কলাপাড়া উপজেলা

কলাপাড়া উপজেলা (পটুয়াখালী জেলা)  আয়তন: ৪৮৩.০৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২১°৪৮´ থেকে ২২°০৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০৫´ থেকে ৯০°২০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে আমতলী উপজেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে রাবনাবাদ চ্যানেল ও গলাচিপা উপজেলা, পশ্চিমে আমতলী উপজেলা।
জনসংখ্যা ২০২০৭৮; পুরুষ ১০৪৩৯৯, মহিলা ৯৭৬৭৯। মুসলিম ১৯০৬৮৮, হিন্দু ১০০৩৯, বৌদ্ধ ১১০, খ্রিস্টান ১২১১ এবং অন্যান্য ৩০। এ উপজেলায় আদিবাসী রাখাইন সম্প্রদায়ের ১০৪টি পরিবারে মোট ৪৭৪ জন বাস করে।
জলাশয় প্রধান নদী: আন্ধারমানিক, নীলগঞ্জ ও ধানখালী।
প্রশাসন ১৯২৮ সালে কলাপাড়া থানা গঠিত হয় এবং উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা
পৌরসভাইউনিয়নমৌজাগ্রামজনসংখ্যাঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)শিক্ষার হার (%)
শহরগ্রামশহরগ্রাম
৫৮২১৭২৩৫৬৫১৭৮৫১৩৪১৮৬৫.৩৫৫.৭
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি)ওয়ার্ডমহল্লালোকসংখ্যাঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)শিক্ষার হার (%)
৩.৭৫২৪১৬২৫৬৪৩৩৫৭১.২০
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি)মৌজালোকসংখ্যাঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)শিক্ষার হার (%)
১৫.৭৪৭৩০৯৪৬৪৫১.৫০
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোডআয়তন (একর)লোকসংখ্যাশিক্ষার হার (%)
পুরুষমহিলা
খাপড়াভাঙ্গা ২৩১৩০২৯১৩৬৭৫১২৬২০৫৮.৩৪
চাকমাইয়া ১১৮৪৯৬৭৫৮৩৭২৭৬৫৭.৬৭
টিয়াখালি ৮৩৮১২৬৬২৩৬৫৬৫৭৫৩.৯০
ধানখালী ৫৫১৪৬৫২১১৫০৮১১২০৮৫০.১১
ধুলাসার ২৯১১১৩৯৭৯১১৭২৮৮৪৯.৭৭
নীলগঞ্জ ৭১১৫৬৪৮১২৯০৮১২৬৪৫৬৪.২২
মিঠাগঞ্জ ৫৯১৮৪৯৬১২২৮৩১১৬৮১৫৬.৭১
লতাচাপলি ৪৭১৪১৩৪১৪১৭১১২৮৩৩৫৪.৬৩
লালুয়া ৩৫১২৮৯৭৯৩৫৮৮৯৮১৫০.১৩
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ কেরানীপাড়ার পুরানো বৌদ্ধবিহারে গৌতম বুদ্ধের ধ্যানমগ্ন মূর্তি (এটি এশিয়ার সর্ববৃহৎ বুদ্ধমূর্তি), কুয়াকাটা বৌদ্ধবিহার।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৯০, মন্দির ৪৫, প্যাগোডা ৪, বৌদ্ধবিহার ৮, গির্জা ২, মাযার ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: কলাপাড়া জামে মসজিদ, কুয়াকাটা বৌদ্ধবিহার, কলাপাড়ায় পীর বশির উদ্দিনের মাযার।


শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৬.৯%; পুরুষ ৫৯%, মহিলা ৫৪.৭%। কলেজ ৭, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৫০, মাদ্রাসা ২৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজ (১৯৭৭), কুয়াকাটা কলেজ (২০০১), ধানখালী কলেজ (১৯৯৪), খেপুপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৮), ধানখালী এম. ইউ. মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৫২), মাহিপুর কো-অপারেটিভ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৬৭), খেপুপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৬৩), কলাপাড়া নেছারুদ্দিন সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৬৫)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, মহিলা সমিতি ১, নাট্যমঞ্চ ১, সিনেমা হল ৪, কমিউনিটি সেন্টার ১৪, খেলার মাঠ ২২।
গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান কলাপাড়া উপজেলার দক্ষিণে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা অবস্থিত। ১৮ কিমি দৈর্ঘ্যের কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়। স্থানবিশেষে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের প্রস্থ ৩ থেকে ৩.৫ কিমি। কুয়াকাটা থেকে পশ্চিমে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কুয়াকাটা শুঁটকি পল্লী। শীতকালে সাগর থেকে বিভিন্ন প্রজাতির ছোটবড় মাছ আহরণ করে উক্ত পল্লীতে শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এখান থেকে শুঁটকি মাছের চালান বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। এছাড়া পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য রয়েছে সিফিশ মিউজিয়াম, বুড়া গৌরঙ্গ সামুদ্রিক চ্যানেল, কুয়াকাটার সীমা বৌদ্ধ মন্দির, বুদ্ধের ধ্যানমগ্ন মূর্তি, রাখাইন পল্লী, নারিকেল বীথি, ঝাউবন, ফাতরার চর (ম্যানগ্রোভ), গঙ্গামতির চর, রাসমেলা, লেম্বুর চর ইত্যাদি।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৭.২৩%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৮০%, শিল্প ০.৪৩%, ব্যবসা ১৩.৫০%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.১৪%, চাকরি ৪.৫৬%, নির্মাণ ১.৩৬%, ধর্মীয় সেবা ০.২১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২০% এবং অন্যান্য ১৫.৫৭%।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, ডাল, আলু, তরমুজ।
প্রধান ফল-ফলাদিব কলা, পেঁপে, নারিকেল, পেয়ারা, বাদাম, কূল।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় চিংড়ী, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামার ও হ্যাচারি রয়েছে।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৪৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫৮ কিমি, কাঁচারাস্তা ৮৪০ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি, গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা আটা-ময়দার মিল, চালকল, বরফকল, করাতকল, ম্যাচ ফ্যাক্টরি।
কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, বাঁশশিল্প, বেতের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৫০ (প্রায়), মেলা ১। কলাপাড়া হাট, মহিপুর হাট এবং কুয়াকাটার রাশ-পুর্ণিমা মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   ধান, ইলিশ মাছ।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬.২৪% (শহরে ৩৩.৭১% ও গ্রামে ২.৭০%) পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ  মৎস্য ও বনজ সম্পদ।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৭.২৭%, পুকুর ১.৬৯%, ট্যাপ ০.২৭% এবং অন্যান্য ০.৭৭%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৪.৬০% (গ্রামে ৩০.০১% ও শহরে ৭০.১৭%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৬০.০১% (গ্রামে ৬৫.৪৫% ও শহরে ২৬.৫৮%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৫.৩৯% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৯, ক্লিনিক ১।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮২২, ১৯৬০ ও ১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় এবং ১৮৭৬ সালের বন্যায় বহু লোকের প্রাণহানি ঘটে, ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এনজিও ব্র্যাককারিতাসআশা, কোডেক।  [একরামুল কবির]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কলাপাড়া উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।

0/Post a Comment/Comments