বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা

একটি দেশের উন্নয়নের জন্য দক্ষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। পৃথিবীর যে দেশে যত বেশি দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী আছে সেই দেশ তত বেশি উন্নত। মানব সম্পদ যদি ব্যবহারযোগ্য না হয় তবে তার কোন মূল্য নেই। কোন রাষ্ট্রের প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ বা খনিজ সম্পদ থাকলেই, সেই রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নতি নিশ্চিত হয়না, যদি না ঐ রাষ্ট্র উপযুক্ত
পরিকল্পনায় ঐ সম্পদকে ব্যবহার করতে পারে। একইভাবে রাষ্ট্রে অসংখ্য জনগোষ্ঠী থাকলেই রাষ্ট্রের উন্নতি হবে না। ঐ জনগোষ্ঠীকে উপযুক্ত শিক্ষা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে উৎপাদনমূলক কাজে ব্যবহার করতে পারলে সেই জনগোষ্ঠী রাষ্টের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে।
যে শিক্ষা শিক্ষার্থী তার বাস্তব জীবনে ব্যবহার করে কোন একটি নির্দিষ্ট পেশায় নিযুক্ত হতে পারে তাই কারিগরি শিক্ষা। আবার উপযুক্ত বৃত্তি বা পেশা নির্বাচনের জন্য দক্ষতামূলক যে শিক্ষা, তাকে বৃত্তিমূলক শিক্ষা বলে। কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের পর শিক্ষার্থীকে বা ব্যক্তিকে পেশা নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। সে নিজেই অর্জিত শিক্ষার সাথে মিল রেখে স্বাধীনভাবে পেশা খুঁজে নিতে পারে। সাধারণ শিক্ষা এর বিপরীত, অর্থাৎ অর্জিত শিক্ষার সাথে কর্মের মিল থাকে না। কারিগরী শিক্ষার ক্ষেত্রে বয়স সম্পর্কে কিছুটা শিথিলতা প্রদর্শন করা হয়। সাধারণত ঝরে পড়া শিক্ষার্থী অথবা কোন কারণে শিক্ষাবঞ্চিত ব্যক্তির জন্য কারিগরি শিক্ষা নানাভাবে সফলতা এনে দিতে পারে। এ ধরনের শিক্ষার প্রধান শর্ত হলো ধৈর্য্য, পরিশ্রম ও অনুশীলন। দক্ষতাই উন্নয়ন-এ কথাটি কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এ শিক্ষার প্রধান সাফল্য ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ। এর উদ্দেশ্য শিক্ষার্থী বা ব্যক্তিকে পরবর্তী জীবনে নির্দিষ্ট কোন কারিগরি বিষয়ে দক্ষ করে তোলা, নিজ নিজ উদ্যোগে স্থানীয় ছোট ছোট শিল্পের প্রসার ঘটানো, স্বাধীনভাবে পছন্দ অনুযায়ী বৃত্তি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদকে প্রকৃষ্টভাবে কাজে লাগিয়ে কর্মীর হাতে পরিণত করা। আমাদের দেশের বিপুল সম্ভাবনাময় এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হলে প্রয়োজন কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার। প্রায় ১৬ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এদেশের জনসম্পদই হচ্ছে উন্নয়নের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় তিন ভাগের একভাগ হচ্ছে ১৫ এবং তদুর্ধ বয়সী কম-উপযোগী মানুষ।  দেশে বর্তমানে দারিদ্রের হার ৩০ ভাগেরও উপরে এবং প্রতিবছর প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ নতুন করে শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। এর অধিকাংশই হয় বেকার, না হয় আধা বেকার অবস্থায় থাকে। যাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়, তারাও দক্ষতার অভাবে স্বল্প বেতন ও সুযোগ-সুবিধায় কাজ করতে বাধ্য হয়। ফলে তাদের জীবনমান থাকে অনুন্নত এবং অভাব হয় নিত্যসঙ্গী। পাশাপাশি আমাদের দেশের প্রচুর লোক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিদেশে যাচ্ছেন। প্রবাস থেকে আমাদের দেশে তারা যে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করেন তা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারি দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত এবং এ বৈদেশিক