শিক্ষা একদিকে যেমন মানুষের জ্ঞানের ভাণ্ডারকে পরিপূর্ণ করে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক দৈন্য এড়াতেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। শ্রমের বর্ধিত উৎপাদনশীলতা, ভূমি ও অন্যান্য বস্তুগত সম্পদের কার্যকর ব্যবহার এবং আর্থসামাজিক ক্ষমতায়নে শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে থাকে। তাছাড়া শিক্ষাগত অর্জনকে গতিশীল সামাজিক
সচলতার শক্তিশালী উপকরণ হিসেবেও দেখা যেতে পারে। একে সামাজিক মই-ই বলা চলে। শিক্ষা উন্নয়নের একটি মুখ্য হাতিয়ার। এ কথা ঠিক যে, সবার জন্য গুণগত মানের শিক্ষা, বৈষম্যহীন ও বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে যেকোনো জাতির উন্নয়ন হবেই। বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে একটি দেশে জাতীয় আয় দ্রুত বৃদ্ধি পায়, দারিদ্র্য বিমোচন হয় তথা উন্নয়ন সহজতর হয়। শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, ভূমি ও অন্যান্য বৈষয়িক সম্পদের অধিকতর কার্যকর ব্যবহার, প্রযুক্তি ও দক্ষতা ভিত্তিক পণ্যের অধিক রপ্তানি, নারীর আর্থসামাজিক ক্ষমতায়ন ও সমাজের পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। শিক্ষা পরিবারের কার্যক্ষম ব্যক্তির কর্মদক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। শিক্ষিত নারী পরিবারে প্রজনন হার হ্রাস পায়। সে কারণে নারী উৎপাদনশীল কাজে বেশি সময় ব্যয় করতে পারে। দেশের মোট উৎপাদন বাড়ে। আবার বিজ্ঞানসম্মত ও গুণগত মানের শিক্ষা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে। বৈষীয়িত সম্পদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। শিক্ষা ও উন্নয়নের সম্পর্ক তাই খুবই গভীর এবং সুদূরপ্রসারী। শিক্ষা ও দারিদ্র্যের মধ্যে নেতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে। একটি দেশে বা পরিবারে শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বাড়লে সেই দেশ বা পরিবারের দৈন্য কমে। দারিদ্র্য রেখার উপরিভাগ প্রশস্ত হয়। সামাজিক পরিবর্তনে শিক্ষার ইতিবাচক ভূমিকা আখেরে অর্থনৈতিক উন্নয়নকেও ত্বরান্বিত করে। ব্যাস্টিক এবং সামষ্টিক উভয় পর্যায়েই শিক্ষা দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। ব্যষ্টিক পর্যায়ে দেখা যায়, নিরক্ষর ব্যক্তি কিংবা তার পরিবারের অন্যান্য সদস্য কম উৎপাদনশীল হয়; কম আয়ের কাজে নিযুক্ত থাকে এবং দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। সামষ্টিক পর্যায়ে দেখা যায়, নিরক্ষর জাতি পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদন বাড়াতে পারে না এবং তাদের জীবনযাত্রার মান নিচু হয়। তাছাড়া শিক্ষা অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজনের মানও বাড়ায়। বাংলাদেশেও শিক্ষিত জনগণের চেয়ে নিরক্ষর জনগণের মধ্যে দারিদ্র্য প্রায় সাতগুণ (৬.৭) বেশী। বাংলাদেশের থানা প্রধানের শিক্ষার স্তরের সঙ্গে দারিদ্র্যের ‘মাথা গণনা হার’ বিপরীতভাবে সম্পর্কিত। পরিবার প্রধানের কোন আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নেই এমন পরিবারের দারিদ্র্যের মাত্রা উচ্চ শিক্ষিত পরিবার প্রধানের পরিবার থেকে কম করে হলেও ৬ থকে ৭ গুণ বেশি । শুধুমাত্র উপযুক্ত শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে পারলে কম করে হলেও গ্রামীন গরিব মানুষের ৫৭ শতাংশের ভাগ্য বদলে দেয়া সম্ভব।
Post a Comment