ভূমিকা:প্রতিটিরাষ্ট্রেরইমূল্যবানসম্পদহলোসৎ, যোগ্যওনীতিবাননাগরিক। একটি রাষ্ট্রের কাঠামো এর নাগরিকের আচরণ ও প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। রাষ্ট্রের অগ্রগতির জন্য অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন নাগরিকের প্রয়োজন।এজন্যঅধিকারওকর্তব্যসম্পর্কেজানাপ্রতিটিনাগরিকেরপবিত্রদায়িত্ব। এগুলো সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান ও সচেতনতাই পারে একটি রাষ্ট্রকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে।
নাগরিকের সংজ্ঞা:সাধারণকথায়,
যারানগরেবসবাসকরেনতাদেরকেনাগরিকবলাহয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে নাগরিকের ধারণাটি অনেক ব্যাপকতা লাভ করেছে। নাগরিক এখন শুধু নগরের বাসিন্দারাই নন।যারাএকটিরাষ্ট্রেবাসকরেনতারাসবাইসেদেশেরনাগরিক। প্রাচীনকালে রাষ্ট্রগুলো নগরকেন্দ্রিক হওয়ায় নগরের বাসিন্দাদেরকেই শুধু নাগরিক বলে গণ্য করা হত। বর্তমানে নাগরিক হলেন নির্দিষ্ট ভূখন্ডের প্রতি আনুর্গত্য প্রদর্শকারী ব্যক্তি যিনি তার উপর আরোপিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করেন এবং ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন।
যারানগরেবসবাসকরেনতাদেরকেনাগরিকবলাহয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে নাগরিকের ধারণাটি অনেক ব্যাপকতা লাভ করেছে। নাগরিক এখন শুধু নগরের বাসিন্দারাই নন।যারাএকটিরাষ্ট্রেবাসকরেনতারাসবাইসেদেশেরনাগরিক। প্রাচীনকালে রাষ্ট্রগুলো নগরকেন্দ্রিক হওয়ায় নগরের বাসিন্দাদেরকেই শুধু নাগরিক বলে গণ্য করা হত। বর্তমানে নাগরিক হলেন নির্দিষ্ট ভূখন্ডের প্রতি আনুর্গত্য প্রদর্শকারী ব্যক্তি যিনি তার উপর আরোপিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করেন এবং ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন।
সুনাগরিক: রাষ্ট্র এবং মানবতার কল্যাণের জন্য প্রয়োজনীয় গুণসম্পন্ন ব্যক্তিকে সুনাগরিক বলে।সুনাগরিকপ্রতিটিরাষ্ট্রেরজন্যমূল্যবানসম্পদ। সুনাগরিকের অনেকগুলো গুণ রয়েছে। এর মধ্যে বুদ্ধি, বিবেক, আত্মসংযম, জ্ঞান, সচেতনতা, সততা, ন্যায়বোধ অন্যতম।সুনাগরিকতারএসবগুণেরমাধ্যমেরাষ্ট্রেরসেবাকরেএবংরাষ্ট্রকেকাঙ্ক্ষিতগন্তব্যেপৌঁছাতেসাহায্যকরেথাকে।
অধিকারওকর্তব্য:অধিকারবলতেনিজেরইচ্ছামতোকাজকরারস্বাধীনতাকেবোঝায়। তবে অধিকার মানে স্বেচ্ছাচার নয়। অধিকার হচ্ছে অন্যের স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন না করে নিজের ইচ্ছামতো কাজ করার স্বাধীনতা।অপরদিকে, কর্তব্যহচ্ছেরাষ্ট্রকর্তৃকআরোপিতবাস্বেচ্ছায়পালিতকতিপয়দায়িত্বযারাষ্ট্রওজনগণেরউপকারেআসে। অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে পার্থক্য হলো নাগরিক রাষ্ট্রের কাছে তার অধিকারের দাবি করতে পারে। অপরদিকে রাষ্ট্র নাগরিকের কাছ থেকে তার কর্তব্য পালনের দাবি করতে পারে।
নাগরিকঅধিকার: নাগরিকবৈধঅধিবাসীহিসেবেরাষ্ট্রেরকাছেযেসবসুযোগ-সুবিধা দাবি করতে পারে তাই হলো নাগরিক অধিকার। বিখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানী অধ্যাপক লাস্কি বলেন, অধিকার হলো সমাজ জীবনের সে সকল অবস্থা (সুযোগ-সুবিধা) যা ছাড়া মানুষ তার ব্যক্তিত্বকে উপলব্ধি করতে পারে না।অধিকারেরপ্রাপ্যতারমাধ্যমেনাগরিকজীবনেরবিকাশসহজহয়।
নাগরিকঅধিকারকেপ্রধানতদুভাগেভাগকরাযায়। যথা- ১। নৈতিক অধিকার ও ২।আইনগতঅধিকার। আইনগত অধিকারকে আবার তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা: ক) সামাজিক অধিকার, খ) রাজনৈতিক অধিকার, গ) অর্থনৈতিক অধিকার।নিচেনাগরিকঅধিকারসম্পর্কেআলোচনাকরাহলো-
