার আমরা জানতে চেষ্টা করবো শিক্ষা কি? শিক্ষার সংজ্ঞা কি? তাৎপর্য কি? আর প্রকৃতপক্ষে শিক্ষা বলতে কি বুঝায়? প্রথমে কয়েকটি শব্দ ব্যাখ্যা করতে চাই। যেসব শব্দ ব্যবহার করে শিক্ষা বুঝানো হয় সেগুলোর বিশ্লেষণ শিক্ষার মর্ম বুঝার সহায়ক হবে। যেমন কোনো বস্তুকে বুঝতে হলে তার উপাদান বিশ্লেষণ করে দেখা একান্ত জরুরি।

ইংরেজি ভাষায় শিক্ষার প্রতিশব্দ হলো Education. Education শব্দের সাধারণ আভিধানিক অর্থ হলো : শিক্ষাদান ও প্রতিপালন, শিক্ষাদান, শিক্ষ। Educate মানে : to bring up and instruct, to teach, to train অর্থাৎ প্রতিপালন করা ও শিক্ষিত করিয়া তোলা, শিক্ষা দেওয়া, অভ্যাস করানো।২

Joseph T. Shipley তাঁর Dictionary of word Origins এ লিখেছেন, 
Education শব্দটি এসেছে ল্যাটিন Edex এবং Ducer-Duc শব্দগুলো থেকে। এ শব্দগুলোর শাব্দিক অর্থ হলো, যথাক্রমে বের করা, পথ প্রদর্শন করা। আরেকটু ব্যাপক অর্থে তথ্য সংগ্রহ করে দেয়া এবং সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করে দেয়া।
একজন শিক্ষাবিদ লিখেছেন,
Education শব্দের বুৎপত্তি অনুযায়ী শিক্ষা হলো শিক্ষার্থীর মধ্যকার ঘুমন্ত প্রতিভা বা সম্ভবনার পথ নির্দেশক।

আরেকজন শিক্ষাবিদ লিখেছেন :
Education denotes the realization of innate human potentialities of individuals through the accumulation of knowledge.4

কুরআন হাদীস এবং আরবী ভাষায় শিক্ষার জন্যে যেসব পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, সে শব্দগুলো এবার বিশ্লেষণ করে দেখা যাক। এ ক্ষেত্রে পাঁচটি শব্দের ব্যবহার সুবিদিত। সেগুলো হলো : ১. তারবীয়াহ (تربية) ২. তালীম (تعليم) ৩. তাদীব (تأديب) ৪. তাদরীব (تدريب) ৫. তাদরীস (تدريس) ।

এই শব্দগুলোর আভিধানিক অর্থ নিন্মরূপ :

تربية শব্দটি নির্গত হয়েছে ربو শব্দ থেকে। ربو মানে : Increase, to grow. to grow up, to exceed, to raise, rear, bring up, to educate, to teach, instruct, to bread, to develop, augment.

আর تربية মানে : Education, up bringing Instruction, Pedagogy, Breeding, Raising.

تعليم শব্দটি গঠিত হয়েছে علم থেকে। তালীম (تعليم) মানে : Information, Advice, Instruction, Direction, Teaching, Training, Schooling, Education, Apprenticeship.৬

تأديب [তাদীব] শব্দটি গঠিত হয়েছে أدب [আদব] শব্দ থেকে। আদব (أدب) মানে : Culture, Refinement, Good breeding, Good, manners, Social graces, Decorum. এ অর্থবহ أدب [আদব] শব্দটি থেকেই গঠিত হয়েছে تأديب শব্দ। তাই তাদীব শব্দের মধ্যে একদিকে যেমন এই সব অর্থও নিহিত রয়েছে, অন্যদিকে তাদীব দ্বারা Education এবং Discipline ও বুঝায়।৭

تدريب [তাদরীব] মানে : Habitation, Accustoming, Practice, Drill, Schooling, Training, Coaching, Tutoring.8

