**অভীক্ষা ও অভীক্ষাপদ:
শিক্ষামূলক ও মনোবৈজ্ঞানিক পরিমাপের এক ধরনের কৌশল বা উপকরণ হলো অভীক্ষা। সাধারণভাবে এক গুচ্ছ প্রশ্নকে (মৎড়ঁঢ় ড়ভ য়ঁবংঃরড়হ) অভীক্ষা বলা যায়। একটি অভীক্ষার মধ্যে সাধারণত অনেকগুলো অভীক্ষা পদ বা প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত থাকে। অভীক্ষা হলো শিক্ষার্থীর এক বা একাধিক বৈশিষ্ট্য নির্ণয়ের জন্য একগুচ্ছ প্রশ্ন বা সমস্যার সেট। যে অভীক্ষা দ্বারা শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে তাদের পঠিতব্য বিষয়ের ওপর কতটা পারদর্শিতা বা কৃতিত্ব অর্জন করতে পেরেছে তা পরিমাপ করা হয় তাকে পারদর্শিতা বা কৃতিত্ব অভীক্ষা বলে। কৃতিত্বের অভীক্ষাকে শিক্ষামূলক অভীক্ষাও বলা হয়। মনোবিদ জে.সি. নানেলি এর মতে, একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট পরিমাণ শিক্ষামূলক অগ্রগতির পরিমাপ করাই কৃতিত্ব অভীক্ষার উদ্দেশ্য।
**সু-অভীক্ষার বৈশিষ্ট্য
যে-কোন আদর্শ বা উত্তম অভীক্ষার কতকগুলো গুণ বা বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন। এগুলোর যদি অভাব থাকে তবে অভীক্ষাটিকে পরিমাপের উপকরণ হিসেবে নিখুঁত বা নির্ভরযোগ্য বলা যায় না। অভীক্ষার এই উপাদান বা শর্তগুলোকে বলা হয় সু-অভীক্ষার বৈশিষ্ট্য। নিম্নে প্রধান পাঁচটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হলো:
১. যথার্থতা : কোন অভীক্ষার যথার্থতা বলতে বুঝায়, যে গুণ বা বৈশিষ্ট্য পরিমাপ করার জন্য অভীক্ষাটি তৈরি করা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে অভীক্ষাটি নিখুঁতভাবে সেই গুণ বা বৈশিষ্ট্য পরিমাপ করতে পারছে। অর্থাৎ কোন অভীক্ষার দ্বারা যা পরিমাপ করতে চাওয়া হয়, অভীক্ষাটি যদি তা সঠিকভাবে পরিমাপ করে, তবে অভীক্ষাটি যথার্থ বলা যায়। বিজ্ঞানের একটি অভীক্ষা যদি শিক্ষার্থীর হাতের লেখা বা ভাষাজ্ঞান পরিমাপ না করে শুধু বিজ্ঞানের জ্ঞান ও দক্ষতা পরিমাপ করে তবে অভীক্ষাটির যথার্থতা রয়েছে বলা যাবে। অভীক্ষার যথার্থতা যুক্তিনির্ভর পদ্ধতিতে নির্ণয় করা হয়।
২. নির্ভরযোগ্যতা : অভীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা বলতে বোঝায় একটি অভীক্ষা কতটা নির্ভুল ও সঙ্গতিপূর্ণ ফলাফল প্রদান করতে পারে। যদি একটি অভীক্ষা একদল শিক্ষার্থীর উপর কিছুদিনের ব্যবধানে পর পর দুবার প্রয়োগ করা হয় এবং যদি দেখা যায় যে, শিক্ষার্থীদের দুই বারের ফলাফলের মধ্যে মিল আছে, তাহলে বলা যাবে অভীক্ষাটির নির্ভরযোগ্যতা রয়েছে। অভীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা গাণিতিক পদ্ধতিতে নির্ণয় করা যায়।
৩. নৈর্ব্যক্তিকতা : কোন অভীক্ষার নৈর্ব্যক্তিকতা বলতে বোঝায় যে, অভীক্ষাটির প্রস্তুতি, প্রয়োগ ও নম্বর প্রদানের ক্ষেত্রে পরীক্ষকের ব্যক্তিগত প্রভাব পড়বে না। অর্থাৎ অভীক্ষাটি নিরপেক্ষভাবে পরিমাপ করতে সমর্থ হবে।
৪. আদর্শায়ন : কোন অভীক্ষার গঠন, প্রয়োগ ও ফলাফল ব্যাখ্যার মধ্যে সঙ্গতি ও সামঞ্জস্য বিধানের ক্ষেত্রে যে কৌশল অনুসরণ করা হয়, তাকে বলা হয় আদর্শায়ন। আদর্শায়িত অভীক্ষার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর একটি আদর্শ মান বা নর্ম নির্ণয় করা হয় এবং এ মানের নিরিখে ফলাফলের ব্যাখ্যা করা হয়।
৫. পরিমিততা : অভীক্ষার পরিমিততা বলতে বোঝায় অভীক্ষাটির গঠন, প্রয়োগ এবং নম্বর প্রদানের ব্যাপারে যতটা সম্ভব কম সময়, অর্থ ও পরিশ্রম ব্যয় হয়। যে অভীক্ষার প্রয়োগে ও ফলাফল প্রদানে অনেক সময় ও অর্থ ব্যয় হয় সে অভীক্ষার পরিমিততা কম বলা চলে।
**কৃতিত্ব অভীক্ষার শ্রেণিবিভাগ:
অভীক্ষার গঠন বা ধরনের দিক থেকে বিবেচনা করলে কৃতিত্ব অভীক্ষাকে নি¤েœাক্ত শ্রেণি অনুযায়ী ভাগ করা যায়। কৃতিত্ব অভীক্ষা--- ১। লিখিত অভীক্ষা ২। মৌখিক অভীক্ষা