সামাজিক অধিকার: সমাজেসুষ্ঠুভাবেজীবন-যাপন করার জন্য নাগরিকের যেসব সুযোগ সুবিধা প্রয়োজন হয় তাই হচ্ছে সামাজিক অধিকার। নাগরিকের সামাজিক অধিকারগুলো হলোঃ- * জীবন ধারণের অধিকার * চলাফেরার অধিকার * সম্পত্তি ভোগের অধিকার * চুক্তি করার অধিকার * ধর্মীয় অধিকার * পরিবার গঠনের অধিকার * খ্যাতিলাভের অধিকার প্রভৃতি।এসবসামাজিকঅধিকারনিশ্চিতকরারমাধ্যমেরাষ্ট্রনাগরিকজীবনেরসুষ্ঠুবিকাশেসহায়তাকরেথাকে।
[ads-post]
রাজনৈতিক অধিকার:রাজনৈতিকঅধিকারেরবিস্তৃতিরউপরনাগরিকেররাষ্ট্রীয়কাজেঅংশগ্রহণেরবিস্তৃতিনির্ভরকরে। রাজনৈতিক অধিকার নাগরিকদের রাষ্ট্রের কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে। যে রাষ্ট্র রাজনৈতিক অধিকার বেশি বিস্তৃত সে রাষ্ট্রে নাগরিকদের রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ বেশি।রাষ্ট্রনাগরিককেররাজনৈতিকঅধিকারহলো- * নির্বাচনের অধিকার* আবেদনকরারঅধিকার* সরকারের সমালোচনা করারঅধিকার* বিদেশেঅবস্থানকালেনিরাপত্তালাভেরঅধিকার* স্থায়ীভাবে বসবাসকরারঅধিকারইত্যাদি। এসব অধিকারগুলোর মাধ্যমে রাষ্ট্র নাগরিকদের রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করে।
অর্থনেতিক অধিকার:নাগরিকজীবনেরঅর্থনৈতিকসমৃদ্ধিএবংউন্নতজীবনযাপনেরজন্যরাষ্ট্রপ্রদত্তঅধিকারগুলোইহলোঅর্থনৈতিকঅধিকার। অর্থনৈতিক অধিকারগুলো হলো- * কর্মের অধিকার * ন্যায্য মজুরি লাভের অধিকার * অবকাশ লাভের অধিকার * শ্রমিক সংগঠনের অধিকার প্রভৃতি। অর্থনৈতিক অধিকার নাগরিকের জীবনের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিধান করে।এঅধিকারেরমাধ্যমেনাগরিকতারজীবনকেউন্নতজীবনেরপথেচালিতকরে।
নাগরিককর্তব্য: নাগরিকরাষ্ট্রপ্রদত্তঅধিকারভোগকরতেগিয়েকিছুকাজেদায়বদ্ধহয়েযায়। নাগরিক কর্তৃক পালনীয় রাষ্ট্রের প্রতি এসব দায়িত্বকে কর্তব্য বলা হয়। কর্তব্য পালনের মাধ্যমে নাগরিক সমাজ ও রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য কল্যাণমূলক কাজ করে থাকে।নাগরিকেরকর্তব্যগুলোকেদুভাগেভাগকরাযায়। যথা: ১। নৈতিক কর্তব্য ২।আইনগতকর্তব্য। নাগরিক তার নীতিবোধে তাড়িত হয়ে যেসব কর্তব্য পালন করে নৈতিক কর্তব্য বলে। রাষ্ট্রের আইন-কানুন দ্বারা নির্ধারিত যেসব কর্তব্য নাগরিকের পালন করা অপরিহার্য তাকে আইনগত কর্তব্য বলে।রাষ্ট্রেরপ্রতিনাগরিকেরকর্তব্যগুলোহলোআইনমান্যকরা, রাষ্ট্রেরপ্রতিআনুগত্যপ্রকাশকরা, ভোটাধিকারপ্রয়োগকরেযোগ্যপ্রার্থীবাছাইকরা, করপ্রদান, সন্তানদেরসুশিক্ষারব্যবস্থাকরা, রাষ্ট্রেরসেবাকরাইত্যাদি।
সংবিধানে নাগরিকের অধিকারওকর্তব্য: বাংলাদেশেরসংবিধানেনাগরিকেরমৌলিকঅধিকারেরপূর্ণনিশ্চয়তাদেয়াহয়েছে। একই সাথে রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের কর্তব্যের দিক-নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধানে বলাহয়েছেযে, ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ-শিশু নির্বেশেষে সকলেই সমান অধিকারের অধিকারী হবেন। এ ক্ষেত্রে ধর্ম-বর্ণ বা অন্যকোনো প্রতিবন্ধকতা নাগরিকের অধিকার আদায়ে বৈষম্যের সৃষ্টি করবে না।বাংলাদেশেরসংবিধানে২৬নংথেকে৪৭(ক) নং অনুচ্ছেদে নাগরিকের অধিকারের পূর্ণ নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অধিকারগুলো হলো- আইনের দৃষ্টিতে সমতা, সরকারি নিয়োগলাভে সুযোগের সমতা, আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার, চলাফেরার স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা ইত্যাদি।
সংবিধানের ২০ও২১নংঅনুচ্ছেদেনাগরিকেরকর্তব্যপালনসম্পর্কেদিকনির্দেশনাদেয়াহয়েছে। এতে উল্লেখিত নাগরিক কর্তব্যগুলো হলো- সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিক দায়িত্ব পালন করা, জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা ও সকল সময়ে জনগণের সেবার করার চেষ্টা করা। বাংলাদেশের সংবিধান নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্যের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করেছে।যারমাধ্যমেনাগরিকজীবনেরপূর্ণবিকাশসম্ভব।
