নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষাপদ কী? এর প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য ও কৌশল

নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষাপদ কী ?

যে সব অভীক্ষাপদ বা প্রশ্নে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েই ব্যক্তিগত প্রভাব আসার সম্ভাবনা থাকে না তাদেরকে নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষা বলা হয়। অভীক্ষার নৈর্ব্যক্তিকতা বজায় থাকে বলেই একে নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষা বলা হয়ে থাকে। প্রচলিত রচনামূলক প্রশ্নের অসুবিধাগুলো দূর করার উদ্দেশ্যেই মূলত নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার প্রচলন শুরু হয়েছে। নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নে নির্ভরযোগ্যতা ও যথার্থতা উভয়ই রক্ষিত হয়।

>নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার প্রকারভেদ:


সাধারণত: নিন্মবর্ণিত পাঁচ ধরনের নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার প্রচলন রয়েছে।

১. সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন

২. শূণ্যস্থান পূরণ প্রশ্ন

৩. সত্য-মিথ্যা নির্ণয়

৪. মিলকরণ প্রশ্ন

৫. বহু নির্বাচনী প্রশ্ন

>> বহু নির্বাচনী প্রশ্ন:

বহু নির্বাচনী প্রশ্ন অন্যান্য প্রকারের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের তুলনায় অনেক বেশি ব্যবহৃত হয়। কারণ বহু নির্বাচনী প্রশ্ন অন্য যে কোন প্রকার নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের তুলনায় অধিক নির্ভরযোগ্য। এ ছাড়া জ্ঞানের বিভিন্ন স্তরের অর্থাৎ জ্ঞান, উপলব্ধি, প্রয়োগ ইত্যাদির উপযোগী বহু নির্বাচনী প্রশ্ন তৈরি করা যায়।

>বহু নির্বাচনী প্রশ্নের উদাহরণ

বহু নির্বাচনী প্রশ্নের প্রধানত দুটি অংশ থাকে। মূল অংশে (ঝঞঊগ) থাকে একটি প্রশ্ন বা সমস্যা এবং নিচে ৪/৫টি বিকল্প উত্তর দেওয়া থাকে। এই বিকল্প উত্তরগুলোর মধ্যে একটি মাত্র উত্তর সঠিক (কবু) এবং বাকিগুলো ভুল উত্তর বা বিচলক

>প্রশ্নটিকে বলে (কোনটি শীতকালীন ফুল?) --- Stem

>উত্তর(ক,খ,গ,ঘ) গুলিকে বলে --- options

>সঠিক উত্তর কে বলে ---key (ঘ. ডালিয়া)

>আর বাকি ৩টি কে বলে --- Distracter (ক. মোরগফুল খ. সূর্যমুখী গ. দোপাটি)

** কোনটি শীতকালীন ফুল?

ক. মোরগফুল

খ. সূর্যমুখী

গ. দোপাটি

ঘ. ডালিয়া

>>বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য গুলো নিন্মরূপ:

১. স্টেম সরাসরি প্রশ্ন আকারে হবে অথবা একটি সম্পূর্ণ বাক্য বা উক্তি হতে পারে।

২. কবু -এর মাধ্যমে সঠিক উত্তরটি নিশ্চিত করতে হয়।

৩. সব বিকল্প উত্তর একই কাঠামোর হবে। (যেমন- বাক্য, শব্দগুচ্ছ সব একই দৈর্ঘ্যরে হতে হবে)।

৪. বিকল্প উত্তরগুলো সমগোত্রীয় হবে।

৫. উত্তরগুলো যৌক্তিকভাবে সাজাতে হবে।

৬. উত্তরগুলো প্রশ্নের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

৭. না বাচক বাক্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।

৮. প্রশ্নের উত্তর খোঁজার ক্ষেত্রে কোন সূত্র রাখা যাবে না।

৯. প্রশ্নের মধ্যে শুদ্ধ উত্তরগুলোর অবস্থান ভিন্ন হতে হবে যাতে কোন প্যাটার্ন খুঁজে পাওয়া না যায়।

১০. প্রশ্নগুলো যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত হবে।

১১. দ্ব্যর্থবোধক বা চালাকি প্রশ্ন না করাই ভালো।

>>উত্তম বহুনির্বাচনী অভীক্ষাপদ প্রণয়নের নীতিমালা

বিভিন্ন প্রকার নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার মধ্যে বহু নির্বাচনী প্রশ্ন (গঈছ) বর্তমানে বহুল প্রচলিত ও ব্যবহৃত। এ জাতীয় প্রশ্নের দ্বারা শিক্ষার্থীর জ্ঞান, অনুধাবন ও প্রয়োগ স্তরের আচরণ সহজেই পরিমাপ করা যায়।

