রাজশাহী বিভাগ পরিচিতি

রাজশাহী বিভাগ বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এর জনসংখ‍্যা প্রায় ২ কোটি এবং আয়তন ১৮,১৫৪ বর্গ কিলোমিটার। রাজশাহী বিভাগ আটটি জেলা, ৬৬টি উপজেলা, ৫৯টি পৌরসভার এবং ৫৬৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।[১] রাজশাহী, বগুড়া,পাবনা এবং সিরাজগঞ্জ রাজশাহী বিভাগের চারটি প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র এবং বড় শহর। নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট প্রধান কৃষি এলাকা। রাজশাহী হল এ বিভাগের রাজধানী।

পপটভূমি

১৮২৯ সালে উত্তরবঙ্গের বিশাল অংশ নিয়ে একটি বিভাগ গঠিত হয়েছিল। সে সময় এর সদর দফতর ছিল ভারতের মুর্শিদাবাদ। ৮টি জেলা নিয়ে এই বিভাগটি গঠিত হয়েছিল। জেলাগুলো ছিলঃ মুর্শিদাবাদ, মালদহ, জলপাইগুড়ি, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, পাবনা ও রাজশাহী। কয়েক বছর পর বিভাগীয় সদর দপ্তর বর্তমান রাজশাহী শহরের রামপুর-বোয়ালিয়া মৌজায় স্থানান্তরিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৮৮৮ সালে বিভাগীয় সদর দপ্তর ভারতের জলপাইগুড়িতে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৪৭ সালের পাক-ভারত বিভাজনের পর তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বিভাগে পরিণত করা হয় রাজশাহীকে এবং এই বিভাগের সদর দফতর রাজশাহী শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলো ছিলঃ কুষ্টিয়া, খুলনা, দিনাজপুর, বগুড়া, পাবনা, যশোর, রংপুর ও রাজশাহী। ১৯৬০ সালে রাজশাহী বিভাগের খুলনা, কুষ্টিয়া, যশোর এবং ঢাকা বিভাগের বরিশাল জেলা কর্তন করে খুলনা বিভাগ গঠন করা হয়। ফলে রাজশাহী বিভাগের জেলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ এবং জেলগুলো ছিলঃ দিনাজপুর, পাবনা, বগুড়া, রংপুর ও রাজশাহী। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর, ৫ টি জেলা নিয়ে রাজশাহী বিভাগ বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৮৪ সালে এই বিভাগের প্রতিটি জেলার মহকুমা জেলাতে পরিণত হয়। তখন এই বিভাগের মোট জেলার সংখ্যা ছিল ১৬টি। যে ৫ জেলাকে ভেঙে যে নতুন জেলাগুলো হয়:

১. বগুড়া (বগুড়া ও জয়পুরহাট)
২. পাবনা (পাবনা ও সিরাজগঞ্জ )
৩. রাজশাহী (রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ)
৪. দিনাজপুর (দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়)
৫. রংপুর (রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, লালমনিরহাট)

২০১০ সালে রংপুর অঞ্চলের ৮টি জেলা নিয়ে রংপুর বিভাগ গঠন করা হয় এবং রাজশাহী অঞ্চলের ৮টি জেলা নিয়ে বর্তমান রাজশাহী বিভাগ পুনঃগঠিত হয়।

নদ-নদী:

বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত রাজশাহী বিভাগেও নদ-নদীর অভাব নেই। রাজশাহী বিভাগের উল্লেখযোগ্য নদ-নদীসমূহ হচ্ছে পদ্মা, যমুনা, মহানন্দা, আত্রাই, ইছামতি , করতোয়া, বড়াল , নাগর , বাঙ্গালী প্রধান। এছাড়াও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে ছোট ছোট নদ-নদী রয়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:
উচ্চ শিক্ষার জন্য বর্তমানে রাজশাহী বিভাগে ছয়টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় গুলো হল

১. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
২. রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
৩. রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
৪. পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
৫. রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়
৬. বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

এছাড়াও এই বিভাগে পাঁচটি সরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। কলেজগুলো হল

১. রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী
২. পাবনা মেডিকেল কলেজ, পাবনা
৩. শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, বগুড়া
৪. শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ, সিরাজগঞ্জ
৫. নওগাঁ মেডিকেল কলেজ , নওগাঁ
৬. বগুড়া সেনানিবাসে একটি স্বায়ত্বশাসিত আর্মি মেডিকেলও রয়েছে।