মুদ্রা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। কিন্তু আমাদের দেশ থেকে যে সকল শ্রমজীবী মানুষ বিদেশে যান তার ২৩% মাত্র দক্ষ, বাকি ৭৭% আধা-দক্ষ বা অদক্ষ। ফলে তারা অন্যান্য দেশের কর্মজীবীদের তুলনায় অনেক কম আয় করেন এবং কম সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কারণে মানবেতর জীবনযাপন করেন। আমরা যদি তাদেরকে দক্ষ শ্রমজীবী হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, তাহলে তারা অধিক উপার্জনসহ মানসম্মত উন্নত জীবনের অধিকারী হতো এবং কয়েকগুণ বেশি বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণে সক্ষম হত। কারিগরী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় জোর দেওয়ার কারণে বাংলাদেশের চাইতে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যাণ্ড, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার জিডিপির হার অনেকগুণ বেশী। অথচ ১৯৭০ সালে এই দেশগুলির জিডিপি আমাদের প্রায় সমকক্ষ ছিলো।
বাংলাদেশে কারিগরী শিক্ষার প্রসারে ১৯৬০ সালে কারিগরী শিক্ষা অধিদপ্তর গঠন করা হয়। কারিগরী শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার জন্য ১৯৬৭ সালে কারিগরী শিক্ষাবোর্ড গঠন করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে কারিগরী শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট স্থাপন ও বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যাপক সংস্কার করা হয়। বৃত্তিমূলক পেশার সম্প্রসারণে ভোকেশনাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউট স্থাপন করে নতুন নতুন ট্রেডসমূহ যুক্ত করা হয়। বর্তমানে কারিগরী শিক্ষায় ছয়মাস থেকে একবছর মেয়াদি সার্টিফিকেট কোর্স, চারবছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স। দেশের ৪৯ টি সরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, ভোকেশনাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানগুলো এই সকল কোর্স পরিচালনা করে থাকে। নিম্নে কারিগরী শিক্ষাবোর্ডের আওতায় পরিচালিত সার্টিফিকেট ও ডিপ্লোমা কোর্সসমূহের নাম, মেয়াদকাল ও সিট সংখ্যা দেয়া হলো।
Sl No
Course Name
Duration
Number of Institute
Seat Capacity
1
Diploma-in-Technical Education
1 Year
01
120
2
Diploma-in-Vocational Education
1 Year
01
80
3
Diploma-in-Engineering 
4 Year
321
57981
4
Diploma-in-Textile Engineering
4 Year
78
5000
5
Diploma-in-Agriculture
4 Year
155
12000
6
Diploma-in-Fisheries
4 Year
40
1600
7
Diploma-in-Jute Technology
4 Year
1
80
8
Diploma-in-Forestry
2/3 Year
1
40
9
Diploma-in-Health Technology
3 Year
207
18000
10
Diploma-in-Medical Ultrasound 
1 Year
02
40
11
Diploma-in-Commerce
2 Year
07
616
12
Diploma-in-Animal Health and Production Technology
2 Year
01
40
13
HSC (Business Management)
2 Year
1558
140220
14
HSC Vocational)
2 Year
64
10044
15
SSC (Vocational)
2 Year
2134
169440
16
SSC (Vocational–Textile )
2 Year
40
3600
17
Dakhil (Vocational)
2 Year
240
14400
18
Certificate-in-Tread Cours
2 Year
00
00
19
Certificate-in-Vocational Education
1 Year
1
180
20
Certificate-in-Health  Technology
1 Year
127
7620
21
Certificate-in-Medical Ultrasound
6 month
11
220
22
National Skill Standard II
1 Year
06
660
23
National Skill Standard III
1 Year
06
660
24
Certificate-in-Secratial science
1 Year
01
24
25
Pofational Diploma-in-Automobile
6 month
01
40
26
Training and business typing
6 month
01
24
27
National Skill Standard basic
360 hours(3 or 6 month)
1143
60000

Total
6148
502729

0/Post a Comment/Comments