১। লিখিত অভীক্ষা – ক) রচনামূলক অভীক্ষা খ) নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষা
ক) রচনামূলক অভীক্ষা--- i)সংক্ষিপ্ত-উত্তর জাতীয় অভীক্ষা ii)দীর্ঘ-উত্তর জাতীয় অভীক্ষা
খ) নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষা---i)এক কথায় উত্তর ii)বহুনির্বাচনী iii) মিলকরণ iv)শূন্যস্থান পূরণ v) সত্য-মিথ্যা
**মৌখিক অভীক্ষা: এই অভীক্ষায় শিক্ষক মৌখিকভাবে প্রশ্ন করেন এবং শিক্ষার্থীরা মৌখিকভাবেই উত্তর দিয়ে থাকেন। এ জাতীয় পরীক্ষায় এক বা একাধিক বিষয় হতে ধারাবাহিকভাবে বা এলোমেলোভাবে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। শিক্ষক শ্রেণিতে মৌখিকভাবে বিভিন্ন প্রশ্ন করে থাকেন। এগুলোও মৌখিক অভীক্ষার অন্তর্ভুক্ত। এ জাতীয় অভীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর উপস্থিত বুদ্ধি, প্রত্যুৎপন্যমতিত্য, ভাষা, উচ্চারণ এবং শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তবে ব্যক্তিগতভাবে পরিচালিত হয় বলে বেশ সময় সাপেক্ষ এবং এক্ষেত্রে শিক্ষকের ব্যক্তিগত প্রভাব থাকার সম্ভাবনা থাকে। ফলে অভীক্ষার নৈর্ব্যক্তিকতা হারানোর সুযোগ থাকে।
**লিখিত অভীক্ষা: যে অভীক্ষায় শিক্ষার্থীরা লিখে উত্তর দেয় তাই লিখিত অভীক্ষা। লিখিত অভীক্ষা দুই ধরনের হয়। কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষা ও নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষা।
**কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষা: কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষা আবার দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যথা: সংক্ষিপ্ত-উত্তর জাতীয় অভীক্ষা এবং দীর্ঘ-উত্তর জাতীয় অভীক্ষা। সংক্ষিপ্ত-উত্তর জাতীয় কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষায় এমনভাবে প্রশ্ন করা হয় যাতে উত্তর দিতে হয় সংক্ষেপে। এক্ষেত্রে সমস্যা বা অভীক্ষাপদটির উত্তর লেখার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর স্বাধীনতা অপেক্ষাকৃত কম। যেমন- কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষা কত প্রকার ও কী কী? পাঁচটি ফলের নাম লিখ ইত্যাদি। দীর্ঘ-উত্তর জাতীয় কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষায় প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় বিশদ আকারে। এজন্য সময় ও নম্বর উভয়ই বেশি দেয়া হয়। এখানে শিক্ষার্থীরা লেখার ক্ষেত্রে অপেক্ষোকৃত বেশি স্বাধীনতা পেয়ে থাকে। এখানে বিভিন্ন ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ, পার্থক্য, বর্ণনা জাতীয় প্রশ্ন করা হয়ে থাকে।
**নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষা: যে সব অভীক্ষাপদে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েরই ব্যক্তিগত প্রভাব আসার সম্ভাবনা থাকে না তাদেরকে নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষা বলা হয়। অভীক্ষার নৈর্ব্যক্তিকতা বজায় থাকে বলেই একে নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষা বলা হয়ে থাকে। প্রচলিত রচনামূলক প্রশ্নের অসুবিধাগুলো দূর করার উদ্দেশ্যেই মূলত নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার প্রচলন শুরু হয়েছে। নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নে নির্ভরযোগ্যতা ও যথার্থতা উভয়ই রক্ষিত হয়। নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন- এক কথায় উত্তর, বহুনির্বাচনী, মিলকরণ, শূন্যস্থান পূরণ, সত্য-মিথ্যা ইত্যাদি।
>>নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষা
*নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষাপদ কী ?
