ভারতের মুর্শিদাবাদে যেমন আছেন মীর জাফরের বংশধর

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মীর জাফরের বংশধর এখনো মুর্শিদাবাদে বসবাস করেন। ছবিতে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তিনি মীরজাফরের ৮ম বংশধর। নাম মীর জাফর আলম খাঁ। পেশায় একজন শিক্ষক। বর্তমানে অবসরে আছেন।

উপরের ছবিতে যে পুরানো দেউড়ি দেখা যাচ্ছে এটাকে বর্তমানে নেমকহারাম দেউড়ি নামে সবাই চেনে। আসলে এটি মীর জাফর আলী খাঁর বাড়ির প্রধান ফটক। এই এলাকাটির নাম জাফর গঞ্জ। মীর জাফর আলী খাঁ ইংরেজ বেনিয়াদের সাথে যুক্ত হয়ে নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করে স্বাধীন বাংলার পতন করে ইংরেজদের হাতে দেশ তুলে দেয়াটা মানুষ আজো মেনে নিতে পারে নাই, যে কারণে ঘৃণাভরে এই বাড়ির ফটককে সবাই নেমকহারাম দেউড়ি নামে ডাকে। নেমকহারাম অর্থ বিশ্বসঘাতক আর দেউড়ি শব্দের অর্থ দরজা এক কথায় বিশ্বাসঘাতকের দরজা।

উপরের ছবিতে যে বাড়ি দেখা যাচ্ছে মীর জাফরের বংশধররা এই বাড়িতেই বসবাস করতেন কিন্তু এই বাড়ি দেখতে এসে লোকজন বিশ্বাস ঘাতকের বাড়ি বলে অহরহ গালাগালি করায় পূর্ব পুরুষের বিশ্বাসঘাতকতার গ্লানী আর লজ্জায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে না পারায় অনেক দিন হলো তারা এ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।

বর্তমানে মীর জাফর আলম খাঁ নবাব প্যালেসের বাইরে এসে নিজে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন। উপরের বাড়িটি মীর জাফর আলম খাঁর।
মীর জাফরের বর্তমান প্রজন্ম খুবই ভদ্র নম্র হওয়া সত্বেও মানুষের কাছে সহজে উন্মুক্ত হতে পারছেন না। মীর জাফরের বিশ্বাসঘতকতার মাধ্যমে স্বাধীন বাংলার পতন এবং ইংরেজদের হাতে দেশের স্বাধীনতা চলে যাওয়ায় আজো মানুষ মীর জাফরের নামটি ঘৃণাভরে উচ্চারণ করে। যার গ্লানি জন্ম জন্মান্তর ধরে এই বংশকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
মানুষের গালাগালি সহ্য করতে না পেরে মীর জাফরের পক্ষে অর্থাৎ মীর জাফর আলী খাঁ বিশ্বাস ঘাতক ছিলেন না এমন কিছু যুক্তি দেখিয়ে পুরানো নথিপত্র ঘেটে একটি বই লিখেছিলেন। ৮ম প্রজন্মের মীর জাফর আলম খাঁ বইটি লিখে প্রকাশ করার পর আনন্দ বাজার পত্রিকার সাংবাদিক এসে তাঁকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করায় কুলাতে না পেরে বাধ্য হয়ে তিনি আবার বইটি প্রকাশনা বন্ধ করে দেন।
মীর জাফর আলী খাঁ বিশ্বাস ঘাতক ছিলেন না– এটা তিনি কি করে প্রমাণ করবেন? পলাশীর যুদ্ধে মীর মদন ইংরেজ সৈন্যদের বিরুদ্ধে মাত্র তিন হাজার সৈন্য নিয়ে প্রাণপণ যুদ্ধ করে নিহত হন অথচ মীর জাফর তার ৫০ হাজার পদাতিক, ঘোর সওয়ার ও গোলন্দাজ বাহিনী নিয়ে অনড় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার এই যু্দ্ধ না করার বিশ্বাসঘাতকতা ইতিহাস থেকে কি করে মুছবেন? যদি সেইদিন পলাশীর যুদ্ধে মীর জাফর বিশ্বাস ঘাতকতা না করতো তাহলে আজ বাংলাদেশটা পৃথিবীর বুকে দুই লক্ষ বর্গ মাইলের একটি বড়সর উন্নত দেশ হিসাবে পরিচিতি পেত।

ছবি: সালাহউদ্দিন সুমন

0/Post a Comment/Comments