সদর উপজেলাটি ফেনী ট্রাংক রোড হতে ৩.০০ কিঃমিঃ পূর্বে অবস্থিত। ফেনী জেলার জনসংখ্যার দিক থেকে প্রথম এবং আয়তনের দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা। এ উপজেলায় প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক লোকের বসবাস। ফেনী সদর উপজেলার একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। ধারণা করা হয় যে, ১০০০ থেকে ১৪০০ খ্রীস্ট পূর্বে প্রথম এই এলাকায় মানববসতি গড়ে উঠে। প্রাচীনকালে এই এলাকা সমতট রাজ্যের অন্তর্ভূক্তছিল। ১৮৭৬ সালে তৎকালীন বৃটিশ সরকার প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ফেনী মহকুমা প্রতিষ্ঠা করে। ফেনী সদর উপজেলা ফেনী মহকুমার অন-ভূক্ত ছিল এবং ফেনী মহকুমা পূর্বে নোয়াখালী জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল। ১৯৭২ সালে অত্র উপজেলায় ফেনী পৌর সভা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৮৪ সালে ফেনী জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ফেনী জেলা/উপজেলার নাম করনের দুই/তিন রকম ইতিহাস পাওয়া যায়। কারোকারো মতে পুন্ড্র বর্ধনের রাজা বিরাট এর জমিদার ফনী রাজা যার উপর এই এলাকার শাসনভার ন্যস্ত ছিল তার নামানুসারে এই এলাকার নামকরণ করা হয়েছে। আবার কারোকারো মতে ফেনীর নীচু এলাকা এক সময় প্রচুর কচুরী পানা(সহানীয় ভাবে পেনা নামে পরিচিত) দ্বারা আবৃত ছিল। পেনা থেকে ও এই এলাকার নামকরণ হতে পারে। আবার এক সময় এ এলাকা সাপের আবাসসহল ছিল। সাপের হাত থেকে মুক্তি পেতে লোকজন প্রচুর ফনী মনসা গাছ লাগাতো। এ থেকে ও এই জেলা/ উপজেলার নামকরণ হতে পারে। আবার ফেনী নদীর (যে টি সাপের মতো সর্পিলাকার গতিতে ফেনী জেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে) নামানুসারে ও ফেনী জেলা/উপজেলার নামকরণ হতে পারে।
ভৌগলিক পরিচিতি-
উপজেলার ঐতিহ্য
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার, স্বাধীনতা আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন । স্বাধীনতা শব্দটিকে আমাদের করতে ফেনীবাসীর অবদান বিশাল ও ঐতিহাসিক । ১মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতঘোষনার সাথে সাথে সারা দেশের মতো ফেনীও ফুঁসে ওঠে । বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চভাষণের পর পরই ফেনীতে শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের কাজ । চলতে থাকেকর্ম পরিকল্পনা ।জননেতাখাজা আহমদের নেতৃত্বে গঠিত হয় ২টি সংগ্রাম কমিটি । একটি আওয়ামী লীগসংগ্রাম কমিটি ও অপরটি যুব ও ছাত্র সংগ্রাম কমিটি । এরই ধারাবাহিকতায়জননেতা খাজা আহমদের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ সকাল থেকে ফেনীর পূর্বউকিল পাড়াসহ হাজী মনির উদ্দিন সওদাগর বাড়ির রফিকুল হকের বাসায় কর্মনির্ধারনী বৈঠকে ১১ জন সংগঠক পবিত্র কুরআন ছুঁয়ে স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজনে আত্মোৎসর্গের শপথ নেন । মূলত ঐদিন থেকেই শুরু হয় ফেনীর মুক্তযুদ্ধের পথচলা।
উক্ত ১১ জন সংগঠক হচ্ছেন-
০১. খাজা আহমদ
০২. আবদুল মালেক ওরফে লোহা মালেক
০৩ বালিগাঁওয়ের নূরুল হুদা
০৫. মাষ্টার পাড়ার এনায়েত হাজারী বাড়ির নূরুল ইসলাম হাজারী
০৬. পূর্ব উকিল পাড়ার হাজী মনির উদ্দিন সওদাগর বাড়ির রফিকুল হক
০৭. মুন্সীর হাটের ইউনুছ চৌধুরী
০৮. সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম তালেব আলী
