- শাকিল সাইয়িদ
একটি ব্যবসায়ের জন্য আপনার ভালো ধারনা আছে এটা মনে করা খুব সহজ, কিন্তু আপনার ব্যবসায়কে সফল করার জন্য আপনার সেই বিশ্বাসকে নিশ্চিত এবং যাচাই করা প্রয়োজন এবং এটা করার জন্য বাজার গবেষনা হচ্ছে সাশ্রয়ী মাধ্যম।
বাজার গবেষনা কী?
আপনার বাজার, প্রতিযোগী, ক্রেতা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষনের প্রক্রিয়াকেই বাজার গবেষনা বলে।ক্রেতারা কি চায়, তার সাথে আপনার পন্য এবং সেবার মিল বজায় রাখতে এটা সাহায্য করে।তাছাড়াও প্রতিযোগিরা কি করছে এবং বাজারে কী হচ্ছে তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আপনাকে অবগত রাখবে।
আপনাকে কেন জানতে হবে?
যখন আপনি একটি ব্যবসায় শুরু করতে যাবেন,বাজার গবেষনা আপনার ব্যবসার ধারনা এবং ধরনের সম্ভ্যবতা যাচাই করতে সহায়তা করবে, যাতে আপনি সফল হতে পারেন, আপনার নিম্নউল্লেখিত ৩টি তথ্য আপনার প্রয়োজন হবেঃ
- বাজার
- প্রতিযোগী
- ক্রেতা
বাজার
যখন আপনি বাজারের দিকে লক্ষ্য করবেন, আপনাকে নিচের বিষয়গুলোকে বিবেচনা করতে হবেঃ
- বাজারের আকার বা কত বড় বাজার?
- বাজারে কতগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে (যে সেক্টরে আপনি কাজ করতে চান)?
- কতগুলো ব্যবসায় গত বছর শুরু হয়েছে এবং কতগুলো তারও আগে?
- বাজারের কি উন্নতি হচ্ছে নাকি পতন?
- এই বাজারকে প্রভাবিত করার মূল ফ্যাক্টরগুলো কি কি?
- আপনার ব্যবসার ধারণা বাস্তবায়নের সু্যোগ আছে কিনা?
প্রতিযোগী
প্রতিযোগী সম্পর্কে যেই প্রশ্নগুলো আপনার মনে আসতে পারেঃ
- কোন প্রতিষ্ঠান গুলো আমার মতই কিছু প্রস্তাব দিচ্ছে?
- তারা কতটা সফল?
- কী পন্য এবং সেবা তারা প্রস্তাব দিচ্ছে?
- তাদের পন্য এবং সেবার মূল্য কত?
- কোন ধরনের প্রচারণা পদ্ধতি তারা ব্যবহার করেন?
ক্রেতা
আপনাকে বাজারের বর্তমান ও সম্ভাব্য ক্রেতাদের প্রতি নজর দিতে হবে এবং যেই ব্যপারগুলো তাদের কেনার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে তা খুঁজে বের করতে হবে।বাজার গবেষনা আপনাকে নিচের উল্লেখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে সাহায্য করবেঃ
- কোন ধরনের ক্রেতারা আমার পন্য এবং সেবা কিনতে চাইবে?
- তারা কোন কোন শ্রেনী তে পড়ে?
- কত মূল্য দিয়ে তারা কিনতে ইচ্ছুক হবে?
- কতটা পরিমাণ এবং কত দিন পর পর তারা এই ধরনের পন্য এবং সেবা কিনে?