সুনাগরিক হওয়ারউপায়: সুনাগরিকহওয়ারজন্যপ্রথমেইএকজননাগরিককেসত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতারগুণঅর্জনকরতেহবে। সুনাগরিকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ হলো স্বদেশপ্রেম। স্বদেশপ্রেম ছাড়া সুনাগরিক হওয়া যায় না।একজনসুনাগরিককেশুধুনিজেররাষ্ট্রেরগন্ডিরভিতরআবদ্ধথাকলেচলবেনা। তাকে হতে হবে বিশ্ব নাগরিক। সুনাগরিক হবেন ত্যাগ স্বীকারকারী।তিনিদেশওজাতিরজন্যনিজেরজীবনকেবাজীরাখতেতৈরিথাকবেন। সুনাগরিককে হতে হবে জ্ঞানী, দায়িত্ব সচেতন এবং সৎচরিত্রের অধিকারী। সুনাগরিকের এসব গুণ অর্জনের জন্য ছোটবেলা থেকেই ন্যায়পরায়নতা এবং দেশপ্রেমের শিক্ষায় দীক্ষিত করতে হবে।নিজসাধনাএবংসচেতনতদারকিরমাধ্যমেএকজননাগরিকভালোগুণগুলোঅর্জনকরবেন। এভাবেই একজন নাগরিক সুনাগরিক হয়ে উঠতে পারবেন।
রাষ্ট্রের প্রতিনাগরিকেরদায়িত্ব:রাষ্ট্রযেমননাগরিককেঅধিকারেরপূর্ণনিশ্চয়তাদিয়েছেতেমনিএসবঅধিকারভোগকরতেগিয়েনাগরিককেকিছুদায়িত্বপালনকরতেহয়। অধিকার আদায় এবং দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নাগরিক এবং রাষ্ট্রের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। নাগরিককে সবসময় রাষ্ট্রের সর্বাঙ্গীন উন্নতির জন্য সচেতন থাকতে হবে।একজনযোগ্যওদায়িত্বশীলনাগরিকরাষ্ট্রেরউন্নতিওসমৃদ্ধিরজন্যসবচেয়েবেশিভূমিকারাখতেপারে। এজন্য নাগরিককে সুশিক্ষিত, দায়িত্বশীল এবং রাষ্ট্রীয় সমস্যা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। নাগরিক তার মননে হবেন বিশ্ব নাগরিক।তবেতাকেজাতীয়তাবাদীচেতনায়উদ্বুদ্ধহতেহবে। সংকীর্ণ দলাদলিকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে। নাগরিককে নৈতিকতার শক্তিতে বলিয়ান হয়ে সংকীর্ণতা পরিহার ও মুক্তমনা হতে হবে।সর্বোপরিনাগরিকেরসকলকাজ-কর্মের উদ্দেশ্য হবে রাষ্ট্র ও এর নাগরিকদের কল্যাণ সাধন।
সুপারিশ: অনেক সময় দেখা যায় রাষ্ট্র নাগরিকদের অধিকার খর্ব করে এবং নাগরিককে অধিকার আদায়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।এছাড়াওদেখাযায়কর্তব্যপালনেরক্ষেত্রেনাগরিকনিজেরঅজ্ঞতাএবংউদাসীনতারকারণেকাঙ্ক্ষিতকর্তব্যপালনেসক্ষমহয়না। এজন্য অধিকার পরিপূর্ণভাবে আদায় এবং কর্তব্য পালনে নাগরিকদের সম্পৃক্ততার জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
- অধিকারের বাস্তবায়নের জন্য কঠোর আইন তৈরি করা।
- নাগরিককে তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা।
- পাঠ্যপুস্তকে, মিডিয়া ইত্যাদি গণমাধ্যমে নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে প্রচারণা চালানো।
- রাষ্ট্র এবং নাগরিকের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।
- অধিকার ও কর্তব্যের পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রকে সচেতন ও আন্তরিক হতে হবে।
উপসংহার: পরিশেষে একথা বলা যায় যে, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য এবং জনকল্যাণের জন্য নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্যের বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।এজন্যরাষ্ট্রকেপূর্ণদায়িত্বশীলতারসাথেতদারকেরভূমিকানিতেহবে। পাশাপাশি নাগরিককে যোগ্য, সৎ এবং সচেতন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তবেই নাগরিক তার অধিকার আদায় এবং রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।
Post a Comment