تدريس [তাদরীস] শব্দটি গঠিত হয়েছে درس [দারস্] শব্দ থেকে। তাদরীস মানে : To study, to learn, to teach, to instruct, to wipe out, to blot out, to thrash out, tution.9

আভিধানিক অর্থ থেকেই পরিষ্কার হলো, এই পরিভাষাগুলো ব্যাপক অর্থবোধক। বিশেষ করে প্রথম ও দ্বিতীয় শব্দদ্বয় অত্যন্ত প্রশস্ত ভাব বাঞ্চনাময়। তৃতীয় শব্দটি ব্যবহৃত হয় বিশেষভাবে আচরণগত সুশিক্ষাদান অর্থে। চতুর্থ শব্দটি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাংখিত অভ্যাস গড়ে তোলা অর্থে ব্যবহৃত হয়। পঞ্চম শব্দটি ব্যবহৃত হয় পঠন, পাঠন, শিক্ষাদান, পাঠদান এবং শিক্ষাদানের মাধ্যমে অনাকাংখিত অভ্যাস ও অবস্থা দূরীকরণ অর্থে।

এই পরিভাষাগুলো থেকে শিক্ষার সুদূর প্রসারী উদ্দেশ্য ও ব্যাপক পরিধি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। এই পাঁচটি পরিভাষার মর্মার্থ সাজিয়ে লিখলে ইসলামের দৃষ্টিতে শিক্ষার তাৎপর্য পরিষ্কারভাবে বুঝা যাবে। আভিধানিক অর্থ থেকে এই পরিভাষাগুলোর মর্ম নিন্নমরূপ দাঁড়ায় :
-------------------------------------------------------------------------
৬. পূর্বোক্ত।
৭. পূর্বোক্ত গ্রন্থ।
৮. উক্ত গ্রন্থ।
৯. উক্ত গ্রন্থ।
১. প্রবৃদ্ধি দান করা/বৃদ্ধি করা/বড় করে তোলা।
২. উন্নত করা/উঁচু করা/ অগ্রসর করানো।
৩. পূর্ণতা দান করা/মহত্তর/ মহান করা/প্রস্ফুটিত করা।
৪. জাগিয়ে তোলা/উত্থিত করা/ উজ্জীবিত করা।
৫. নির্মাণ করা/প্রতিষ্ঠিত করা/গড়ে তোলা।
৬. লালন পালন করা/ প্রতিপালন করা।
৭. শিক্ষাদান করা/শিক্ষিত করে তোলা।
৮. অভ্যাস করানো/ অনুশীলন করানো/ হাতে কলমে শিক্ষা দেয়া/চর্চা করানো/নিয়মানুবর্তিতা শেখানো।
৯. পরামর্শ দেয়া/শিক্ষাপূর্ণ আদেশ দেয়া/জ্ঞাপক করা/উপদেশ দেয়।
১০. অনাকাংখিত আচরণাদি থেকে বিরত করার উদ্দেশ্যে শাসন করা/সুসভ্য করে গড়ে তোলার জন্যে শাসন করা।
১১. অন্তর্নিহিত শক্তি বিকশিত করা/সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করা/জন্মগত শক্তি, প্রতিভা ও যোগ্যতাকে প্রস্ফুটিত ও উদ্দীপ্ত করে দেয়া।
১২. সম্প্রসারিত করা/একটু একটু করে খোলা/বিকশিত করা।
১৩. পথ প্রদর্শন করা/পথ নির্দেশনা দান করা/সঠিক পথের সন্ধান দেয়া।
১৪. প্রেরনা দেয়া/উদ্বুদ্ধ করা/উদ্দীপ্ত করা/উৎসাহ প্রদান করা।
১৫. সন্ধান দেয়া/সংবাদ দেয়া/তথ্য প্রদান করা।
১৬. শিক্ষাদান পূর্বক নিয়মানুগ করানো।
১৭. আনুষ্ঠানিক বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাদান।
১৮. শিক্ষা নবিশিতে ভর্তি হওয়া।
১৯. সংস্কার করা/সংস্কৃতবান করা/সুসভ্য করা/সংশোধন করা/ঘসে মেজে পরিচ্ছন্ন করা/নির্মল করা।
২০. শালীনাতা, ভদ্রতা শোভনতা, শিষ্টাচার এবং সম্মানজনক ও মর্যাদা ব্যঞ্জক আচার ব্যবহার শেখানো।
২১. ভদ্র, নম্র, বিনয়ী ও অমায়িক আচরণ শেখানো।
২২. আদব কায়দা শিক্ষাদান/উন্নত জীবন প্রণালী শেখানো।
২৩. উন্নত নৈতিক আচরণ শিক্ষাদান/সচ্চরিত্র শিক্ষাদান।
২৪. প্রথা ও রীতিনীতি অভ্যস্ত করানো।
২৫. মানসিক, নৈতিক ও শারীরিক ধাত পরিগঠন করা।
২৬. কর্মদক্ষ করানো/কর্মে অভ্যস্ত/ কৌশল শেখানো/ নিপুণতা অর্জন করা।
২৭. অধ্যায়ন করা/দক্ষতা অর্জনের জন্যে মনোনিবেশের সাথে পাঠ করা/স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে অধ্যয়ন করা।
২৮. বিচার বিবেচনা করা/চিন্তাভাবনা করা/গবেষণা করা/পুংখানুপুংখ পরিক্ষা করা/অনুসন্ধান করা।
২৯. উদ্ভাবন করা।
৩০. বিদ্যার্জন করা/পাণ্ডিত্য অর্জন করা/শেখা/জানা/দক্ষতা অর্জন করা।