উল্লেখযোগ্য কলেজ সমূহ হল

১. রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী
শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান সরকারি ডিগ্রি কলেজ, উপশহর, রাজশাহী
২. নিউ গভঃ ডিগ্রী কলেজ, রাজশাহী,
৩. রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ, রাজশাহী।
৪. রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ, রাজশাহী।
৫. নবাব সিরাজউদ্দৌলা সরকারি কলেজ, নাটোর।।
৬. রাণী ভবানী সরকারি মহিলা কলেজ, নাটোর
৭. এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা
৮. সরকারি আজিজুল হক কলেজ , বগুড়া
৯. জয়পুরহাট সরকারি কলেজ,জয়পুরহাট
১০. সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজ, বগুড়া
১১. জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজ।
১২. জয়পুরহাট সরকারি মহিলা কলেজ,জয়পুরহাট
১৩. সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ, সিরাজগঞ্জ
পলিটেকনিক সমূহ
১৪. সিরাজগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
১৫. বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
১৬. পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
১৭. নাটোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
১৮. রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
১৯. রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
২০. নাঁওগা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

শস্য, খাবার ও পণ্য সামগ্রী:
রাজশাহী সাধারনত ফলের জন্য সুপরিচিত, বিশেষ করে আম ও লিচু। এছাড়াও রাজশাহীতে অনেক ধরনের শস্য এবং সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে, এর মধ্যে আলু, গাজর, পটল, পেঁয়াজ, আখ, কলা, ধান ,গম ও মরিচ প্রভৃতি অন্যতম। বগুড়া জেলার দই ও ক্ষীর পুরো বাংলাদেশে বিখ্যাত। বাংলাদেশে জয়পুরহাট খাদ্য সংরক্ষণ এলাকা হিসাবে সুপরিচিত। বাংলাদেশের মধ্যে বগুড়ার লাল মরিচ বিখ্যাত।এছাড়া কাহালুর কল্যাণপুর গ্রাম মরিচ চাষের এবং নাটোর গম চাষের জন্য বিখ্যাত।

বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলার শান্তাহারএ আছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম খাদ্য সংরক্ষণ গুদাম(সাইলো)।

জেলা ভিত্তিক কৃষজ উৎপাদন।
রাজশাহী জেলা →আম,লিচু,ধান,পাট
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা →আম, লিচু,ধান,গম,সবজি
বগুড়া জেলা→দই,ক্ষীর, কটকটি,মরিচ,আলু,গম,সরিষা,ধান,কলা,
পেঁপে,মাছ।

পাবনা জেলা→ডাল,গম,পেয়ারা,কাঁঠাল, মাছ
নাটোর জেলা →আখ,গম,রসুন,পাট,মাছ,ধনিয়া,মরিচ,বেগুন।
নওগাঁ জেলা →মাছ,সবজি,ধান,পাট,ভুট্টা ,গম,পাট
) সিরাজগঞ্জ →গম,ধান,ভুট্টা ,মাছ,তিল,গরুর দুধ।
জয়পুরহাট জেলা →আলু,গম,তুলা,পাট,সবজি
দর্শনীয় স্থানসমূহ সম্পাদনা
রাজশাহী বাংলাদেশের অন্যতম ভ্রমন অঞ্চল হিসাবে সুপরিচিত। এখানে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে।

অন্তর্ভূক্ত দর্শনীয় স্থানসমূহ:

তাহেরপুর রাজবাড়ী,তাহেরপুর শহরে অবস্থিত।
সোমপুর বিহার,একটি বৃহত্তম বৌদ্ধ মন্দির।
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর বাংলার সুপ্রাচিন জাদুঘর।
হার্ডিঞ্জ ব্রীজ,পাকশী।
লালন শাহ সেতু,পাকশী।
তাড়াশ ভবন,পাবনা।
মহাস্থানগড়,প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন, বাংলার প্রাচীনতম রাজধানী
ভাসু বিহার, বগুড়া
খেরুয়া মসজিদ,বগুড়া
গোকুল মেধ,বগুড়া
মহাস্থানগড় জাদুঘর
নবাব প্যালেস,বগুড়া
শীলাদেবীর ঘাট,বগুড়া
পুঠিয়া রাজবাড়ি,পুরনো জমিদার বাড়ি।
বাঘা মসজিদ,রাজশাহী জেলার বাঘা থানায় অবস্থিত।
উত্তরা গণভবন,নাটোরের দীঘাপতিয়ায় অবস্থিত রাজবাড়ি ।
কুসুম্বা মসজিদ,নওগাঁ।
ছোট সোনা মসজিদ,চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
চলন বিল,বৃহত্তম বিল,যা নাটোর এবং পাবনা পর্যন্ত বিস্তৃত।
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার,একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার।
গোবিন্দ ভিটা,শিবগঞ্জ, বগুড়া।
হালতি বিল নাটোরের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল,যা নাটোর জেলার নলডাঙ্গা উপজেলায় অবস্থিত।এটি একটি পর্যটন স্থান,বর্ষা মৌসুমে এখানে হাজার হাজার মানুষের আনাগনা,তাই এই বিলটা এখন মিনি কক্সবাজার নামে ও পরিচিত।
নাটোর রাজবাড়ী বিশাল আয়তনে ঘেরা একটি রাজবাড়ি যা আর্ধবঙ্গেশ্বরি রাণী ভবানী দ্বারাও পরিচালিত হয়েছিল ।

