আচ্ছা আপনারা কি কখনো "Sapio-Sexuality" শব্দটি শুনেছেন? যারা শোনেননি আসুন আজ আপনাদের এই শব্দটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।
স্যাপিওসেক্সুয়াল শব্দটির সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত না। এর অর্থটা অনেকটা ফিলোসোফির অর্থের মতন। Philos+Sophia, মানে জ্ঞানের জন্য ভালোবাসা (Love for knowledge) ! এটাও অনেকটা তাই। তবে এটা বস্তু মানে (বই) না বরং ব্যক্তিকেন্দ্রিক ভালোবাসা!
ব্রিটেনের ‘ইনফরমেশন অ্যাট ইওর ডোরস্টেপ’ নামে একটি অনলাইন সমীক্ষাকারী সংস্থার গবেষণায় এই সেলিব্রেটির সংজ্ঞা বদলে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে আজকাল এই ‘স্যাপিওসেক্সুয়াল’শব্দের আবির্ভাব লক্ষণীয় হয়েছে। তবে স্যাপিওসেক্সুয়ালিটি নামক এই রোমান্টিক শব্দকে একটা মাত্র বাংলা শব্দ দিয়ে বুঝানোটা মুশকিল। বিখ্যাত কলিন্স ডিকশনারি খুঁজে দেখা গেল ‘One who finds intelligence the most sexually attractive feature are sepio-sextual. এই সূত্র ধরে বলা যায় যে যদি কখনো কেউ বাহ্যিক রূপ, সৌন্দর্য, ঠাটবাট চলনবলন দেখে প্রেমে না পড়ে কারো বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষতার জায়গা থেকে প্রেমে পড়াকে Sapio- Sexual বলা যায়।
হালের ক্রেজ প্রিয়াঙ্কা-জোনাসের বিবাহ এর শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। আরও শতাধিক উদাহরণ দেয়া যাবে। খুব জনপ্রিয় উদাহরণ হবে হুমায়ূন আহমেদ ও মেহের আফরোজ শাওন। কখনো কখনো মনেই হয়, সকল অসমতা মেধা আর বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার কাছে নতি শিকার করে।
সমাজ বা সংসারে এর কোন অর্থ কখনো খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেকটা মন আর মগজের প্রেম বলতে পারেন। আমরা তাই বেশিরভাগ মানুষ এই sepio-sextual.
একে ইংরেজিতে বলা হয় স্যাপিও-সেক্সুয়ালিটি (Sapio-Sexuality) যার মানে হচ্ছে প্রেমে পড়া। তবে আমরা সাধারণভাবে প্রেম বলতে যা বুঝি তা নয় (রূপ কিংবা গুণ কিংবা ক্যারিয়ার কিংবা অর্থ-বিত্ত কিংবা সোশাল স্ট্যাটাস) কিন্তু এখানে রসায়নটা অন্যরকম!
ব্যক্তির বাহ্যিকতা না বরং বুদ্ধিমত্তার প্রেমে পড়ে যাওয়া। অদ্ভুত শোনালেও এটাই বাস্তবতা! স্যাপিওসেক্সুয়ালিটি এমন একটা গভীর অনুভূতি যেখানে মানুষ প্রেমে পড়ে মেধা, বুদ্ধিদীপ্ততা, নৈতিকতা, সামাজিকতা, প্রজ্ঞা, রুচি, বিবেক, বোধশক্তি কিংবা পড়াশুনার গভীরতা দেখে।
এই শব্দটি ল্যাটিন স্যাপিয়েন্স (sapiens) শব্দ থেকে আগত। Saphien+sextual = Sapiosexual. এই শব্দটির ব্যবহার এখন যে দেখা যায় তার কারণটাও মজার। সোশ্যাল মিডিয়ায় একসময় তারাই রাতারাতি সেলিব্রেটি হয়ে যেত যারা কিনা বিভিন্ন রকম আকর্ষণীয় ছবি আপলোড দিত।
আকর্ষণীয় বলতে, নিজের ছবি, বিভিন্ন রকম পার্টির ছবি ইত্যাদি। কাউকে কাউকে তো ডাকা হতো ইন্সটাগ্রাম সেলিব্রেটি। সেই সেলিব্রেটির সংজ্ঞা ভেঙ্গে দিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক লেখালেখির মাধ্যমে এখন সেলিব্রেটি হচ্ছে!
কোন গিফট নাই, নেই কোন ডেটিং কিংবা ওকেশন শুধু তীব্রতর আকর্ষণ কাজ “Intelligence ” এর প্রতি। অর্থাৎ আপনি sapio sexual হলে গায়ের রং কিংবা চোখের প্রেমে পড়বেন না, প্রেমে পড়বেন তার মগজের! এদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে আবেদনময় পুরুষ কিংবা নারী ( যেমন: দীপিকা পাড়ুকন কিংবা শাহরুখ বা বিশ্বের অন্য নামী-দামী তারকা) আনা হলে ও তাদের ভালো লাগবে বইয়ের নিচে লুকিয়ে থাকা বুদ্ধিমান মানুষটিকে!
কারণ রূপ শুধু চোখ ছুঁয়ে যায় কিন্তু বুদ্ধিমত্তা ছুঁয়ে যায় হৃদয় আলেকজান্ডার পোপ বলেছেন, “Charms strike the sight, but merit wins the soul” তাই তো ক্লাসের সবচেয়ে বোরিং,আঁতেল, দেখতে অসুন্দর, কিংবা বয়স্ক কারো প্রেম হঠাৎ পড়ে যেতে পারেন শুধু তার বুদ্ধিমত্তার বা মগজের কারিশমা দেখে।
যদি আপনি Sapio-sexual হোন তবে অবশ্যই মেধার প্রেমে পড়বেন।
ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য....
লেখক: উর্মি সিকদার
Post a Comment