বাজেট ও বাজেটের প্রকারভেদ
একটি নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক বছরে সরকারের সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত হিসাব বিবরণীকেই বাজেট বলা হয়। বাজেটে সরকারের আয়ের বিভিন্ন উৎস এবং ব্যয়ের বিভিন্ন খাত লিপিবদ্ধ থাকে এবং সরকারের একটি নির্দিষ্ট সময়ের আর্থিক পরিকল্পনার সুষ্ঠু প্রতিফলন থাকে। বাজেট সম্পর্কে অনেকেই মতামত দিয়েছেন যেমন : অধ্যাপক জন এফ ডিউ বলেন, 'A budget is the real sense of the term is a financial plan for a specified period of time.'অর্থনীতিবিদ টেইলর মনে করতেন, বাজেট হচ্ছে সরকারের একটি উচ্চমানের আর্থিক পরিকল্পনা।উপরোক্ত আলোচনা ও সংজ্ঞা হতে বলা যায়, বাজেট হল একটি নির্দিষ্ট সময় মেয়াদের জন্য সরকার বিভিন্ন খাতে কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করবে এবং বিভিন্ন উৎস থেকে কিভাবে অর্থের সংস্থান হবে, আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হলে কিভাবে সেই ঘাটতি পূরণ হবে, ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি হলে সেই উদ্বৃত্ত অর্থ কি করা হবে ইত্যাদির বিস্তারিত হিসাব বিবরণী। আয়-ব্যয়ের ধরন অনুযায়ী বাজেটকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়।০১. রাজস্ব বাজেট : যে বাজেটে সরকারের রাজস্ব আয় ও রাজস্ব ব্যয়ের হিসাব প্রতিফলিত হয় তাকে রাজস্ব বাজেট বলা হয়। রাজস্ব বাজেটের প্রধান দুটি অংশ থাকে।রাজস্ব বাজেটক. আয়ের উৎস :খ. ব্যয়ের খাত :প্রত্যেক্ষ কর।প্রতিরক্ষা, শিক্ষা।পরোক্ষ কর।বেসামরিক প্রশাসন।ফি সরকারি সম্পত্তি।জনস্বাস্থ্য।বাণিজ্যিক আয়।সমাজকল্যাণ।০২. মূলধনী বাজেট : যে বাজেটে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখানো হয় তাকে মূলধনী বাজেট বলা হয়। এ বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (অউচ) জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ও প্রত্যাশিত আয় দেখানো হয়। এ কারণে মূলধনী বাজেটকে উন্নয়ন বাজেটও (Development Budget) বলা হয়। রাজস্ব বাজেটের উদ্বৃত্ত এবং দেশের অভ্যন্তরীণ ও বিদেশ থেকে ঋণ গ্রহণ করে উন্নয়ন বা মূলধনী বাজেটের অর্থের সংস্থান করা হয়।প্রশ্ন : উদ্বৃত্ত বাজেট ও ঘাটতি বাজেটের মধ্যে পার্থক্য লিখ।উত্তর : উদ্বৃত্ত বাজেট ও ঘাটতি বাজেটের মধ্যে পার্থক্য :বাজেট বলতে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক বছরে সরকারে সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের হিসাবকে বুঝায়। আয়-ব্যয়ের ভারসাম্যের দৃষ্টিকোণ থেকে বাজেট ২ প্রকার। সুষম বাজেট এবং অসম বাজেট। অসম বাজেটকে আবার ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন : উদ্বৃত্ত বাজেট ও ঘাটতি বাজেট। উদ্বৃত্ত বাজেট ও ঘাটতি বাজেটের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য দেখা যায়। যেমন:উদ্বৃত্ত বাজেটঘাটতি বাজেটযে বাজেটে কোনো নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে সরকারের আয় যখন ০১যে বাজেটে কোনো নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে সরকারের ব্যয়ব্যয় অপেক্ষা বেশি হয় তখন তাকে উদ্বৃত্ত বাজেট বলা হয়। যখন আয় অপেক্ষা বেশি হয়, তখন তাকে ঘাটতি বাজেট বলা হয়।সূত্রের মাধ্যমে উদ্বৃত্ত বাজেট হল-০২সূত্রের মাধ্যমে ঘাটতি বাজেট হল-Bs= (R-E)>0, অর্থাৎ Revenue> Expenditure BD= Bs= BD= (R-E)>0, অর্থাৎ Revenue> ExpenditureBs = Surplus Budget. BD = Deficit Budget.দেশে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিলে উদ্বৃত্ত বাজেট অনুসরণ করা হয়।০৩দেশে মুদ্রাসংকোচ দেখা দিলে ঘাটতি বাজেট অনুসরণ করা হয়।দেশে উদ্বৃত্ত বাজেট পলিসি গ্রহণ করা হলে কর্মসংস্থান হ্রাস ০৪দেশে ঘাটতি বাজেট পলিসি গ্রহণ করা হলে কর্মসংস্থানপায়। অর্থাৎ দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়।বৃদ্ধি পায় তথা বেকারত্ব হ্রাস পায়।উদ্বৃত্ত বাজেটের মাধ্যমে দেশের উৎপাদন তেমন একটা ০৫ঘাটতি বাজেটের মাধ্যমে দেশের সার্বিক উৎপাদন বৃদ্ধিবৃদ্ধি পায় নাপায়।প্রবৃদ্ধি অর্জন করার লক্ষ্যে উদ্বৃত্ত বাজেট প্রায় ক্ষেত্রে ব্যর্থ ০৬প্রবৃদ্ধি অর্জন করার লক্ষ্যে পরিকল্পিত ঘাটতি বাজেট নীতিহতে পারে।গ্রহণ করা যৌক্তিক এবং তা অধিক ফলপ্রসূ।উপরোক্ত আলোচনা হতে বলা যায়, উভয় প্রকার বাজেটই বর্তমান বিশ্বে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে তা সংশ্লিষ্ট দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। উদ্বৃত্ত বাজেট ক্ষেত্রবিশেষে কাম্য হলেও সব দেশের জন্য কাম্য নাও হতে পারে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশসমূহের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ঘাটতি বাজেটই উপযোগী।
Post a Comment