আপনার ব্যবসায়কে সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে -
গবেষণার সেরা ফলাফল পেতে, আপনাকে সুনির্দিষ্ট করতে হবে আপনি এই গবেষণা থেকে কী কী তথ্য পেতে চান।কিছু তথ্য বের করা সহজ হবে আবার কিছু কঠিন হবে।
কোন গোপন বা সহজ পন্থা নেই যার মাধ্যমে বাজার গবেষনা কতটা করতে হবে তা ঠিক করা যায়, আসলে এটা আপনার ব্যবসায়ের প্রকৃতি এবং আপনার সিদ্ধান্ত নিতে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে কতটা সময় লাগে তার উপর নির্ভর করে।
এটা অসম্ভব যে আপনি যে তথ্য চান তা পাবেন।আপনার ঝুঁকির পরিমাণ নির্ণয় এবং আপনার ব্যবসায়কে সঠিকভাবে পরিচালনা করার সিদ্ধান্তের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করাই যথেষ্ট।
বাজারে টিকে থাকার জন্যই বাজার গবেষণা:-
প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে মানুষের অনেক চাহিদাই অপ্রকাশিত। বিশ্বে গাড়ির সবচেয়ে বড় কোম্পানির (উবার) নিজস্ব কোনো গাড়ি থাকবে না, সেটা কি কেউ কখনো কল্পনা করেছিল? কল্পনাশক্তি দিয়ে যা ভাবা কঠিন, কিন্তু বাস্তবে সম্ভব হতে পারে, এমন বিষয়গুলোর জন্যই বাজার গবেষণা করতে হয়। বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন গবেষণার সর্বোচ্চ ধাপ হিসেবে মানুষের সৃজনশীল কল্পনাশক্তিকে বিশ্বাস করতেন।
আজ যে পণ্য মানুষের চাহিদা পূরণ করছে, কাল সেটা বাজার থেকে পুরোপুরি হারিয়ে যেতে পারে। ব্যবসার সার্বিক মুনাফার কিংবা টিকে থাকার লড়াইয়ের সঙ্গে বাজার বিশ্লেষণ করার সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি গভীর। কে ক্রেতা আর কে ভোক্তা কিংবা ইন্ডাস্ট্রির কোন ধাপের সঙ্গে নিজের পণ্যটি যাচ্ছে অথবা বাজারে এই পণ্যের মার্কেট শেয়ার কতটুকু আছে এবং ভবিষ্যৎ অবস্থান কী হতে যাচ্ছে—এই সবকিছুর সঙ্গে পর্যাপ্ত তথ্যের কার্যকরী গবেষণা জরুরি।
আবার হতে পারে, প্রতিযোগীদের পণ্যের চেয়ে আপনার পণ্যটি বিশেষ কী সুবিধা নিয়ে আসছে, সেটির যথার্থ প্রচার না করেই আপনি বাজারে পণ্য ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছেন। যা কিছু অন্যের থেকে ভিন্ন, সেটি ক্রেতাদের বোঝাতে হবে। অন্যথায় পণ্য তার বাজার তৈরিই করে নিতে পারবে না। পণ্যের জন্য বাজার গবেষণার কয়েকটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হতে পারে:
১. পণ্য অনুযায়ী বাজার ও প্রতিযোগীকে বোঝা
২. আমার ক্রেতা কারা, সেটি সঠিকভাবে অনুধাবন করা
৩. প্রতিযোগীদের তুলনায় আমার পণ্য কী কী বিশেষ সুবিধা দেবে, তা নির্ধারণ
৪. পণ্য বাজারজাতকরণের কৌশল নির্ধারণ
৫. সার্বিক বিচার বিশ্লেষণের পর পণ্যের প্রচারণা শুরু করা
স্বনামধন্য মার্কিন প্রকৌশলী ও শিক্ষক ডব্লিউ এডওয়ার্ড ডেমিংয়ের মতে, ‘তথ্য ছাড়া আপনি শুধুই ভিন্নমতের একজন মানুষ মাত্র।’ বাজার গবেষণার প্রথম ধাপেই আপনাকে নিজের পণ্যের বাজার বুঝতে হবে এবং সেই বাজারে কারা আপনার শক্তিশালী প্রতিযোগী, তাঁদের শনাক্ত করতে হবে। প্রতিযোগীদের ব্যবসার কৌশল বুঝে তাঁদের দুর্বল দিক এবং মূল শক্তিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করতে হবে।
যে ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার ব্যবসার পণ্য বা সেবাটি অবস্থান করছে, সেই ইন্ডাস্ট্রিকে বিশ্লেষণ করে বাজারে আপনার এবং প্রতিযোগীদের পণ্যের মার্কেট শেয়ার নিরূপণ করতে হবে। এ সবকিছু করার সময় আপনার ‘টার্গেট কাস্টমার’ কারা, সেটি নির্ধারণ করে ফেলুন। প্রতিযোগীদের তুলনায় আপনার পণ্য বা সেবা কী এমন বিশেষত্ব নিয়ে বাজারে হাজির হয়েছে, সেটি স্পষ্ট থাকতে হবে। অবশ্যই বাজারে টিকে থাকতে হলে অন্যের তুলনায় কিছু বিশেষত্ব থাকতেই হবে।
এবার আপনাকে কৌশলী হতে হবে। কীভাবে আপনি আপনার পণ্য বা সেবা বাজারজাতকরণ করবেন, সে ক্ষেত্রে বিশেষ কী আকর্ষণ রাখা যায়, যা ক্রেতাদের আপনার পণ্যের প্রতি আগ্রহী করে তুলবে, সে বিষয়ে একটি পরিকল্পনা গুছিয়ে ফেলতে হবে। সার্বিক বিচার-বিশ্লেষণের পর আপনি আপনার পণ্যের প্রচারণা শুরু করতে পারেন।
Post a Comment