..............................................

আরবী ও ইসলামী পরিভাষায় শিক্ষার জন্যে যে শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়, এ হলো সেগুলোর বাংলা অর্থ ও মর্ম। এর মধ্যে একেবারে পাঠদান ও পাঠগ্রহণ থেকে আরম্ভ করে মানসিক, আত্মিক, নৈতিক ও শারীরিক পরিপূর্ণ বিকাশ উন্নয়ন, পরিশীলতা ও দক্ষতা অর্জনের ব্যাপকতা রয়েছে। শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও মনীষীদের মতামত আলোচনা করলেও দেখা যায়, তাঁদের কেউ কেউ শিক্ষার খুব সংকীর্ণ অর্থ করেছেন। আবার কারো কারো দৃষ্টিতে শিক্ষার পরিচয় পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। মূলত শিক্ষা মানুষের পূরো জীবন পরিব্যপ্ত। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষার ব্যাপকতা পরিব্যাপ্ত। মানুষ তার পূর্ণাঙ্গ জীবনে যা কিছুই আহরণ করে, আত্মস্থ করে, তা শিক্ষার মাধ্যমেই করে। যে কোনো জ্ঞানার্জনের মাধ্যমই হলো শিক্ষা।

২ শিক্ষার উদ্দেশ্য :

প্রথমেই দেখা যাক, শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে মনীষীরা কে কি বলেছেন :

