জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ এর উদ্দেশ্য অর্জনে শিক্ষার্থী-কেন্দ্রীক শিখন শেখানো পদ্ধতি-কৌশল প্রয়োগে সমস্যা এবং সম্ভাবনাঃ
মোঃ শাহজাহান
কন্ট্রোলার অব পাবলিকেশন্স,
বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড,
প্রাক্তন শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ,
এনসিটিবি, ফোকাল পয়েন্ট, UNICEF, NCTB
বাংলাদেশে মাধ্যমিক স্তরে (নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি) জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ উন্নয়ন এক যুগান্তকারী ঘটনা। ১৯৯৫-১৯৯৬ সালে মাধ্যমিক শিক্ষার শিক্ষাক্রম উন্নয়নের পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়। এরই মধ্যে জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের জগতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হলেও এসব পরিবর্তনকে ধারণ করে যুগের চাহিদা পূরণের উপযোগী শিক্ষাক্রম উন্নয়ন কিংবা সংস্কার সম্ভব হয়ে উঠেনি।
২০০৫ সালে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (SESIP) এর আওতায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (NCTB) কর্তৃক মাধ্যমিক স্তরের জন্য একমুখী শিক্ষাক্রম উন্নয়ন করা হলেও উপকারভোগীদের প্রবল আপত্তির মুখে তা পরিত্যাক্ত হয়। এরপর রাজনৈতিক পট পরিবর্তন এবং নতুন সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়। এ সরকার আগামী প্রজন্মকে নৈতিক মূল্যবোধ, জাতীয় ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন করে। এ শিক্ষানীতির মর্মকথা হচ্ছে, জাতীয় লক্ষ্য পূরণ তথা ২০১১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার প্রধান উপায় হিসেবে শিক্ষার মাধ্যমে যথোপযুক্ত জনশক্তি সৃষ্টি করা। আর শিক্ষার মাধ্যমে তা করার জন্য দরকার প্রচলিত শিক্ষাক্রমের সংস্কার কিংবা উন্নয়ন সাধন। অর্থাত্ জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন পর্যায়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম (৬ষ্ঠ থেকে ৮ম এবং নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি) সংস্কার কিংবা উন্নয়ন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এরই প্রেক্ষিতে জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ উন্নয়ন করা হয়। ২০১২ শিক্ষাবর্ষে উক্ত শিক্ষাক্রম আংশিক বাস্তবায়ন করা হয়। ২০১৩ শিক্ষাবর্ষে ১ম থেকে নবম শ্রেণিতে সকল বিষয়ে নতুন পাঠ্যবই প্রচলন এবং ২০১৩ সালের জুলাই মাস থেকে একাদশ শ্রেণির নতুন পাঠ্যবই বাজারে ছেড়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ পুর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ উন্নয়ন: প্রেক্ষিত ও প্রক্রিয়া
একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রাথমিক স্তরের ধারাবাহিকতায় মাধ্যমিক স্তরের জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ উন্নয়নে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (NCTB) এক বিরাট কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করে। এর অংশ হিসেবে এনসিটিবি-
মাধ্যমিক স্তরের প্রচলিত শিক্ষাক্রম মূল্যায়ন ও চাহিদা নিরূপণ সমীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা।
জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এ বর্ণিত মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কিত ধারাসমূহ পর্যালোচনা করা। বিশ্বের কয়েকটি নির্বাচিত দেশের ( ভারত, শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য এবং কানাডা) শিক্ষাক্রম পর্যালোচনা করা।
শিক্ষাক্রম বিষয়ক দেশে ও বিদেশে প্রকাশিত প্রতিবেদন, প্রবন্ধ ও রচনাসমগ্র পর্যালোচনা করা। একবিংশ শতাব্দির জন্য গঠিত শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট-এ (Learning The Treasure Within) বর্ণিত শিক্ষার ০৪ (চার) টি স্তম্ভ যথা- জানতে শেখা, কাজ করতে শেখা, মিলেমিশে বসবাস করতে শেখা এবং নিজকে বিকাশিত করার জন্য শেখা; বাস্তবায়নের উপায় উদ্ভাবন করা ইত্যাদি কার্যাদি সম্পন্ন করে।
উল্লেখিত কার্যাদি সম্পাদন করে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে এনসিটিবি মাধ্যমিক শিক্ষার সাধারণ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে। পরবর্তীতে ঐ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ অর্জন উপযোগী শ্রেণিভিত্তিক বিষয় এবং প্রতিটি বিষয়ের উদ্দেশ্য, শিখনফল, বিষয়বস্তু, শিখন-শেখানো কার্যাবলি ও মূল্যায়ন কৌশল বিন্যস্ত করা হয়। শ্রেণিভিত্তিক শিখনফলকে বুদ্ধিবৃত্তীয় (Cognitive), আবেগীয় (Affective), মনোপেশিজ (Psychomotor) এ ০৩ (তিন)টি ভাগে বিভাজন করে সজ্জিত করা হয়। শিক্ষাক্রম উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় উপরে বর্ণিত বিষয়াদি নির্ধারণে এনসিটিবি বিশ্বের বহু দেশের ন্যায় Objective Model অনুসরণ করে। মাধ্যমিক স্তরের জন্য উন্নয়নকৃত জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ এর লক্ষ্য ও প্রধান প্রধান উদ্দেশ্য। পরবর্তী পর্ব আগামীকাল
Post a Comment