>উত্তম বহুনির্বাচনী প্রশ্ন প্রণয়নের নীতিমালা:

(১) প্রশ্নের মূল অংশে একটি সরাসরি প্রশ্ন বা অসম্পূর্ণ বাক্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে প্রশ্নের মূল অংশ অর্থপূর্ণ হলে ভাল হয়।

(২) সমস্যাটিকে সুস্পষ্ট করার জন্য যতটুকু তথ্য দরকার ঠিক ততটুকুই প্রশ্নের মূল অংশে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অর্থাৎ প্রশ্নের মূল অংশের ভাষা হবে সহজ, সংক্ষিপ্ত ও অতিরিক্ত জটিল শব্দের ব্যবহার থেকে মুক্ত।

(৩) একান্ত প্রয়োজন না হলে প্রশ্নের মূল অংশে না-বোধক বাক্য ব্যবহার করা উচিত নয়। না-বোধক প্রশ্নের চেয়ে হাঁ-বোধক প্রশ্ন দ্বারা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ শিখন উদ্দেশ্য পরিমাপ করা সম্ভব হয়।

(৪) কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষ শিখনফল পরিমাপের জন্য না-বোধক শব্দ ব্যবহার করে প্রশ্ন করতে হয়। সে ক্ষেত্রে না-বোধক শব্দটিকে জোর দেবার জন্য তার নিচে দাগ টেনে দিতে হবে অথবা বড় অক্ষরে লিখতে হবে।

(৫) প্রত্যেক প্রশ্নের যেন একটি মাত্র সঠিক উত্তর (নবংঃ ধহংবিৎ) থাকে। প্রশ্নে প্রদত্ত বিকল্প উত্তরগুলো (ধষঃবৎহধঃরাবং) প্রশ্নের মূল অংশের (ঝঃবস) সঙ্গে ব্যাকরণগত দিক দিয়ে শুদ্ধ বা সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।

(৬) সঠিক উত্তর নির্বাচন অথবা ভুল বিকল্প বর্জন করার ব্যাপারে প্রশ্নে যেন কোন সংকেত (পষঁব) প্রদত্ত না হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।

(৭) বিচলকগুলো এমনভাবে রচনা করতে হবে যেন শিক্ষার্থীর নিকট আকর্ষণীয় ও আপাতদৃষ্টিতে ন্যায়সংগত বলে মনে হয়। বিচলকগুলো আকর্ষণীয় ও আপাতদৃষ্টিতে ন্যায়সংগত করে তোলার জন্য আপনি নিচের নিয়মগুলো অনুসরণ করতে পারেন-

ক) শিক্ষার্থীরা সাধরণত যে সব ভুল করে সেগুলোকে বিচলক হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

খ) শিক্ষার্থীদের ভাষায় বিকল্পগুলোকে লিখতে হবে।

গ) সঠিক উত্তর এবং বিচলক লেখার ক্ষেত্রে ‘মড়ড়ফ- ংড়ঁহফরহম’ শব্দ ব্যবহার করতে হবে।

ঘ) শব্দের দৈর্ঘ্য ও জটিলতা উভয় দিক থেকেই বিচলক ও সঠিক উত্তর সমার্থক হবে।

ঙ) বিকল্প যেন সমজাতীয় (ঐড়সড়মবহবড়ঁং) হয়।

(৮) সঠিক উত্তরটি যেন বিচলকগুলোর চেয়ে দৈর্ঘ্যে ছোট বা বড় না হয়। আইটেম লেখার সময় বিকল্প উত্তরগুলো দৈর্ঘ্য যতদূর সম্ভব সমান রাখা উচিত।

(৯) ‘ওপরের সবগুলো’ বা ‘ওপরের কোনটিই নয়’- এ ধরনের বিকল্প এড়িয়ে চলুন।

(১০) আইটেমগুলো পরস্পর স্বাধীন থাকবে। তারা যেন একে অপরের ওপর নির্ভরশীল না হয়। অর্থাৎ একটি আইটেমের উত্তর যেন পরবর্তী আইটেমের উত্তর দিতে সাহায্য না করে।

0/Post a Comment/Comments