যে সব অভীক্ষাপদ বা প্রশ্নে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েই ব্যক্তিগত প্রভাব আসার সম্ভাবনা থাকে না তাদেরকে নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষা বলা হয়। অভীক্ষার নৈর্ব্যক্তিকতা বজায় থাকে বলেই একে নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষা বলা হয়ে থাকে। প্রচলিত রচনামূলক প্রশ্নের অসুবিধাগুলো দূর করার উদ্দেশ্যেই মূলত নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার প্রচলন শুরু হয়েছে। নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নে নির্ভরযোগ্যতা ও যথার্থতা উভয়ই রক্ষিত হয়।
>নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার প্রকারভেদ:
সাধারণত: নিন্মবর্ণিত পাঁচ ধরনের নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার প্রচলন রয়েছে।
১. সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
২. শূণ্যস্থান পূরণ প্রশ্ন
৩. সত্য-মিথ্যা নির্ণয়
৪. মিলকরণ প্রশ্ন
৫. বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
>> বহু নির্বাচনী প্রশ্ন:
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন অন্যান্য প্রকারের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের তুলনায় অনেক বেশি ব্যবহৃত হয়। কারণ বহু নির্বাচনী প্রশ্ন অন্য যে কোন প্রকার নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের তুলনায় অধিক নির্ভরযোগ্য। এ ছাড়া জ্ঞানের বিভিন্ন স্তরের অর্থাৎ জ্ঞান, উপলব্ধি, প্রয়োগ ইত্যাদির উপযোগী বহু নির্বাচনী প্রশ্ন তৈরি করা যায়।
>বহু নির্বাচনী প্রশ্নের উদাহরণ
বহু নির্বাচনী প্রশ্নের প্রধানত দুটি অংশ থাকে। মূল অংশে (ঝঞঊগ) থাকে একটি প্রশ্ন বা সমস্যা এবং নিচে ৪/৫টি বিকল্প উত্তর দেওয়া থাকে। এই বিকল্প উত্তরগুলোর মধ্যে একটি মাত্র উত্তর সঠিক (কবু) এবং বাকিগুলো ভুল উত্তর বা বিচলক
>প্রশ্নটিকে বলে (কোনটি শীতকালীন ফুল?) --- Stem
>উত্তর(ক,খ,গ,ঘ) গুলিকে বলে --- options
>সঠিক উত্তর কে বলে ---key (ঘ. ডালিয়া)
>আর বাকি ৩টি কে বলে --- Distracter (ক. মোরগফুল খ. সূর্যমুখী গ. দোপাটি)
** কোনটি শীতকালীন ফুল?
ক. মোরগফুল
খ. সূর্যমুখী
গ. দোপাটি
ঘ. ডালিয়া
>>বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য গুলো নিন্মরূপ:
১. স্টেম সরাসরি প্রশ্ন আকারে হবে অথবা একটি সম্পূর্ণ বাক্য বা উক্তি হতে পারে।
২. কবু -এর মাধ্যমে সঠিক উত্তরটি নিশ্চিত করতে হয়।
৩. সব বিকল্প উত্তর একই কাঠামোর হবে। (যেমন- বাক্য, শব্দগুচ্ছ সব একই দৈর্ঘ্যরে হতে হবে)।
৪. বিকল্প উত্তরগুলো সমগোত্রীয় হবে।
৫. উত্তরগুলো যৌক্তিকভাবে সাজাতে হবে।
৬. উত্তরগুলো প্রশ্নের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
৭. না বাচক বাক্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
৮. প্রশ্নের উত্তর খোঁজার ক্ষেত্রে কোন সূত্র রাখা যাবে না।
৯. প্রশ্নের মধ্যে শুদ্ধ উত্তরগুলোর অবস্থান ভিন্ন হতে হবে যাতে কোন প্যাটার্ন খুঁজে পাওয়া না যায়।
১০. প্রশ্নগুলো যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত হবে।
১১. দ্ব্যর্থবোধক বা চালাকি প্রশ্ন না করাই ভালো।
>>উত্তম বহুনির্বাচনী অভীক্ষাপদ প্রণয়নের নীতিমালা
বিভিন্ন প্রকার নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার মধ্যে বহু নির্বাচনী প্রশ্ন (গঈছ) বর্তমানে বহুল প্রচলিত ও ব্যবহৃত। এ জাতীয় প্রশ্নের দ্বারা শিক্ষার্থীর জ্ঞান, অনুধাবন ও প্রয়োগ স্তরের আচরণ সহজেই পরিমাপ করা যায়।
>উত্তম বহুনির্বাচনী প্রশ্ন প্রণয়নের নীতিমালা:
(১) প্রশ্নের মূল অংশে একটি সরাসরি প্রশ্ন বা অসম্পূর্ণ বাক্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে প্রশ্নের মূল অংশ অর্থপূর্ণ হলে ভাল হয়।
(২) সমস্যাটিকে সুস্পষ্ট করার জন্য যতটুকু তথ্য দরকার ঠিক ততটুকুই প্রশ্নের মূল অংশে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অর্থাৎ প্রশ্নের মূল অংশের ভাষা হবে সহজ, সংক্ষিপ্ত ও অতিরিক্ত জটিল শব্দের ব্যবহার থেকে মুক্ত।
(৩) একান্ত প্রয়োজন না হলে প্রশ্নের মূল অংশে না-বোধক বাক্য ব্যবহার করা উচিত নয়। না-বোধক প্রশ্নের চেয়ে হাঁ-বোধক প্রশ্ন দ্বারা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ শিখন উদ্দেশ্য পরিমাপ করা সম্ভব হয়।
