বখে যাওয়া সন্তান ও পরিবারের দায়

 - মহুয়া মিতু
 
এই মুহূর্তে যদি কেউ এসে বলে যে—এই তোমার কানটা চিলে নিয়ে যাচ্ছে ততক্ষণাত্ আমি কানে হাত না দিয়ে বরং ঐ আকাশেই চোখ রাখব এজন্য যে কানটা সত্যিই চিলে নিয়ে যাচ্ছে কি না সেটি দেখার জন্য। আমাদের বেশিরভাগের প্রবণতাটাই এরকম যে শোনা কথায় বিশ্বাস করা। অবশ্য এর ব্যতিক্রমও হতে পারে।

ছেলেরা সিগারেট খায়, মাদকাসক্ত হয় এবং বখে যায়—এ খবর বেশ পুরনো। তাই বলে মেয়েরা! এ তো রীতিমত গুরুদণ্ড। বিশ্বাস করা কঠিন।

‘মেয়েরাও মাদকাসক্ত হয়’ টাইপের বচন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর থেকে বহুবার শুনেছি। কদাচিত্ বিশ্বাস করেছি; কখনো করিনি। ঐ যে চিলে কান নিয়ে যাওয়ার মতোই অবস্থা আর কী!

জুনিয়রকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার পথ ধরে হাঁটছিলাম সেদিন। পথে এক মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাত্। বয়স আনুমানিক ১৬/১৭ হবে। চেহারা, গড়ন ও পোশাক—তিন জায়গাতেই পাশ্চাত্যের ছাপ সপষ্ট। জুনিয়র বলল, ‘আপু, ইনি অস্ট্রিয়ান মেয়ে।’ আমি বললাম, ‘আরে বোকা, এখানে অস্ট্রিয়ান মেয়ে আসবে কোথা থেকে? কোনো শিক্ষকেরই মেয়ে হবে হয়তো।’

মেয়েটা ও আমরা নিজেদের ভিন্ন পথে আলাদা হয়ে গেলাম। ফিরতি পথে চাক্ষুষ যে অভিজ্ঞতা হলো তার জন্যে মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না আমরা। চোখ কপালে তুলে হঠাত্ জুনিয়র বলো উঠল, ‘আপু দেখেন, ঐ মেয়েটা সিগারেট খাচ্ছে!’ বললাম, ‘ভূত দেখছ তুমি; মেয়ে মানুষ সিগারেট খেতে যাবে কেন?’ কিন্তু আমার এই ধারণা নিমিষেই উবে গেল যখন তাকে সিগারেট ফুঁকতে দেখলাম।

এই যে বখে যাওয়া ছেলেমেয়ে, শিক্ষার্থী, সন্তান যাই বলি না কেন—এ দায় কার? মেয়েটার বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, এমন ধারণা করাটা অমূলক নয় বরং যুক্তিযুক্তই বটে যেহেতু তাকে আবাসিক এলাকা থেকে বের হতে দেখেছি। এখন প্রশ্ন হলো, একজন শিক্ষক ও জনক হিসেবে তিনি তাঁর সন্তান মানুষ করার ক্ষেত্রে কতটা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন?

সামপ্রতিক সময়ে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকাসক্তি ইস্যুগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সরকারও এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। কিন্তু প্রকৃতার্থে কাজ হচ্ছে কতটুকু?

পরিবারকে বলা হয় শিশুর প্রাথমিক শিক্ষালয়। শিশুর নৈতিকতা, অনুশাসন, ধর্ম ও চরিত্র চিত্রণগত ব্যাপারগুলো পরিবার থেকেই গড়ে ওঠে। এগুলো গড়ার পেছনে সরকারের কোনো হাত নেই। পিতা-মাতাকে এক্ষেত্রে চালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়। সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, কার সঙ্গে মিশছে এসব দেখার দায়িত্ব বাবা-মায়ের। সুতরাং আমরা বলতেই পারি—এসব শুধু প্রতিরোধ নয় বরং এর প্রতিকার হোক পরিবার থেকেই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
- ইত্তেফাক

0/Post a Comment/Comments