ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ছে, প্রতিরোধে করণীয় : ড. মুনীরুদ্দিন আহমদ


ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ছে, প্রতিরোধে করণীয় 

ক্যান্সার ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই সবাইকে সতর্ক জীবনযাপনের আহ্বান জানাচ্ছি।
মানুষের শরীরে গড়ে প্রায় ৩০ ট্রিলিয়ন(৩০,০০০,০০০,০০০,০০০) সেল বা কোষ রয়েছে। আমাদের শরীরে প্রতি মিনিটে গড়ে ৩০ কোটি সেল মৃত্যুবরণ করে এবং সমপরিমাণ সেল জন্মগ্রহণ করে। দেহে কোষের জন্মমৃত্যুর এই প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবেই  ঘটে থাকে। স্বাভাবিক সেলের জন্মমৃত্যুর ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। কিন্তু কোনো একটি সেল যদি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার হুকুম অমান্য করে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে বা বংশ বিস্তার অব্যাহত রাখে, তাহলে এই অনিয়ন্ত্রিতভাবে অতি দ্রুত বাড়তে থাকা সেলগুলো একটি মাংসপিণ্ডে পরিণত  হয়। এই পিণ্ডকে বলা হয় টিউমার। ব্লাড ক্যান্সারের (লিউকেমিয়া) ক্ষেত্রে রক্তে অস্বাভাবিক ক্ষতিকর রক্তকণিকার সৃষ্টি হয়, যা শরীরের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে বিঘ্ন ঘটায়। তার মধো প্রধান সমস্যা হল শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস।এই অস্বাভাবিক ক্ষতিকর রক্তকণিকা সৃষ্টি হয় বোনম্যারো বা অস্থি মজ্জাতে। টিউমারের এক বা একাধিক ক্যান্সার সেল যদি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করে  বংশবিস্তার করতে থাকে, তখন সেই প্রক্রিয়াকে বলা হয় মেটাস্ট্যাসিস (METASTASIS)। মেটাস্ট্যাসিস একটি ভয়ংকর অবস্থা যার চিকিৎসা অতি ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। এই অবস্থায় রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে পড়ে। ক্যান্সারের কারণ সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন এটি একটি ভাগ্যের ব্যাপার। কার ক্যান্সার হবে, কার হবে না, তা কেউ জোর দিয়ে বলতে পারে না। তবে ধূমপান, মদ্যপান, আর্সেনিক, এসবেস্টস, গামা-রে বা বিকিরণ, এক্স-রে, আলট্রাভায়োলেট লাইট( UV Light), গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া হল কার্সিনোজেন, যার কাজ হল শরীরে ফ্রি রেডিক্যাল তৈরি করা। এই কালপ্রিট ফ্রি রেডিক্যাল আরএনএ (রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) ও ডিএনএ ( ডিঅক্সি রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) এর সাথে বিক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষতিসাধন করে ক্যান্সার সেল তৈরিতে সাহায্য করে।
প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার নির্ণয় করা গেলে ক্যান্সার চিকিৎসা সহজ হয়। যেমন স্তন ক্যান্সার। ক্যান্সার চিকিৎসা মারাত্মক জটিল, ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এই চিকিৎসায় সার্জারি, রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপির দরকার হতে পারে। ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে শরীরের ক্যান্সার সেলকে সমূলে বিনাশ করার নাম কেমোথেরাপি।
তাহলে আমাদের কী করণীয় !
আগে বহুবার বলেছি। আজ আবার বলছি। লাইফস্টাইল পরিবর্তন প্রথম ও প্রধান শর্ত।  নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করুন, সুষম খাবার খান, চিনি, কোমলপানীয় ও জাঙ্কফুড বর্জন করুন, ঘর থেকে বের হলে মাস্ক পরুন, ধূমপান ছাড়ুন, প্রচুর পানি পান করুন, ট্রান্স ফ্যাট, লাল মাংস বর্জন করুন, ফ্রি রেডিক্যাল ধ্বংসকারী অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ (ANTIOXIDANT) খাবার- প্রচুর ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন এ, পলিফেনলসমৃদ্ধ চা, গ্রিন টি, ব্রকলি, বাদাম, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ মাছের তেল, প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল খাবেন। আর শরীর  ফিট রাখা ও রোগমুক্তির জন্য ব্যায়াম তো করতেই হবে।

0/Post a Comment/Comments