(৪) কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষ শিখনফল পরিমাপের জন্য না-বোধক শব্দ ব্যবহার করে প্রশ্ন করতে হয়। সে ক্ষেত্রে না-বোধক শব্দটিকে জোর দেবার জন্য তার নিচে দাগ টেনে দিতে হবে অথবা বড় অক্ষরে লিখতে হবে।
(৫) প্রত্যেক প্রশ্নের যেন একটি মাত্র সঠিক উত্তর (নবংঃ ধহংবিৎ) থাকে। প্রশ্নে প্রদত্ত বিকল্প উত্তরগুলো (ধষঃবৎহধঃরাবং) প্রশ্নের মূল অংশের (ঝঃবস) সঙ্গে ব্যাকরণগত দিক দিয়ে শুদ্ধ বা সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
(৬) সঠিক উত্তর নির্বাচন অথবা ভুল বিকল্প বর্জন করার ব্যাপারে প্রশ্নে যেন কোন সংকেত (পষঁব) প্রদত্ত না হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।
(৭) বিচলকগুলো এমনভাবে রচনা করতে হবে যেন শিক্ষার্থীর নিকট আকর্ষণীয় ও আপাতদৃষ্টিতে ন্যায়সংগত বলে মনে হয়। বিচলকগুলো আকর্ষণীয় ও আপাতদৃষ্টিতে ন্যায়সংগত করে তোলার জন্য আপনি নিচের নিয়মগুলো অনুসরণ করতে পারেন-
ক) শিক্ষার্থীরা সাধরণত যে সব ভুল করে সেগুলোকে বিচলক হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
খ) শিক্ষার্থীদের ভাষায় বিকল্পগুলোকে লিখতে হবে।
গ) সঠিক উত্তর এবং বিচলক লেখার ক্ষেত্রে ‘মড়ড়ফ- ংড়ঁহফরহম’ শব্দ ব্যবহার করতে হবে।
ঘ) শব্দের দৈর্ঘ্য ও জটিলতা উভয় দিক থেকেই বিচলক ও সঠিক উত্তর সমার্থক হবে।
ঙ) বিকল্প যেন সমজাতীয় (ঐড়সড়মবহবড়ঁং) হয়।
(৮) সঠিক উত্তরটি যেন বিচলকগুলোর চেয়ে দৈর্ঘ্যে ছোট বা বড় না হয়। আইটেম লেখার সময় বিকল্প উত্তরগুলো দৈর্ঘ্য যতদূর সম্ভব সমান রাখা উচিত।
(৯) ‘ওপরের সবগুলো’ বা ‘ওপরের কোনটিই নয়’- এ ধরনের বিকল্প এড়িয়ে চলুন।
(১০) আইটেমগুলো পরস্পর স্বাধীন থাকবে। তারা যেন একে অপরের ওপর নির্ভরশীল না হয়। অর্থাৎ একটি আইটেমের উত্তর যেন পরবর্তী আইটেমের উত্তর দিতে সাহায্য না করে।
>কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষাপদ:
যে অভীক্ষাপদের জন্য পরীক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত বা বিস্তারিত বর্ণনা লিখে উত্তর করতে হয় তাই কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষাপদ। কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষাপদ দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যথা: সংক্ষিপ্ত-উত্তর জাতীয় অভীক্ষাপদ এবং দীর্ঘ/বর্ণনামূলক উত্তর জাতীয় অভীক্ষাপদ। সংক্ষিপ্ত-উত্তর জাতীয় অভীক্ষাপদ এমনভাবে রচিত হয় যার উত্তর দিতে হয় সংক্ষেপে। এক্ষেত্রে ধরনের অভীক্ষাপদের উত্তর লেখার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর স্বাধীনতা অপেক্ষাকৃত কম থাকে। যেমন- নাগরিক হিসেবে তোমার ২টি কর্তব্য কাজ লিখ, বর্ষাকালের পাঁচটি ফলের নাম লিখ ইত্যাদি। দীর্ঘ-উত্তর জাতীয় অভীক্ষাপদের উত্তর দিতে হয় বিশদ আকারে। এজন্য সময় ও নম্বর উভয়ই বেশি দেয়া হয়। এখানে শিক্ষার্থীরা লেখার ক্ষেত্রে অপেক্ষোকৃত বেশি স্বাধীনতা পেয়ে থাকে। এখানে ব্যাখ্যা কর, বিশ্লেষণ কর, পার্থক্য কর, বর্ণনা কর ইত্যাদি জাতীয় অভীক্ষাপদ অর্ন্তভুক্ত থাকে।
>কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নের বৈশিষ্ট্য :
১. সুনির্দিষ্ট যোগ্যতার ভিত্তিতে যোগ্যতাভিত্তিক কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষাপদ প্রণয়ন করা হয় ।
২. প্রতিটি অভীক্ষাপদের উত্তর যথাযথ, প্রাসঙ্গিক ও সুনির্দিষ্ট হওয়া বাঞ্চনীয়।
৩. প্রতিটি অভীক্ষাপদের জন্য নম্বর সুনির্দিষ্ট থাকে।
৪. প্রতিটি অভীক্ষাপদের উত্তর মূল্যায়নের জন্য মাকিং স্কিম প্রণয়ন করা হয়।
৫. অভীক্ষাপদ অবশ্যই জ্ঞান, অনুধাবন ও প্রয়োগ ডোমেইনের উপর ভিত্তি করে করা হয়।
৬. এ অভীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর বিষয়জ্ঞান, অনুধাবন, বিশ্লে¬ষণ, সংশ্লে¬ষণ ও মূল্যায়ন ক্ষমতা পরিমাপ করা যায়।
৭. শিক্ষার্থীরা সৃজনশীলতা প্রকাশ করার সুযোগ পায়।
৮. শিক্ষার্থীর ভাষাজ্ঞান, বাক্যকাঠামো, রচনাশৈলী ও প্রকাশ ভংগীর পরিমাপ করা যায়।
৯. শিক্ষার্থীর চিন্তা শক্তি ও কল্পনা শক্তির পরিমাপ হয়।
১০. শিক্ষার্থীরা কোন বিষয়কে নিজের ভাষায় গুছিয়ে লেখার ক্ষমতা অর্জন করে।
>রচনামূলক অভীক্ষা প্রণয়নের নীতিমালা
১. কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষাপদ হতে হবে সুস্পষ্ট। শিক্ষার্থী অভীক্ষাপদ পড়ে যেন দ্বিধান্বিত না হয়।
২. কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষাপদ অবশ্যই একটিমাত্র মূল শিখনফল/যোগ্যতাভিত্তিক হতে হবে।
