করোনা মহামারির কারণে লন্ডভন্ড বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা। চরম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন শিক্ষকরাও। লাখ লাখ শিক্ষার্থী আজ শিক্ষাঙ্গনের বাইরে। তাদের একটি বড় অংশ পরিবারসহ রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে। এ সংকটের নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও আমাদের শিক্ষকসমাজ আগামী প্রজন্মকে একবিংশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ হাতে ডিজিটাল কন্টেন্ট বেইসড, জুম অ্যাপস, গুগুলমিট, ফেসবুক লাইভ, ম্যাসেঞ্জার, ইউটিউব চ্যানেলসহ বিভিন্ন মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ছাত্রছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে উদ্দীপনা ও সচেতনতা সৃষ্টি করেছেন তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তারা ব্যক্তিগত প্রয়াস, সংশ্লিষ্টজনের সহযোগিতা আর প্রযুক্তির প্রয়োগ ও সুযোগের সমন্বয়ে শিক্ষার অবিরত ধারা অব্যাহত রেখেছেন। ঠিক তেমনিভাবে অনাগত দিনে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে আস্থার পরিবেশ তৈরি করে, শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনতে দিতে হবে সামাজিক নেতৃত্ব ও রাখতে হবে বলিষ্ঠ ভূমিকা। বুঝিয়ে দিতে হবে জাতিগঠনে তাদের অনস্বীকার্য গুরুত্ব ও অবদান।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সবচেয়ে নিকৃষ্ট দিক হচ্ছে শিক্ষাকে বাণিজ্যিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। দেশে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। বিশাল এই জনগোষ্ঠী দেশের সম্পদ। তবে বর্তমানে বেসরকারি স্কুল-কলেজের ভিড়ে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মানসম্পন্ন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় না। সাম্প্রতিক আমাদের দেশে বিভিন্ন অনৈতিক, অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রশ্নফাঁস, ঘুষ, জালিয়াতি এমনকি ধর্ষণের মতো স্পর্শকাতর কর্মকাণ্ডেও শিক্ষকদের সম্পৃক্ততা বরাবরই লক্ষ্যণীয়।
শিক্ষকদের এই বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যের একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত বেতন-ভাতা ও সুযোগ সুবিধা কম, দ্বিতীয়ত সরকারের তৃণমূলের শিক্ষকদের প্রতি অনীহা, দক্ষ ও যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগে ব্যর্থতা ও শিক্ষাক্ষেত্রে অসদুপায় অবলম্বন করা—এসব কারণে আজ বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার এই হাল। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে শিক্ষকদের শিক্ষাক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়ন করে দেওয়া জরুরি। শিক্ষকেরা হচ্ছেন যে কোনো শিক্ষাব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র এবং শিক্ষার মান, শিক্ষকের মান ও প্রচেষ্টার ওপর নির্ভরশীল। শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান যদি দিতে না পারি তাহলে তাদের কাছ থেকে বেশি কিছু প্রত্যাশা করা যুক্তিসঙ্গত নয়। সম্মানিত শিক্ষকদের মনে রাখা দরকার, শিক্ষকতার পেশা শুধু চাকরি নয়, শিক্ষকতা মহান ব্রত। শিক্ষকের আচার- আচরণ, ব্যক্তিত্ব, আদর্শ, দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্যই সবার কাছে অনুকরণীয়-অনুসরণীয় ও শিক্ষকসুলভ হতে হবে। তাই শিক্ষার সব স্তরে উচ্চতর যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে বাছাই করে নিতে না পারলে, তাদের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত না করলে কোনো কিছুই সফল হবে না। আমরা খুবই আশাবাদী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শিক্ষাবান্ধব সরকার বর্তমানে ক্ষমতাসীন এবং আগামীদিনে সে ধারা অব্যাহত থাকবে। জাতির পিতার সুযোগ্যকন্যা বাঙালি জাতির হাল ধরবেন অচিরেই এবং সব সমস্যার সমাধান হবে। শিক্ষকদের অধিকার-মর্যাদা মুজিববর্ষে নিরসন হবে ইনশাল্লাহ। তবেই লাল-সবুজের পতাকা খচিত মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে উপনীত হবে।
মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
(দৈনিক ইত্তেফাকের সৌজন্যে)
Post a Comment