ভাব-সম্প্রসারণ: কেরোসিন শিখা বলে মাটির প্রদীপে/ভাই বলে ডাক যদি দেব গলা টিপে/হেন কালে আকাশেতে উঠিলেন চাঁদা/কেরোসিন শিখা বলে- “এসো মোর দাদা।”


"কেরোসিন শিখা বলে মাটির প্রদীপে,
ভাই বলে ডাক যদি দেব গলা টিপে,
হেন কালে আকাশেতে উঠিলেন চাঁদা,
কেরোসিন শিখা বলে- “এসো মোর দাদা।”

মূলভাব : বিত্তশালী মানুষদের প্রতি অনুরাগ এবং নিজের থেকে বিত্তহীন স্তরের মানুষদের প্রতি অবজ্ঞা, মানবসমাজের এক শ্রেণির মানুষের দুর্বল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।
সম্প্রসারিত ভাব : পৃথিবীতে মানব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য রহস্যময়। আমাদের এই সমাজে মানুষ সবসময় চেষ্টা করে সমাজের ওপরের স্তরের মানুষের সঙ্গে আত্মীয়তা স্হাপন করতে।নিজেদের নীচের তলার মানুষের দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না । আত্মীয় হলেও তাকে উপেক্ষা করে চলে। মূলত মানুষ নিজের চেয়ে অবস্থানে ছোটোদের চরমভাবে অস্বীকার করে, আর বড়োদের তোষামদ করে আপন করে নিতে চায়। পদমর্যাদা ও সামাজিক অবস্থান মানুষকে অন্ধ করে দেয়। এর প্রলোভনে মানুষ নিজের আপন মানুষকে দূরে ঠেলে দিয়ে, দূরের মানুষকে আপন করার চেষ্টা করে। এতে করে সে তার নিজস্বতাকে হারিয়ে ফেলে, কিছুই অর্জন করতে পারে না।
প্রকৃতির অমোঘ নিয়মেই প্রকৃতিতে আমরা আলো এবং অন্ধকারের উপস্থিতি দেখতে পাই। প্রতিনিয়ত যথা সময়ে দিনের শেষে পৃথিবী অন্ধকারের কালো চাঁদরে ঢেকে যায়। রাতের আঁধার কাটলে সকালে পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশ আবার সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়। প্রাকৃতিক নিয়মেই এমনটা ঘটে। দিনের স্নিগ্ধতা আর রাতের কোমলতা এসব কিছুকে সৃষ্টিকর্তার অফুরন্ত নিয়ামত হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। সুন্দর এই পৃথিবীতে পরস্পর বিপরীতধর্মী বিষয় ও বস্তুসমূহের মধ্যে তীব্র আকর্ষণ বিরাজ করে। এসব উপাদানের দ্বান্দ্বিক পালা বদল প্রক্রিয়া সর্বদা সচল এবং অস্তিত্বমান। জন্ম-মৃত্যু, সৃষ্টি-ধ্বংস, আলো-আঁধার, আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ এসব কিছুই পরস্পরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, যদিও বৈশিষ্ট্যগতভাবে এরা একে অপরের বিপরীত। সৃষ্টির প্রতিটি জীবের কাছে নিজের জীবন অমূল্য সম্পদ। জন্মের পর মৃত্যু অবধারিত বলেই বেঁচে থাকাটা এত মধুর।  মানুষ যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে শুধুমাত্র তখনই সুস্থতার গুরুত্ব বুঝতে পারে। সেজন্যেই মানুষ তার সুস্বাস্থ্য রক্ষা করতে চায়। সুখ-দুঃখও তেমন বিপরীতধর্মী উপাদান বলে একে অপরের পরিপূরক। দুঃখ মানুষের মনকে যদি ব্যথিত করতে না পারতো তাহলে মানুষ সুখ ও আনন্দবোধের মর্ম বুঝতে পারতো না। সুখ লাভের আশায় মানুষ দুঃখ-কষ্টকে হাসিমুখে আলিঙ্গন করতে রাজি হয়। ঠিক একইভাবে প্রকৃতিতে অন্ধকারের উপস্থিতি আছে বলেই আলো এত মহিমাময়। অন্ধকার না থাকলে আলোর গৌরব এবং দীপ্তি এসব কিছুই ম্লান হয়ে যেত।

0/Post a Comment/Comments