৩. সংক্ষিপ্ত কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষাপদ (ইৎরবভ ঈড়হংঃৎঁপঃবফ জবংঢ়ড়হংব রঃবস-ইঈজ) যে কোন শিখনক্ষেত্র ভিত্তিক হতে পারে কিন্তু বর্ণনামূলক কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষাপদ (ঊীঃবহফবফ ঈড়হংঃৎঁপঃবফ জবংঢ়ড়হংব রঃবস-ঊঈজ) অবশ্যই জ্ঞান, অনুধাবন ও উচ্চতর শিখনক্ষেত্র পরিমাপের জন্য প্রণীত হতে হবে।
৪. কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষাপদ একটি নির্দিষ্ট শিখনক্ষেত্র (জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ) ভিত্তিক হতে হবে। একাধিক শিখন ক্ষেত্র সংমিশ্রনে অভীক্ষাপদ প্রণীত হলে নম্বর বিভাজন সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
৫. কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষাপদ মূল্যায়নের ব্যাপ্তি হবে ০-৪ নম্বরের ভিত্তিতে। এজন্য মূল্যায়ন নির্দেশিকা/মার্কিং স্কিম প্রণয়ন করতে হবে।
৬. এমন ধরণের অভীক্ষাপদ রচনা করতে হবে যেন তার উত্তর দিতে পরীক্ষার্থীকে চিন্তা করতে হয়। অর্থাৎ স্মৃতি থেকে লেখার সুযোগ যেন না থাকে।
৭. যাহা জানো লিখ, নিজের কাথায় ব্যক্ত কর, আলোচনা কর, এ সম্পর্কে চিন্তা কর, বিবেচনা কর, চিত্রায়িত কর ইত্যাদি ক্রিয়াপদ ব্যবহার করে কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষাপদ তৈরি করা যাবে না।
৮. শিক্ষার্থীর বিষয়জ্ঞান, অনুধাবন, বিশ্লে¬ষণ, সংশ্লে¬ষণ ও মূল্যায়ন ক্ষমতা পরিমাপ করা যায় এমন অভীক্ষাপদ প্রণয়ন করতে হবে।
৯. বিকল্প অভীক্ষাপদ নির্বাচনের সুযোগ রহিত করে সকল অভীক্ষাপদের উত্তর দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে।
১০. আইটেমগুলোকে পরস্পর স্বাধীন থাকবে। তারা যেন একে অপরের ওপর নির্ভরশিল না হয়। অর্থাৎ একটি আইটেমের উত্তর যেন পরবর্তি আইটেমের উত্তর দিতে সাহায্য না করে।
**প্রশ্ন পত্র কী ভাবে প্রণয়ন করবেনঃ
তবে প্রশ্ন পত্র প্রণয়ন করতে অবশ্যয় নিচের এই ৬ টি আইটেম এর সহায়তা নিতে হবে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে নিচের এই ৫টি কি (key) এর মাঝে প্রথম ৩টি( ১.জ্ঞান ২.অনুধাবন ৩.প্রয়োগ) কি (key) কে সামনে রেখে প্রশ্ন করা হয়। রয়েযাওয়া বাকি ২ টি(৪.বিশ্লেষণ ৫.সংশ্লেষণ) কি (key) দ্বারা উচ্চ শ্রেণীতে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়ে থাকে।
---৫টি কি (key)
১.জ্ঞান
২.অনুধাবন
৩.প্রয়োগ
৪.বিশ্লেষণ
৫.সংশ্লেষণ
>জ্ঞানঃ জ্ঞান বলতে পূর্বে শেখা কোন সুনির্দ্দিষ্ট /সর্বজনীন কোন কিছুর (সংজ্ঞা, ঘটনা, প্রক্রিয়া, তত্ত্ব ইত্যাদি) স্মরণ করার মানসিক প্রক্রিয়া।
>অনুধাবনঃ পাঠ্যাংশ পড়ে বিষয়বস্তু কতকখানি উপলব্ধি করতে পেরেছে শিশুর সে ক্ষমতাকে বুঝায়। অর্থাৎ কোন ধারণা/ তথ্যকে বুঝে সহজভাবে এটি বর্ণনা করার ক্ষমতাকে অনুধাবন/ বোধগম্যতা বলা হয়।’।
>প্রয়োগঃ পাঠের মর্ম অনুধাবনের পর আরও গভীরভাবে চিন্তা করে নিজ জীবনে তা প্রয়োগের ক্ষেত্র চিন্তা করে বের করার ক্ষমতা।
>বিশ্লেষণ: কোন সমগ্রকের ক্ষুদ্র অংশসমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে চিনে সমগ্রকের সংগে ক্ষুদ্র অংশসমূহের সম্পর্ক স্থাপন করতে জানা এবং বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের আলোকে সমগ্রকের অংশসমূহ আলাদা করতে পারাকে বিশ্লেষণ বলা হয়।
>সংশ্লেষণ: কোন বস্তু/উপাদানের ক্ষুদ্র উপাদানসমূহকে একত্রিকরণের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়ার নাম হলো সংশ্লেষণ।
>>>মার্কিং স্কিম, মার্কিং স্কিম প্রণয়নের যৌক্তিকতা
>মার্কিং স্কিম কী:
প্রতি বিষয়ের প্রতিটি প্রশ্ন ও তার সম্ভাব্য উত্তর এবং উত্তর মূল্যায়ন নিদের্শিকা অর্থাৎ শিক্ষার্থী কর্তৃক লিখিত প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরের প্রেক্ষিতে কত নম্বর পাবে তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা সম্বলিত ডকুমেন্ট হলো মার্কিং স্কিম।
>মার্কিং স্কিম প্রণয়নের যৌক্তিকতা:
১. মূল্যায়ন নির্দেশিকা একটি সুস্পষ্ট ডকুমেন্ট বলে মূল্যায়ন যথার্থ হয়।
২. উত্তরপত্র মূল্যায়নকারীগণ ইচ্ছে মাফিক মূল্যায়ন করতে পারেন না বলে মূল্যায়ন নিরপেক্ষ হয়।
৩. পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রের অতি বা অবমূল্যায়ন হয় না।
>মূল্যায়নকারীভেদে একই উত্তর মূল্যায়নে পার্থক্য হয় কেন?