জন ডিউই বলেছেন, ‌শিক্ষার উদ্দেশ্য আত্ম উপলদ্ধি।
প্লেটোর মত হলো : শরীর ও আত্মার পরিপূর্ণ বিকাশ ও উন্নতির জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তা সবই শিক্ষার উদ্দেশ্য অন্তর্ভূক্ত।
প্লেটোর শিক্ষক সক্রেটিসের মতে : শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো মিথ্যার বিনাশ আর সত্যের আবিষ্কার।
এরিস্টোটল বলেছেন : শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্যে হলো ধর্মীয় অনুশাসনের অনুমোদিত পবিত্র কার্যক্রমের মাধ্যমে সুখ লাভ করা।
শিক্ষাবিদ জন লকের মতে, শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে সুস্থ দেহে সুস্থ মন প্রতিপালনের নীতিমালা আয়ত্বকরণ।
বিখ্যাত শিক্ষাবিদ হার্বার্ট বলেছেন : শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে শিশুর সম্ভবনা ও অনুরাগের পূর্ণ বিকাশ ও তার নৈতিক চরিত্রের প্রকাশ।
কিন্ডার গার্টেন পদ্ধতির উদ্ভাবক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ফ্রোয়েবেল এর মতে : শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে সুন্দর বিশ্বাসযোগ্য ও পবিত্র জীবনের উপলব্ধি।
কমেনিয়াসের মতে : শিশুর সামগ্রিক বিকাশই শিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। আর মানুষের শেষ লক্ষ্য হবে সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্যে সুখ লাভ করা।
পার্কার বলেছেন : পূর্ণাঙ্গ মানুষের আত্ম প্রকাশের জন্যে যেসব গুনাবলী নিয়ে শিক্ষার্থী এ পৃথিবীতে আগমন করেছে, শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে সেসব গুনাবলীর যথাযথ বিকাশ সাধন।
জীন জ্যাক রুশোর মতে : সুঅভ্যাসে গড়ে তোলাই শিক্ষার উদ্দেশ্য।
Bartrand Russell এর মন্তব্য হলো :
.......The education system we must aim at producing in the future is one which gives every boy and girl an opportunity for the best that exists.
স্যার পার্সীনান বলেছেন : শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো : চরিত্র গঠন, পরিপূর্ণ জীবনের জন্য প্রস্তুতি এবং ভালো দেহ ভালো মন গড়ে তোলা।
ডা: হাসান জামান বলেছেন :প্রত্যয় দীপ্ত মহত জীবন সাধনায় সঞ্জিবনী শক্তি সঞ্চার করাই শিক্ষার উদ্দেশ্য।
ড: খুরশীদ আহমেদের মতে : স্বকীয় সংস্কৃতি ও আদর্শের ভিত্তিতে সুনাগরিক তৈরি করা.........এবং জাতির ধর্ম ও সংস্কৃতিক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন হওয়া উচিত শিক্ষার উদ্দেশ্য।
আল্লামা ইকবালের মতে : পূর্ণাংগ মুসলিম তৈরি করাই হবে শিক্ষার উদ্দেশ্য।

বিখ্যাত দার্শনিক ও ইসলামী চিন্তানায়ক সাইয়েদ মওদূদী (রা) বলেন :

মানুষ কেবল চোখ দিয়েই দেখেনা, এর পেছনে রয়েছে তার সক্রিয় মন ও মগজ। রয়েছে তার একটা দৃষ্টিভংগি ও মতামত। জীবনের একটা উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য আছে তার। সমস্যাবলী নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার একটা প্রক্রিয়া তার আছে। মানুষ যা কিছু দেখে, শুনে এবং জানে, সেটাকে সে নিজের অভ্যন্তরীণ মৌলিক চিন্তা ও ধ্যান ধারণার সাথে সামঞ্জস্যশীল করে নেয়। অতপর সেই চিন্তা ও ধ্যান ধারণার ভিত্তিতেই তার জীবন পদ্ধতি গড়ে উঠে। এই জীবন পদ্ধতিই হলো সংস্কৃতি। যে জাতি একটা স্বতন্ত্র সংস্কৃতি, আকিদা বিশ্বাস ও উদ্দেশ্য লক্ষ্যর অধিকারী এবং যাদের রয়েছে নিজস্ব জীবনাদর্শ, তাদেরকে অব্যশ্যি তাদের নতুন প্রজন্মকে সেই স্বতন্ত্র সংস্কৃতি, আকিদা বিশ্বাস, উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও জীবনাদর্শের রক্ষণাবেক্ষণ এবং তার বিকাশ ও উন্নয়নের যোগ্য করে গড়ে তোলা কর্তব্য। আর সে উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করেই গড়ে তুলতে হবে তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা।১০