পাতা

জেলা ও উপজেলাসমূহ


জেলার সংখ্যা: ৮টি, উপজেলার সংখ্যা: ৬৭টি, ইউনিয়নের সংখ্যা: ৫৬৩টি
জেলারনাম
উপজেলার নাম
ইউনিয়নের সংখ্যা
রাজশাহী
০১।পবা
৮টি
০২।চারঘাট
৬টি
০৩।বাঘা
৬টি
০৪।পুঠিয়া
৬টি
০৫।তানোর
৭টি
০৬।মোহনপুর
৬টি
০৭।দূর্গাপুর
৭টি
০৮।বাগমারা
১৬টি
০৯।গোদাগাড়ী
৯টি
নাটোর
০১।নাটোর সদর
৭টি
০২।লালপুর
১০টি
০৩।বাগাতিপাড়া
৫টি
০৪।বড়াইগ্রাম
৭টি
০৫।গুরুদাসপুর
৬টি
০৬।সিংড়া
১২টি
০৭। নলডাঙ্গা
৫টি
নওগাঁ
০১।নওগাঁ সদর
১২টি
০২।আত্রাই
৮টি
০৩।রাণীনগর
৮টি
০৪।পত্নীতলা
১১টি
০৫।সাপাহার
৬টি
০৬।পোরশা
৬টি
০৭।মান্দা
১৪টি
০৮।মহাদেবপুর
১০টি
০৯।ধামইরহাট
৮টি
১০।বদলগাছী
৮টি
১১।নিয়ামতপুর
৮টি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
০১।চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর
১৪টি
০২।শিবগঞ্জ
১৫টি
০৩।ভোলাহাট
৪টি
০৪।গোমস্তাপুর
৮টি
০৫।নাচোল
৪টি
বগুড়া
০১।বগুড়া সদর
১১টি
০২।শাজাহানপুর
৯টি
০৩।শেরপুর
১০টি
০৪।ধুনট
১০টি
০৫।সারিয়াকান্দি
১২টি
০৬।গাবতলী
১১টি
০৭।সোনাতলা
৭টি
০৮।শিবগঞ্জ
১২টি
০৯।দুপচাচিয়া
৬টি
১০।কাহালু
৯টি
১১।আদমদীঘি
৬টি
১২।নন্দীগ্রাম
৫টি
জয়পুরহাট
০১।জয়পুরহাট সদর
৯টি
০২।পাঁচবিবি
৮টি
০৩।আক্কেলপুর
৫টি
০৪।ক্ষেতলাল
৫টি
০৫।কালাই
৫টি
পাবনা
০১।পাবনাসদর
১০টি
০২।সাঁথিয়া
১০টি
০৩।সুজানগর
১০টি
০৪।বেড়া
৯টি
০৫।ঈশ্বরদী
৭টি
০৬।ভাঙ্গুড়া
৫টি
০৭।ফরিদপুর
৬টি
০৮।চাটমোহর
১১টি
০৯।আটঘড়িয়া
৫টি
সিরাজগঞ্জ
০১।সিরাজগঞ্জ সদর
১০টি
০২।রায়গঞ্জ
৯টি
০৩।কাজিপুর
১২টি
০৪।তাড়াশ
৮টি
০৫।শাহজাদপুর
১৩টি
০৬।উল্লাপাড়া
১৪টি
০৭।কামারখন্দ
৪টি
০৮।বেলকুচি
৬টি
০৯।চৌহালী
৭টি
সর্বমোট
৬৭টি
৫৬৩টি

0/Post a Comment/Comments