শ্রেণি কক্ষে শিক্ষা-উপকরণের প্রয়োজনীয়তা: ডলি

বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে কম্পিউটার, ওভারহেড প্রজেক্টার, অডিও কনসোল, ক্যাসেট প্লেয়ারসহ নানা ধরণের উপকরণ থাকা সত্বেও দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষকের অভাবে তা যথাযথভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষকের আন্তরিকতায় শিক্ষার্থীদের দিয়ে আশে পাশের পরিবেশ থেকে সহজে পাওয়া যায় এমন সামগ্রী দিয়ে উপকরণ তৈরির ব্যবস্থা করা উচিত। কারণ সব সময় শ্রেণী কক্ষে দামি উপকরণ ব্যবহার করতে হবে এমন কোন
কথা নেই। আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন ধরনের উপাদান দিয়ে হাতে তৈরি শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করে পাঠদান করার চেষ্টা করতে হবে। এতে করে শিক্ষার্থীরা উদ্ভাবনী ও সৃষ্টিশীল হবে এবং আর্থিকভাবে উভয়ের সাশ্রয় হবে।

শিক্ষার্থীদের কাছে বিষয়টি এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যেন তাদের মনে স্থায়ীভাবে দাগ কাটে এবং তাদের জ্ঞানের ভান্ডারে জমা হয়। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা উপকরণ ছাড়া সফলতা পাওয়া অনেক কঠিন। শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করার ফলে শিক্ষার্থীদের মনে যে ধারণা সৃষ্টি হয় এর ফলে তাদের বুদ্ধিবৃত্তি জাগ্রত হয় এবং পরবর্তীতে সে পাঠ্যবিষয় মুখস্থ না করে যুক্তি ও বুদ্ধির সাহায্যে যে কোন বিষয় আয়ত্ব করতে সক্ষম হয়। উপকরণ ব্যবহার করে অল্প সময়ে অল্প কথায় শিক্ষার্থীদের মনে সাড়া জাগানো যায় এবং শিক্ষকবৃন্দের সময় কম লাগে। কঠিন ও জটিল বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে পাঠের প্রতি মনোযোগ ধরে রাখা অনেক সহজ হয়। অনেক সময় দেখা যায় শিক্ষার্থীরা শ্রেণি কক্ষে হইচই করে, শিক্ষক তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না এটা শিক্ষকের একটি দুর্বল দিক। উপকরণ ব্যবহার করার ফলে শিক্ষার্থীরা হাতে কলমে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ লাভ করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারের ফলে দেখে শিখতে পারে ৮৩% এবং শুনে বা শুধু আলোচনার মাধ্যমে শিখতে পারে মাত্র ১১%।
আমি যখন সিইনএড কোর্সে ভর্তি হয়েছিলাম সেই সময় বুঝতে পারলাম যে, শ্রেণি কক্ষে একজন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষা উপকরণ কতটা প্রয়োজন । শিক্ষার্থীদের যে বিষয় পাঠদান করা হবে সেই বিষয়টিকে সুন্দরভাবে বুঝানোর জন্য তাদের মনে বিষয়টি স্থায়ীভাবে গেথেঁ দেওয়ার জন্য সর্বপ্রথম ১৯০১ সালে স্যার জন এডাম (ইংল্যান্ডের অধিবাসী) সর্বপ্রথম শ্রেণীকক্ষে শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারের নীতিমালা প্রণয়ন করেন। শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারের ফলে শিক্ষা
কার্যক্রমকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলে। এর মাধ্যমে শিখনের বিষয় বস্তু তাদের কাছে অনেক সহজ মনে হয় এবং বিষয়টি সহজেই আয়ত্ব করতে পারে। একটি প্রবাদ আছে যে, “দশ হাজার শব্দ ব্যবহার করে যা বোঝানো যায় না, একটি মাত্র ভাল ছবির সাহায্যে তা অনায়াসে বোঝানো যায়’ এ কথা থেকে বোঝা যায় শিক্ষা উপকরণের গুরুত্ব কত বেশি।

বর্তমানে যা দেখা যায় এক জন ছাত্র-ছাত্রীর গৃহশিক্ষক এবং কোচিং মিলিয়ে দিনে ৪, ৫ বা ৬টি জায়গাতেও পড়তে যেতে হয়। এতে শিক্ষার্থীদের বাসায় যে একটি নির্দিষ্ট সময় তার পড়া প্রয়োজন সে সময়টুকুও পায় না। এক সময় দেখা যায় তারা শুধু প্রাইভেট বা কোচিং নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। সম্মানিত অভিভাবকগণও ছেলে বা মেয়েদের মেধা কতটুকু বা তার পড়াগুলো আয়ত্ত্ব করার দক্ষতা কেমন; এ বিষয়গুলো বিবেচনা না করে, পরীক্ষার ফলাফল যদি খারাপ করে তাহলে তার উপরে নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে এমনকি অনেকেই শারীরিকভাবেও আঘাত করে থাকে।
শ্রেণি কক্ষের ভিতরেই উপকরণ রাখার ব্যবস্থা করলে সবচেয়ে ভালো হয়, এতে করে সহজেই শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর উপকরণগুলো ব্যবহার করতে পারবে। শ্রেণি কক্ষে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আলমারী, শোকেস, ড্রয়িং টেবিল, র‌্যাক, বুলেটিন বোর্ড ইত্যাদি রাখা দরকার। নিজেদের বিভিন্ন অঙ্কিত ছবি, চার্ট, বিশ্বের মানচিত্র ও নিজ জেলার মানচিত্র শ্রেণি কক্ষের দেওয়ালে টানিয়ে রাখতে হবে। উপকরণগুলো কোন বাক্সে বা ড্রয়ারে লক করে রাখা উচিত নয়, এগুলো এমনভাবে রাখতে হবে যেন ব্যবহারের সময় সহজেই ব্যবহার করা যায়। উপকরণের হিসাব-নিকাশ যথাযথভাবে রাখার জন্য বিষয় ভিত্তিক ষ্টক রেজিষ্টার চালু করা উচিত। উপকরণ ব্যবহার শেষে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন জায়গায় রাখতে হবে। তাই বলা যায় শিক্ষা উপকরণের যথাযথ ব্যবহারের ফলে পড়াশুনার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করানো সম্ভব ।

0/Post a Comment/Comments