১৯৮৯ সালের ২০ নভেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সর্বসম্মতভাবে শিশু অধিকার সনদ গৃহীত হয়। এতে চুয়ান্নটি অনুচ্ছেদ রয়েছে। অনুচ্ছেদ ২৮ শিশু শিক্ষা নিশ্চিত করার দলিল। অনুচ্ছেদ ২৯/১-এ শিক্ষার লক্ষ্য বর্ণনা করা হয়েছে। অনুচ্ছেদটি নিন্মরূপ :

শিক্ষার লক্ষ্য
অনুচ্ছদ : ২৯

১. শরিক রাষ্ট্রসমূহ এ ব্যাপারে সম্মত যে, শিশুদের দিক্ষা দানের ক্ষেত্রে লক্স্য থাকবে-
ক. শিশুর ব্যক্তিত্ব, মেধা এবং মানসিক ও শারীরিক সামর্থের পরিপূর্ণ বিকাশ;
খ. মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার এবং জাতিসংঘ ষোষণায় বর্ণিত নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ :
গ. শিশুর পিতা-মাতা তার নিজস্ব সাংস্কৃতিক সত্তা, ভাষা ও মূল্যবোধ, তার মাতৃভূমি এবং অপরাপর সভ্যতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ :
ঘ. সমঝোতা, শান্তি, সহিষ্ণুতা, নারী-পুরুষের সমানাধিকার এবং সকল মানুষ নৃ-গোষ্টী, জাতীয় ও ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং আদিবাসী লোকজনের মধ্যে মৈত্রীর চেতনার আলোকে একটি মুক্ত সমাজে দায়িত্বশীল জীবনের জন্য শিশুর প্রস্ততি :
ঙ. প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ।

এই অনুচ্ছেদের বিশ্লেষণের করলে দেখা যায়, জাতি সংঘ সাধারণ পরিষদের দৃষ্টিতে শিশুর লক্ষ্য হলো :

‌১. ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ:
২. মেধার পরিপূর্ণ বিকাশ;
৩. মানসিক শক্তির পরিপূর্ণ বিকাশ;
৪. শারীরিক সামর্থের পরিপূর্ণ বিকাশ;
৫. মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ;
৬. মৌলিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ;
৭. জাতিসংঘ ঘোষণার বর্ণিত নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ;
৮. পিতা-মাতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ;
৯. নিজস্ব সাংস্কৃতিক সত্তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ;
১০. নিজস্ব ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ;
১১. নিজস্ব মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ;
১২. মাতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ;
১৩. অপরাপর সভ্যতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ;
১৪. সমঝোতা, শান্তি, সহিষ্ণুতা, নারী-পুরুষের সমানাধিকার এবং সকল মানুষ. নৃ-গোষ্ঠী, জাতীয় ও ধর্মীয় গোষ্ঠ এবং আদিবাসী লোকজনের মধ্যে মৈত্রীর চেতনার আলোকে একটি মুক্ত সমাজে দায়িত্বশীল জীবনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ;
১৫. প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ।

শিক্ষার মান কি আরো নামবে ?