১. প্রতিটি প্রশ্নের বিপরীতে কতটুকু লিখলে বা কী লিখলে কত নম্বর দেয়া হবে তার নির্দেশনা দেয়া থাকে না।
২. কোন প্রকার মূল্যায়ন নির্দেশিকা বা মার্কিং স্কিম সরবরাহ করা হয় না।
৩. মূল্যায়ন করার জন্য অপেক্ষাকৃত কম সময় দেয়া হয়।
৪. অপেক্ষাকৃত কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং পর্যাপ্ত বিষয়জ্ঞানহীন শিক্ষককে পরীক্ষক ও প্রধান পরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
৫. পরীক্ষকের এ সংক্রান্ত কাজে মূল্যবোধের অভাব।
৬. মূল্যায়নকালীন কোন প্রকার পরিবীক্ষণ করার ব্যবস্থা/সুযোগ নেই।
>কীভাবে সারা দেশব্যাপী মূল্যায়নে পার্থক্য সর্বনিন্ম বা অভিন্ন করা সম্ভব?
১. প্রতিটি বিষয়ের জন্য স্বব্যাখ্যায়িত মূল্যায়ন নির্দেশিকা বা মার্কিং স্কিম সরবরাহ করা
২. মূল্যায়ন করার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া।
৩. অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং পর্যাপ্ত বিষয়জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষককে পরীক্ষক ও প্রধান পরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
৪. পরীক্ষকের এ সংক্রান্ত কাজে মূল্যবোধের সৃষ্টি করা।
৫. মূল্যায়নকালীন সুসংগঠিত পরিবীক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করা।
>>মূল্যায়নকারীর জন্য মূল্যায়ন পূর্ব-করণীয়ঃ
১. প্রতিটি অভীক্ষাপদ মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
২. উত্তরপত্র মূল্যায়নের আগে উত্তরপত্র মূল্যায়নকারীকে প্রধান পরীক্ষক/নেপ কর্তৃক সরবরাহকৃত বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়ন নির্দেশিকা ভাল করে পড়ে প্রতিটি অভীক্ষাপদের উত্তর কী হবে তা নিশ্চিত হতে হবে।
২. বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়ন নির্দেশিকায় প্রতিটি অভীক্ষাপদের জন্য যে নির্দেশনা দেয়া থাকেÑতা অনুসরণ করতে হবে। উল্লেখ্য মূল্যায়নকারীকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পাঠ্যবই ও তার বিষয়বস্তু, যোগ্যতা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকতে হবে।
৩. যদি উত্তরপত্র মূল্যায়ন নির্দেশিকায় কোন অস্পষ্টতা দেখা যায় তবে তা স্পষ্টীকরণের জন্য প্রধান পরীক্ষক/নেপ এর সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অভীক্ষা পদ প্রণয়নকারীগণের সহায়তা নিতে হবে।
৪. কোন উত্তর সম্পর্কে মূল্যায়নকারী নিশ্চিত না হয়ে কেবলমাত্র আন্দাজের উপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করা যাবে না।
৫. উত্তরপত্র (খাতা) প্যাকেট সংগ্রহ করার পর প্যাকেটের ভিতর খাতার সংখ্যা গণনা করে দেখতে হবে। কোন প্রকার অসংগতি দেখা গেলে, খাতা সরবরাহকারীকে অবহিত করতে হবে।
>>উত্তরপত্র মূল্যায়নকালীন সময়ে করণীয়ঃ
১. মূল্যায়নকারীকে ধৈর্যসহকারে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে হবে।
১. মূল্যায়নকারী মূল্যায়নকালে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবেন। মূল্যায়নকারীকে সর্বদা মনে রাখতে হবে যে, তিনি বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন।
৩. উত্তরপত্র মূল্যায়নকারী উত্তরপত্রের প্রতিটি শব্দ/বাক্য/বানান প্রভৃতি মনোযোগ সহকারে পড়ে মূল্যায়ন নির্দেশনা অনুযায়ী নম্বর প্রদান করবেন।
৪. পরীক্ষার্থীভেদে সংক্ষিপ্ত এবং রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর ভিন্ন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অর্থগত, ভাবগত ও ঈড়সসঁহরপধঃরহম ঠধষঁব-এর ভিত্তিতে মূল্যায়ন নির্দেশনা অনুযায়ী নম্বর প্রদান করা বাঞ্চনীয় হবে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর সংক্ষিপ্ত এবং রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর পুনমূল্যায়ন করা উচিত।