০৯. বর্তমান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বিকম
১০. মোস্তফা হোসেন ওরফে গোল্ডেন মোস্তফা
১১. জাতীয় বার্তা সম্পাদক একেএম শামছুল হক ।
যদ্দুরজানা যায় ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে একটি সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয় যাপরবর্তীতে জননেতা খাজা আহমদের নেতৃতেব সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটিরঅন্তর্ভূক্ত হয়ে একত্রে কাজ করে । প্রাপ্ত তথ্য মতে, আওয়ামীলীগ সংগ্রামকমিটিতে ছিলেন খাজা আহমদ, আবদুল মালেক ওরফে লোহা মালেক, নূরুল হুদা, এমএসহুদা ওরফে টুকটুক হুদা, নূরুল ইসলাম হাজারী, রফিকুল হক, ইউনুছ চৌধুরী, এবিএম তালেব আলী, আবদুর রহমান বিকম, মোস্তফা হোসেন ওরফে গোলে্ডন মোস্তফা, একেএম শামছুল হক, মাহফুজুল হক, রুহুল আমীন(ভূষি রুহুল), সুজামিয়া(রাজাপুর), সৈয়দ আহমেদ(পাঁচগাছিয়া), আবু বক্কর (হাড্ডি বক্কর, রামপুর), খায়েজ আহমেদ(নবাবপুর), সুলতান আহমেদ(লেমুয়া), সৈয়দেররহমান(তাকিয়াবাড়ি), বতু দরবেশ, বত্তন মিয়া । যুব ও ছাত্র সংগ্রাম কমিটিতেছিলেন জয়নাল হাজারী, জয়নালয় আবদীন(ভিপি জয়নাল), জহির উদ্দিন বাবর, হাফেজআহমদ, নূর মোহম্মদ হাজারী, জাফর উল্যাহ খান, খোন্দকার মোজাম্মেল, মোহাম্মদ মুছা, কাজী নূরুন নবী সহ আরো কয়েক জন যাদের নাম নিশি্চত ভাবেজানা যায়নি । ৩০ মার্চ সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ, সামরিক, আধা-সামরিকবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সৈনিক এবং যুব ও ছাত্রদের নিয়েমিশ্রবাহিনী । তৎ পূর্ব হতেই ৩০০ জনের একটি বাহিনী নিয়ে পিটিআই মাঠে শুরুহয় সামরিক প্রশিক্ষণ । প্রথম থেকে প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন সুবেদারমেজর(অবঃ) আবু আহম্মদ (খাজুরিয়া ইব্রাহিম মৌলবী বাড়ি), ফাইটসার্জেণ্ট (অবঃ) নূরুল ইসলাম(কালিদহ), সার্জেণ্ট সামছুল হক(ফরহাদ নগর), সুবেদার সিদ্দিকুর রহমান, ব্যাটেলিয়ান সামছু(উকিল পাড়া), ক্যাপ্টেন আবদুররৌফ(সোনাপুর) সহ আরো কয়েকজন ।
২৫ মার্চ পাকিস্তানী বাহিনীঘুমন্ত বাংগালীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লে ২৬ মার্চ বিকেলে খাজা আহমদের নেতৃতেব বৈঠকে বসেন সংগঠকবৃন্দসহ অপরাপর নেতৃবৃন্দ।
বৈঠকের সিদ্ধান্তানুযায়ী ফেনী পিটিআই'র মাঠে শুরু হয় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প।২৩ এপ্রিল সংগঠকগনসহ হাজার হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন জনতাসীমানা অতিক্রম করে ভারতের ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং ফেনী সহবাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের নেতৃতেব বিলোনিয়ার ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয় যা আজ বিশ্বের উন্নততর সামরিক একাডেমী সমূহের পাঠ্য বিষয়।এছাড়াও মিত্র বাহিনীর সাথে পাক বাহিনীর শুভপুরে সংঘটটত সম্মুখ যুদ্ধ আমাদের গেরবের অংশ।দীর্ঘ যুদ্ধের পর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী পরাজয় বরণ করে ও ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ ফেনী মুক্ত হয়।হানাদাররাপেছনে রেখে যায় বিশাল এক বধ্যভূমি- মুন্সীর হাটের জাম-মুড়া, ফেনী সরকারীকলেজ মাঠের গণকবর ও অসংখ্য গণকবরসহ ধ্বংসস্তুপ যা অদ্যাবধি চিনহিত করা যায়নি।
Post a Comment