শিক্ষা একটি জাতি গঠনের প্রধান উপাদান। একটি শিক্ষিত জাতিই পারে পৃথিবীর বুকে জায়গা করে নিতে এবং পারে একটি নতুন সভ্যতার জন্ম দিতে। সেদিক থেকে পরিসংখ্যান দেখলে সাম্প্রতিক কালে আমাদের এগিয়ে থাকারই কথা, কেননা বিগত প্রায় ১০ বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পাসের হার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। সহজেই প্রতীয়মান হয় জাতি হিসেবে শিক্ষিত হচ্ছি, কিন্তু সুশিক্ষিত কি হতে পারছি?
পরীক্ষা মানে একটি মান। এই মান এর একটি পাশে থাকবে ফেল আর একটি পাশে পাশ। কিন্তু এখন এই মানটিকে এমনভাবে সহজলভ্য করা হয়েছে যে এই পরীক্ষা হচ্ছে পাশ করানোর পরীক্ষা যেখানে ফেল নামক কিছুই থাকবে না
এ সম্পর্কে প্রফেসর আব্দুল্লাহ আবু সায়েদ বলেন পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যই হলো ফেল করানো, তাতে যারা পাশ করে তাদের মান সঠিকভাবে যাচাই হয়। পরীক্ষা পদ্ধতি সহজ করে পাশের হার বাড়ালে অযোগ্য ছাত্র পাশ করবে তাতে পরীক্ষার আর কোনো মূল্য থাকবে না। তিনি আরো আরো বলেন আমাদের শিক্ষা মান এখন নামতে নামতে এতই নিচে নেমেছে যে আর নিচে নামা সম্ভব নয়। এখান থেকে উপরের দিকেই যেতে হবে নিচে আর জায়গা নেই।
আরেকটি দুর্ভাগ্যজনক কথা হলো আমাদের সরকারগুলোর সফলতা ব্যর্থতা আমরা নিরূপণ করি পরীক্ষা পাশের হার এর মাধ্যমে। যে কারণে সরকার শুধু পাশের হার বাড়ানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হয় শিক্ষার মান না বাড়িয়ে। এটি চরম একটি নির্বুদ্ধিতার পরিচয় আমাদের।
প্রশ্ন হলো এই বিশাল অঙ্কের ছাত্র-ছাত্রীরা কোথায় যাবে এরপর? প্রশ্ন জটিল হলেও উত্তর অনেক সহজ আমাদের এই দেশে। একেবারে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে ডিগ্রী দিয়ে দেয়া হচ্ছে অনায়াসেই। গ্রাম থেকে এসে এভাবেই প্রতারিত হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী।
আমাদের উচ্চ শিক্ষা আজকে প্রশ্নের সম্মুখীন। পাবলিক ইউনিভার্সিটি নতুন হয়েছে অনেকগুলো কিন্তু সেগুলোর সংখ্যা এবং মান আরো বাড়াতে হবে। এবং হাতে গোনা দশটি ইউনিভার্সিটি ছাড়া বাকি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোর অবস্থা খুবই জঘন্য। কিন্তু ঠিক ঠিক ই দেখা যাচ্ছে চার বছরের মধ্যে ডিগ্রী দিয়ে দিচ্ছে। আর অন্য দিকে আছে জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয় যার অধীনে কয়েক লক্ষ্য ছাত্র পড়াশুনা করছে , তার মান উন্নয়ন এর দিকেও কোনো খেয়াল নেই সরকার এর। অনেক বার বলা হলো বিভাগ অনুযায়ী ভাগ করে দেয়া হোক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে। তাতে করে এর মান এবং সেবা দুটোই বাড়বে কিন্তু নানা জটিলতায় সেটাও সম্ভব হলো না।
এভাবে কী পাব আমরা? হয়ত শিক্ষার হার বাড়বে কিন্তু আমরা শিক্ষিত মানুষ পাব না। দেশ হারাবে তার প্রাণশক্তি।তাই আধুনিক শিক্ষা নীতি প্রণয়ন আজ সময়ের দাবি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর গবেষণা কাজে মনোনিবেশ খুবই প্রয়োজন। নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া বন্ধ করতে হবে, পুরনো গুলোর মান উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে।
“পরিমাণে নয় মানেই জাতির পরিচয় ” আমরা পরিমাণ বাড়ানোর চেয়ে মান বাড়ানোর দিকে জোর দিব সেটাই হোক আমাদের কামনা। যেমনটা সকলের প্রিয় ও সম্মানিত শিক্ষক আব্দুল্লাহ আবু সায়েদ বলেন, আসার কথা কথা হল আমরা আর নিচে নামতে পারিনা এখান থেকে শুধু উপরেই যাওয়া সম্ভব। এই আসার বাণী নিয়ে শেষ করছি।

সূত্র: এরুলিয়া ইউপি ওয়েবসাইট

0/Post a Comment/Comments