শিক্ষাবিজ্ঞান কী? কেন?

 প্রহ্লাদ রায়

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। অথচ, শিক্ষাদানের পদ্ধতির যে বিজ্ঞান, তার  চর্চায় আগ্রহ নেই বাংলার। এতদিন শিক্ষাবিজ্ঞান বা এডুকেশন নিয়ে পড়াশোনা করায় অনীহা দেখিয়েছি আমরা। আজ তারই ফল ভুগতে হচ্ছে। স্কুলে শিক্ষকতার জন্য বিএড আবশ্যিক হওয়ার পর অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি বিএড কলেজ খুলেছে রাজ্যের নানা প্রান্তে। কিন্তু তাতে পড়ানোর শিক্ষক মিলছে না। অগত্যা বিহার, ওড়িশা,
উত্তরপ্রদেশ থেকে লোকজন এসে পড়াচ্ছেন এই রাজ্যের বিএড কলেজগুলিতে। এই তথ্যটুকুই বলে দেয় শিক্ষাবিজ্ঞান নিয়ে পড়ে কাজের সুযোগ কতটা।
বিএড কলেজ ছাড়াও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাবিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষকতার সুযোগ প্রচুর। কিন্তু তা নিয়ে আলোচনার আগে একটা বিষয় স্পষ্ট করে দেওয়া দরকার। সেটা হল বিএড আর এডুকেশনে বিএ—এই দু’টো কোর্স আলাদা। ইতিহাস, বাংলার মতো ‘জেনারেল’ বিষয় এডুকেশন বা শিক্ষাবিজ্ঞান। এটার বিএ, অনার্স কোর্সে সামগ্রিক ভাবে শিক্ষার বিজ্ঞান নিয়ে নাড়াচাড়া। বিএড  বা ব্যাচেলর ইন এডুকেশন (যেটা স্কুলে শিক্ষকতা করার জন্য আবশ্যিক) কিন্তু পেশাদারি কোর্স। সেখানে শিক্ষার বিজ্ঞানের তুলনায় শিক্ষাদানের পদ্ধতি বা শিক্ষকতা করার উপরেই গুরুত্ব দেওয়া হয় বেশি। প্রাথমিকে শিক্ষকতার জন্য ডিএড (ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টারি এডুকেশন), মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের জন্য বিএড (ব্যাচেলর ইন এডুকেশন) আর বিএড কলেজে পড়ানোর জন্য এমএড (মাস্টার ইন এডুকেশন) পাশ করতে হয়। শিক্ষাবিজ্ঞানে বিএ অনার্স পাশ করার পরে কেউ যদি স্কুলে শিক্ষকতা করতে চান, তাঁকে কিন্তু আলাদা করে বিএড কোর্স পাশ করতে হবে। দু’টোর বিষয়বস্তুর মধ্যে কিছু মিল থাকলেও ডিগ্রি আলাদা। তবে এডুকেশনে এমএ পাশ করলে সেটা এমএড-এর সমতুল্য বলেই ধরা হয়।
এই রাজ্যের কলকাতা, যাদবপুর, বিশ্বভারতী-সহ গৌড়বঙ্গ, উত্তরবঙ্গ, বিদ্যাসাগর, বর্ধমান—প্রায় সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষাবিজ্ঞান পড়া যায়। কলকাতার বাসন্তী দেবী, গোখেল মেমোরিয়াল,  বিধাননগর কলেজ, ক্যালকাটা গার্লস থেকে জেলায় কল্যাণী মহাবিদ্যালয়, বর্ধমানের মেমারি, বোলপুরের পূর্ণিদেবী চৌধুরী, পুরুলিয়ার জে কে কলেজ, পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া গভর্নমেন্ট, মহিষাদল গার্লস, পাঁশকুড়া বনমালী, উত্তরবঙ্গের ফালাকাটা, কালিয়াচক—প্রায় একশো র মতো কলেজে শিক্ষাবিজ্ঞান পড়ানো হয় ব্যাচেলর কোর্সে। এমএ পড়ার সুযোগ আগে কম থাকলেও এখন প্রায় সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে বা শুরু হচ্ছে।  বিশ্বভারতীয় বিনয় ভবনে অবশ্য বিএ, অনার্স করা যায় না। এমএ, বিএড, এমএড পড়া যায়।
শিক্ষাবিজ্ঞানে স্নাতক, অনার্স পড়ার জন্য দ্বাদশ ক্লাসে যে বিষয়টি থাকতেই হবে, এমন কোনও কথা নেই। খুব কম স্কুলে বিষয়টি আছে। তাই কলাবিভাগ তো বটেই, বাণিজ্য, বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়ারাও  শিক্ষাবিজ্ঞানে স্নাতক অনার্স কোর্সে ভর্তি হতে পারে। মোট নম্বর এক-এক কলেজে এক-এক রকম চায়।
তিন বছরের ব্যাচেলর কোর্সে শিক্ষার সামাজিক ভিত্তি, মনস্তাত্বিক ভিত্তি, শিক্ষাবিজ্ঞানের ইতিহাস, ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদির পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষকতার পদ্ধতির পাঠ দেওয়া হয়। ফলে একটা বিষয় পড়ে নানা বিষয়ের জ্ঞান যেমন হয়, তেমনই সামাজিক, মানসিক দিক দিয়ে সর্বাঙ্গীন বিকাশ হয় পড়ুয়ার।
বিএ-র পরে এমএ, পিএইচডি। গবেষণা করতে চাইলে ফেলোশিপের অনেক সুযোগ। ইউনিসেফ, ইউনেসকো, ইউজিসি-র মতো বহু সংস্থা থেকে ফেলোশিপ পাওয়া যায় শিক্ষাবিজ্ঞানে।
লেখক: বিশ্বভারতীর বিনয় ভবনের শিক্ষা বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর।

শিক্ষাবিজ্ঞান কাকে বলে?

0/Post a Comment/Comments