৫. যেহেতু হাতের সুন্দর লেখার জন্য কোন নম্বর সুনির্দিষ্ট করা নেইÑ কাজেই পরীক্ষার্থীর হাতের লেখা সুন্দর না হলেও যদি প্রকৃত পাঠ উদ্ধার করা যায় এবং উত্তর প্রদান সঠিক হয় তবে পূর্ণ নম্বর দিতে হবে।
৬. বহুনির্বাচনী প্রশ্নের জন্য প্রশ্নপত্রে যে নির্দেশনা প্রদান করা আছে Ñ তা যথাযথভাবে অনুসরণ করবেন।
৭. অভীক্ষার উত্তরের যথার্থ ও সুনির্দিষ্টতার দিকে লক্ষ রেখে মূল্যায়ন করতে হবে।
৮. প্রতিটি অভীক্ষা পদের (প্রশ্নের) উত্তর মূল্যায়ন করেছেন কিনা Ñ তা মূল্যায়নকারীকে যাচাই করতে হবে।
৯. প্রতিটি উত্তরের জন্য নির্দেশনা মোতাবেক নম্বর প্রদান করা হয়েছে কিনা Ñ তা পুনঃ নিরীক্ষা করতে হবে।
১০. নম্বর প্রদানের ক্ষেত্রে ঘষামাজা (ঙাবৎ ডৎরঃরহম) করা যাবে না। প্রয়োজনে একটানে কেটে সঠিক নম্বর বসিয়ে পাশে অনুস্বাক্ষর করতে হবে।
>>মূল্যায়নের পর করণীয়ঃ
১. পরীক্ষার্থীর রোল নম্বর অনুযায়ী পরীক্ষিত উত্তরপত্রগুলো সাজাতে হবে।
২. প্রতিটি নম্বর ফর্দের নিচে মূল্যায়নকারীকে যথাস্থানে স্বাক্ষর করতে হবে । নম্বর ফর্দে নম্বর উত্তোলনে কোন প্রকার কাটাকাটি বা ঘষামাজা করা যাবে না। প্রয়োজনে একটানে কেটে সঠিক নম্বর বসিয়ে পাশে অনুস্বাক্ষর করতে হবে।
৩. সকল প্রকার গোপনীয়তা বজায় রাখতে হবে।
>>মূল্যায়নকারী যা করবেন নাঃ
১. এক বসায় ৫-১০ টির বেশি উত্তরপত্র মূল্যায়ন করবেন না।
২. নিজের ব্যক্তিগত অভিমতের ভিত্তিতে উত্তর মূল্যায়ন করা যাবে না।
৩. উত্তরপত্র যেখানে সেখানে অযতেœ ফেলে রাখা যাবে না।
৪. অমনোযোগী হয়ে বা কোন প্রকার খোশ-গল্পে মত্ত হয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা যাবে না।
৫. অপরিষ্কার লেখা দেখে অধৈর্য হওয়া যাবে না এবং সুন্দর লেখা বা অপরিষ্কার লেখার জন্য অধিক/ কম নম্বর প্রদান করা যাবে না।
:>প্রধান পরীক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য:
১. মূল্যায়নকারীদের সহায়তায় মূল্যায়ন নির্দেশিকা প্রণয়ন করা।
২. প্রয়োজনে মূল্যায়নকারীকে সহায়তা প্রদান করা।
৩. ৫-১০% পরীক্ষিত উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা। মূল্যায়নকারী কর্তৃক উত্তরপত্র মূল্যায়নে কোন ব্যত্যয় হয়ে থাকলে তা রেকর্ড করা এবং মূল্যায়নকারীকে প্রয়োজনীয় ফলাবর্তন প্রদান করা।
৪. যদি কোন উত্তরপত্র মূল্যায়নকারী কর্তৃক মূল্যায়িত না হয়ে থাকে তবে তা মূল্যায়ন করা।
৫. পুনর্মূল্যায়নে সবুজ কলম ব্যবহার করতে হবে এবং অনুস্বাক্ষর করতে হবে।
৬. এক প্যাকেটের খাতা যেন অন্য প্যাকেটের সাথে মিশে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৭. প্রতি উত্তরপত্রের নির্ধারিত স্থানে অনুস্বাক্ষর করতে হবে।।
>নিরীক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য:
১. প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরের বিপরীতে প্রদত্ত নম্বর সঠিকভাবে উত্তরপত্রের কভার পৃষ্ঠায়/নম্বর ফর্দে লেখা হয়েছে কিনা তা নিরীক্ষা করা। যদি কোন নম্বর লেখা না হয়ে থাকে তবে তা নীল কালিতে লেখা।
২. যদি কোন প্রশ্নের উত্তর মূল্যায়নকারী কর্তৃক মূল্যায়িত না হয়ে থাকে তবে তা প্রধান পরীক্ষককে অবহিত করা।
৩. প্রদত্ত নম্বরসমূহ গণনা করে মোট নম্বর সঠিকভাবে লেখা হয়েছে কিনা তা নিরীক্ষণ করা।
৪. যদি কোন উত্তরের বিপরীতে অধিক বা কম নম্বর প্রদান করা হয়ে থাকে তবে তা নিজে মূল্যায়ন না করা । বিষয়টি প্রধান পরীক্ষককে অবহিত করা যেতে পারে।
৫. এক প্যাকেটের খাতা যেন অন্য প্যাকেটের সাথে মিশে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৬. নিরীক্ষণ শেষে প্রতি উত্তরপত্রের কভার পৃষ্ঠার নির্ধারিত স্থানে অনুস্বাক্ষর করতে হবে।।
>পরীবিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য:
১. উত্তরপত্র মূল্যায়নকারীগণের মাঝে উত্তরপত্র বিতরণ করা এবং তার রেকর্ড সংরক্ষণ করা।
২. বিতরণের পূর্বে প্রতিটি খাতায় কোড নম্বর দেয়া হয়েছে কিনা তা যাচাই করা।
৩. যদি কোন উত্তরপত্রে কোন অসংগতি দেখা যায় তবে তা কর্তৃপক্ষ/প্রধান পরীক্ষককে অবহিত করা। নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৪. এক প্যাকেটের খাতা যেন অন্য প্যাকেটের সাথে মিশে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৫. নিরীক্ষিত উত্তরপত্র গণনা করে সংগ্রহ করা।
>প্রত্যাবেক্ষণের পূর্বের কাজ
১. প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ের কমপক্ষে ৪৫ মিনিট পূর্বে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হবে।
২. পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিটি পূর্বে খাতা নিয়ে পরীক্ষার হলে উপস্থিত হতে হবে।
৩. পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিটি পূর্বে উত্তর লেখার জন্য খাতা পরীক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করতে হবে।
৪. খাতার নির্ধারিত জায়গায় পরীক্ষার্থীর নামসহ প্রয়োজনীয় তথ্য লেখার নির্দেশনা দিতে হবে।
৫. প্রবেশপত্রের বিপরীত পাশে লিখিত নিদের্শনা পরীক্ষার্থীরা পড়েছে কিনা এবং পড়ে বুঝেছে কি না তা জিজ্ঞেস করে জেনে নিন। না পড়ে থাকলে পড়ে বুঝিয়ে দিন।
৬. উত্তরপত্রে প্রয়োজনীয় মার্জিন এবং প্রত্যেক লাইনের মধ্যে যথোপযুক্ত ফাঁক রেখে উত্তর লিখতে নিদের্শনা দিন।
৭. পরীক্ষার কক্ষে কোনকিছুর প্রয়োজন হলে বা কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে পরীক্ষার্থীকে কেবল দাঁড়িয়ে প্রত্যাবেক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে একথা জানিয়ে দিন।
৮. পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্রে উল্লেখিত ২ ঘন্টা সময় ধরে উত্তর লিখতে পারবে-এ কথা জানিয়ে দিন। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় পাবে বলে উল্লেখ করুন।
৯. পরীক্ষা সমাপ্তির পর প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে কর্তব্যরত প্রত্যাবেক্ষকের নিকট উত্তরপত্র দাখিল করে পরীক্ষা কক্ষ ত্যাগ করতে হবে একথা জানিয়ে দিতে হবে।
>প্রত্যাবেক্ষণকালীন কাজ
১. পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের কোন প্রশ্ন বুঝতে সমস্যা হলে- প্রশ্নে কী চাওয়া হয়েছে তা বলে দিতে হবে।
২. প্রতিটি উত্তরপত্রের নির্দিষ্টস্থানে স্বাক্ষর করে তারিখ দিতে হবে।
৩. শিক্ষার্থীদের সাথে উত্তম আচরণ করতে হবে।
৪. শিক্ষার্থীদের যে কোন প্রশ্ন সাদরে গ্রহণ করতে এবং যথাসম্ভব হাসিমুখে তার জবাব দিতে হবে।
৫. পরীক্ষার হলে ভয়ভীতিহীন পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।
৬. নির্ধারিত সময়ের ৫ মিনিট পূর্বে শিক্ষার্থীদের অবহিত করতে হবে যে, আর ৫মিনিট সময় বাকী আছে।
৭. নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর উত্তরপত্র সংগ্রহ করতে হবে।
৮. সকল উত্তরপত্র সংগ্রহ করার পর শিক্ষার্থীর সংখ্যার সাথে মেলাতে হবে।
৯. পরীক্ষার্থীদের হাজিরা সিটে স্বাক্ষর গ্রহণ করা।
১০. দায়িত্ব পালন কালে কোন সমস্যা দেখা দিলে তা তাৎক্ষণিকভাবে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
>প্রত্যাবেক্ষণ উত্তর/পরবর্তী কাজ কাজ :
১. প্রত্যাবেক্ষক হিসেবে প্রতিটি পরীক্ষাথীর খাতায় স্বাক্ষর করা আছে কি না তা যাচাই করে দেখতে হবে।
২. উত্তরপত্র ও হাজিরা সিট কেন্দ্র সচিব বা তার মনোনীত ব্যক্তির নিকট জমা দিতে হবে।
৩. পরীক্ষার হল বা কোন পরীক্ষার্থী সম্পর্কে কোন তথ্য দেওয়ার থাকলে তা কেন্দ্র সচিবকে অবহিত করতে হবে।
Post a Comment