এক নজরে সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ঢাকা


সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ঢাকা বাংলাদেশে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা ক্ষেত্রে মানবসম্পদ তৈরিতে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ, ঢাকা’য় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।
শ্রেণিকক্ষে প্রতিফল উপযোগী প্রয়োজনীয় শিক্ষণ দক্ষতায় বিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত ও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে ঢাকার আর্মানিটোলায় ১৯০৯ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ আমলে সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় উপমহাদেশের শিক্ষক প্রশিক্ষণের পথিকৃৎ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ‘টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ঢাকা’ এবং ১৯০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে এটি মাত্র ১২ জন প্রশিক্ষণার্থী নিয়ে এক বছরব্যাপী প্রশিক্ষণ ‘ব্যাচেলর অব টিচিং’ এবং ছয়মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ ‘লাইসেন্সিয়েট অব ট্রেনিং’ কোর্স শুরু করে। ১৯৫৬ সাল থেকে দশ মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ ‘ব্যাচেলর অব এডুকেশন (বিএড)’ কোর্স প্রবর্তিত হয়। এবং প্রতিষ্ঠানটি ধানমণ্ডির নিউমার্কেট এলাকায় স্থানান্তরিত হয়।
১৯৮৮-৮৯ শিক্ষাবর্ষে দশমাস ব্যাপী এম.এড প্রশিক্ষণ এবং ১৯৯৫-৯৬ শিক্ষাবর্ষে দেশে মধ্যম সারির শিক্ষা বিশেষজ্ঞ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে চার বছরব্যাপী ‘শিক্ষা (সম্মান)’ কোর্স চালু করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ‘ব্যাচেলর অব এডুকেশন’ (বি.এড) একবছর ব্যাপী কোর্সে রূপান্তরিত হয়।
জাতীয় প্রেক্ষাপট ও সময়ের প্রয়োজনে সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ঢাকা’র বর্তমান প্রশাসনিক, একাডেমিক কাঠামো এবং ভৌত  অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। সময়ের সাথে সাথে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে নতুন নতুন বিষয়ে কর্মকালীন সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণও ঐ প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে পরিচালনা করছে।
অত্র কলেজটি প্রশাসনিকভাবে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ, ঢাকা’র নিয়ন্ত্রণাধীন একটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। একাডেমিক দিক থেকে কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভূক্ত। কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শিক্ষায় বিএড, এমএড ও শিক্ষায় সম্মান কোর্স পরিচালনা করে।
এক নজরের এ কলেজের তথ্যসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলো।

স্থাপিত: ০৬ জানুয়ারি ১৯০৯
অনুমোদিত পদ: ৬৪ টি
কর্মরত:  ৫৯ জন
হোস্টেল: ০৪ টি
কম্পিউটার ল্যাব: ০৫ টি
ভবন: ১০টি
আয়তন: ৮.২৫ একর

কোর্সসমূহ: ব্যাচেলর অফ এডুকেশন, মাস্টার্স অফ এডুকেশন, বিএড অনার্স
ইনসার্ভিস প্রশিক্ষণসমূহ: ধারাবাহিক পেশাগত উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, জীবন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার উপর প্রশিক্ষণ, শিক্ষকদের জন্য মৌলিক আইসিটি ট্রেনিং, উচ্চতর আইসিটি ট্রেনিং (প্রোগ্রামিং, ওয়েব ডেভলাপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন), অটিজম সচেতনতা প্রশিক্ষণ

মিশন ও উদ্দেশ্য

মানসম্মত শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে গুণগত শিক্ষার জাতীয় লক্ষ্য অর্জন।

অর্জন

  • জাতিসংঘ-এর অঙ্গ সংগঠন UNESCO এর সারাবিশ্বে ২১ টি  Resource Distribution and Training Centre (RDTC) রয়েছে। টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ঢাকা তার মধ্যে অন্যতম।
  • শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের টিকিউআই-২ প্রকল্প কর্তৃক টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ঢাকা ইংরেজি বিষয়ের ‘সেন্টার অফ এক্সেলেন্সি’র মর্যাদা পেয়েছে। এ এক অনন্য অর্জন।
  • জাতীয় পর্যায় শিক্ষা ক্ষেত্রের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রশিক্ষণসমূহ (যেমন: এডভান্সড আইসিটি মাস্টার ট্রেইনার, অটিজম সচেতনতা বিষয়ক মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষণ, লাইফ স্কিল এডুকেশন বিষয়ক মাস্টার ট্রেইনার ট্রেনিং) এখানে হয়ে থাকে।
  • এ কলেজের শিক্ষকরা জাতীয় পর্যায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণী ফোরামে কাজ করে আসছেন। যেমন: প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও শিক্ষক প্রশিক্ষণের শিক্ষাক্রম প্রণয়ন; এনসিটিবি’র পুস্তক রচনা; শিক্ষক নির্দেশিকা প্রণয়ন; মহামাণ্য রাষ্ট্রপতির ভাষণ অনুবাদ; জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাউন্সিল ও ফোরামে দায়িত্ব পালন ইত্যাদি।
  • তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায় এ কলেজের অবদান অনস্বীকার্য। যেমন: সরকারের শিক্ষা বিষয়ক ওয়েবসাইটের ইন্টারফেস তৈরি, ইন্টারএক্টিভ ডিজিটাল বুক তৈরি, মাধ্যমিক স্তরের ই-লার্নিং ম্যাটেরিয়ালের স্ক্রিপ্ট রচনা ইত্যাদি।
  • এ কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা শিক্ষার জগতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছেন। তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা প্রশাসনে সুনামের সাথে কাজ করছেন।
  • বিজ্ঞান লেখক আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দিন, ঔপন্যাসিক কাজী ইমদাদুল হক, লেখিকা ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরী এ কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। বিশিষ্ট লেখক আবুল ফজল এ কলেজের ছাত্র ছিলেন।
  • স্বাধীনতা উত্তর মাধ্যমিক শিক্ষাকে উন্নয়নের যে সমস্ত প্রকল্পগুলো কাজ করেছে তার প্রতিটিতেই টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ঢাকা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে, বিশেষ করে SEDP, SESDP, PROMOT এর  মত প্রকল্পে।
  • বাংলাদেশে প্রথম ফ্লিপড ক্লাস রুমের ধারণা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ প্রয়োগ ও বিস্তরণ করে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৭ম শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের ১০০টি পাঠের জন্য ই-ম্যাটেরিয়াল প্রস্তুত করা হয়েছে যা ক্লাসের পূর্বেই শিক্ষার্থীদের মেমরী কার্ডের মাধ্যমে দেওয়া হয় পাঠ সম্পর্কে পূর্ব ধারণা পাওয়ার জন্য। ভিডিওগুলো কলেজের ইউটিউব চ্যানেলে আছে।

0/Post a Comment/Comments